ভারতের প্রতি তুরস্কের অবিশ্বাস: বন্ধুত্বের পরীক্ষা

ভারতের প্রতি তুরস্কের অবিশ্বাস: বন্ধুত্বের পরীক্ষা
সর্বশেষ আপডেট: 15-05-2025

ভারত সর্বদা প্রত্যেক বিপর্যয়ে তুরস্কের পাশে থেকে বন্ধুত্বের কর্তব্য পালন করেছে—চাই তা ভূমিকম্প হোক বা অন্য কোনও সংকট, ভারত তুরস্কের জন্য মশীহার মতো কাজ করেছে। কিন্তু যখন ভারতকে সমর্থনের প্রয়োজন হয়েছিল, বিশেষ করে ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর সময়, তখন তুরস্ক পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ভারতের বন্ধুত্বকে পিছনে ফেলে দিয়েছে এবং তার আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছে।

India-Turkey Relations ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে তুরস্ক পাকিস্তানের স্পষ্ট সমর্থন করেছে এবং তার আসল রূপ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলির মধ্যে অনেক—যেমন ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, ট্যাঙ্কার এবং নৌ জাহাজ—চীন ও তুরস্ক সরবরাহ করেছে।

তবে এটা সত্য যে ভারত প্রত্যেক সমস্যার সময় তুরস্কের সাহায্য করেছে এবং একজন সच्चा বন্ধুর মতো পাশে থেকেছে। আসুন, সেই পরিস্থিতিগুলি সম্পর্কে জেনে নিই যখন ভারত তুরস্কের সাথে সহযোগিতা করেছে এবং তার সাহায্য করেছে।

২০২৩ সালের তুরস্কের ভূমিকম্পে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ২০২৩ সালে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ এবং মধ্য তুরস্কে আঘাত হানা ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। একিনোজুর কাছে ১২ ঘন্টার ব্যবধানে আঘাত হানা দুটি ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৭.৮ এবং এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভারত ‘অপারেশন দোস্ত’ এর অধীনে অবিলম্বে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে এবং ১৫০ সদস্যের তিনটি জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (NDRF) দল, চিকিৎসকদের চিকিৎসা দল, কুকুর দল এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী তুরস্কে পাঠিয়েছিল। ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারে এই দলগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

এছাড়াও, ভারতীয় সেনা ঘটনাস্থলে ৩০টি শয্যার একটি অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপন করেছিল, যেখানে আহতদের চিকিৎসা করা হয়েছিল। ভারত তুরস্কে প্রচুর পরিমাণে ওষুধ, তাঁবু, কম্বল এবং খাবারও পাঠিয়েছিল।
তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ফিরাত সুনেল ভারতের এই সাহায্যকে ‘সच्चा বন্ধুর’ উদাহরণ বলেছেন, যা দুর্যোগের সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।

মারমারা ভূমিকম্প ১৯৯৯, যখন ভারত তুরস্কের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল

১৯৯৯ সালের আগস্টে তুরস্কের মারমারা সাগরের কাছে আঘাত হানা ভূমিকম্পে ইস্তাম্বুলে ৬.২ তীব্রতার কম্পন অনুভূত হয়, যার ফলে প্রায় ১৭,০০০ মানুষ মারা যায় এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়। এটি তুরস্কের ইতিহাসের অন্যতম ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প ছিল। এই দুর্যোগের সময় ভারত তুরস্কের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ত্রাণ কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ভারত খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছিল। পাশাপাশি, জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (NDRF) এর বিশেষজ্ঞ দলগুলিও তুরস্কে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে যোগদান করেছিল।

করোনা কালে ভারতের তুরস্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সাহায্য
২০২০ সালে যখন পুরো বিশ্ব করোনা মহামারীতে জর্জরিত ছিল, ভারত অনেক দেশের সাহায্য করার জন্য কোনও কার্পণ্য করেনি। এই সাহায্যের ধারাবাহিকতায় তুরস্কও ছিল, যাকে ভারত PPE কিট, টিকা এবং ভেন্টিলেটরের মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে সমর্থন করেছিল। এছাড়াও, ২০২০ সালের আগস্টে ভারত তুরস্ককে এই মহামারী মোকাবিলার জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তাও প্রদান করেছিল। এই সহযোগিতা মহামারীর কঠিন সময়ে তুরস্ককে ব্যাপক সাহায্য পৌঁছে দিয়েছিল এবং ভারত-তুরস্কের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছিল।

শীতলযুদ্ধের সময় ভারত তুরস্ককে প্রদান করেছিল আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা
১৯৭০-এর দশকের শীতলযুদ্ধের সময় ভারত তুরস্কের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল। সেই সময় ভারত তুরস্ককে কৃষি, শিক্ষা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আর্থিক অনুদান এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করেছিল। এই সহযোগিতা দুটি দেশের মধ্যে দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উদাহরণ ছিল, যেখানে ভারত তুরস্কের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল এবং সংকটের সময় তাকে সমর্থন দিয়েছিল।

Leave a comment