প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবার গুজরাট সফরকালে দাহোদে ভারতের দ্বিতীয় সবচেয়ে শক্তিশালী ৯০০০ হর্সপাওয়ারের রেল ইঞ্জিনকে সবুজ পতাকা দেখিয়ে উদ্বোধন করেন।
ব্যবসা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গুজরাট সফরকালে দেশের দ্বিতীয় সবচেয়ে শক্তিশালী রেল ইঞ্জিনকে সবুজ পতাকা দেখিয়ে জাতিকে উৎসর্গ করেন। দাহোদে আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ৯০০০ হর্সপাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন এই অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনের উদ্বোধন করেন, যা কেবলমাত্র ভারতীয় রেলের জন্য একটি প্রযুক্তিগত বিপ্লব নয়, বরং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অধীনে দেশের শিল্পাঞ্চলের আত্মনির্ভরতার দিকে একটি ঐতিহাসিক অর্জন।
দাহোদ অত্যাধুনিক রেল ইঞ্জিন নির্মাণের কেন্দ্রবিন্দু
৯০০০ হর্সপাওয়ারের এই লোকোমোটিভটি দাহোদে স্থাপিত একটি বিশ্বমানের উৎপাদন কারখানায় নির্মিত হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রী মোদী সোমবার জাতিকে উৎসর্গ করেন। এই কারখানার মোট ব্যয় ২১,৪০৫ কোটি টাকা এবং এটি আগামী বছরগুলিতে ভারতীয় রেলের জন্য মোট ১২০০টি বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন তৈরি করবে।
এই কারখানা কেবলমাত্র দেশীয় চাহিদা নয়, বিশ্বব্যাপী রপ্তানির জন্যও ইঞ্জিন তৈরি করবে, যার ফলে ভারত রেল ইঞ্জিন উৎপাদনে একটি বৃহৎ কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
এই ইঞ্জিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
- ক্ষমতা: ৯০০০ HP
- গতি: ১২০ কিমি/ঘণ্টা
- মালবাহী ক্ষমতা: ৫৮০০ টন পর্যন্ত মালবাহী পরিবহনের সক্ষমতা
- প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান: জার্মান প্রতিষ্ঠান সিমেন্স
- উদ্দেশ্য: ভারতে মালবাহী পরিবহন (Freight Movement) দ্রুত ও দক্ষ করে তোলা
সিমেন্স এবং ভারতীয় রেলের অংশীদারিত্ব
এই প্রকল্পের অধীনে জার্মান প্রতিষ্ঠান সিমেন্সকে ইঞ্জিনের নকশা, প্রকৌশল, উৎপাদন এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভারতে তৈরি ৯০% প্রযুক্তি সমন্বিত এই ইঞ্জিন সম্পূর্ণরূপে দেশেই তৈরি। নাসিক, ওরাঙ্গাবাদ এবং মুম্বাইস্থ সিমেন্সের ইউনিটগুলি এই প্রকল্পের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করেছে, যখন দাহোদে এর চূড়ান্ত সংযোজন, পরীক্ষা এবং কমিশনিং করা হয়েছে।
সিমেন্স লিমিটেডের সিইও সুনীল মাথুরের মতে, এই ইঞ্জিন ভারত সরকারের সেই লক্ষ্যের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যার অধীনে রেলপথের মালবাহী পরিবহনের অংশীদারিত্ব বর্তমান ২৭% থেকে বৃদ্ধি করে ৪৫% করা হবে।
প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য যা এটিকে বিশেষ করে তোলে
৯০০০ হর্সপাওয়ারের এই ইঞ্জিন ৫৮০০ টন ওজনের মালবাহী ট্রেনকে ১২০ কিমি প্রতি ঘন্টা গতিতে টেনে নিয়ে যেতে সক্ষম। এতে কেবলমাত্র মালবাহী পরিবহনের গতিতে উন্নতিই হবে না, বরং লজিস্টিক্সের খরচও কমবে, যা ভারতকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় সাহায্য করবে। এই লোকোমোটিভে লোকো পাইলটের সুবিধার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। এই ইঞ্জিনটি এয়ার কন্ডিশন্ড কেবিন, আধুনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং পরিষ্কার টয়লেট সুবিধা সমন্বিত, যা দীর্ঘ পথে চালকদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক।
ভারতের কাছে ইতিমধ্যে ১২,০০০ হর্সপাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন WAG 12 নামের একটি ইঞ্জিন রয়েছে, যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী রেল ইঞ্জিন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ৯০০০ হর্সপাওয়ারের এই নতুন ইঞ্জিন WAG 12 এর পর দ্বিতীয় সবচেয়ে শক্তিশালী ইঞ্জিন, যা ভারতীয় রেলের মালবাহী নেটওয়ার্ককে আরও শক্তিশালী করবে।