৬০,০০০ কোটি টাকার পরিকল্পনায় ভারতের আইটিআই উন্নয়ন

৬০,০০০ কোটি টাকার পরিকল্পনায় ভারতের আইটিআই উন্নয়ন
সর্বশেষ আপডেট: 08-05-2025

কেন্দ্রীয় সরকার বুধবার ভারতের ব্যবসায়িক শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার শিল্প প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলি (আইটিআই)-এর উন্নয়ন ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য পাঁচটি জাতীয় উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাকে অনুমোদন দিয়েছে।

নয়াদিল্লি: ভারত সরকার শিল্প প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলি (আইটিআই) ও দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বৃহৎ পরিকল্পনাকে অনুমোদন দিয়েছে, যার উদ্দেশ্য দেশজুড়ে ব্যবসায়িক শিক্ষাকে নতুন দিক দান করা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কেবিনেট ৬০,০০০ কোটি টাকার এই পরিকল্পনাকে অনুমোদন দিয়েছে, যার প্রধান উদ্দেশ্য হল ১,০০০টি সরকারি আইটিআই-এর উন্নয়ন এবং পাঁচটি জাতীয় দক্ষতা প্রশিক্ষণ সংস্থা (এনএসটিআই)-এর ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ তরুণকে উচ্চমানের দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান করা যাতে তারা শিল্পের ক্রমবর্ধমান জনশক্তির চাহিদা পূরণ করতে পারে।

পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও প্রধান দিক

এই পরিকল্পনা একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ, যার উদ্দেশ্য শিল্প প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলিকে আধুনিক ও শিল্প-ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত করা। এর অধীনে ১,০০০টি সরকারি আইটিআই উন্নত করা হবে এবং পাঁচটি জাতীয় দক্ষতা প্রশিক্ষণ সংস্থা (এনএসটিআই)-এর ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। সরকারের ঘোষণার মতে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচ বছরের মধ্যে ২০ লক্ষ তরুণকে দক্ষ করা হবে। এই কর্মসূচি শিল্পের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হবে যাতে প্রশিক্ষিত কর্মীর যোগান নিশ্চিত করা যায়।

কেন্দ্রীয় দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যমিতা মন্ত্রণালয়ের মতে, এই পরিকল্পনার অধীনে স্থানীয় কর্মী যোগান এবং শিল্পের চাহিদার মধ্যে একটি উন্নত সমন্বয় স্থাপন করা হবে। এতে শুধুমাত্র দক্ষতা উন্নয়নই হবে না, বরং শিল্পগুলি কর্মসংস্থানের জন্য প্রস্তুত কর্মীও পাবে। তদুপরি, এই পরিকল্পনা এমএসএমই (মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ)-এর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হবে, কারণ এটি তাদের দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীদের সাথে যুক্ত করার সুযোগ দেবে।

পরিকল্পনার আর্থিক গঠন

এই পরিকল্পনার মোট ব্যয় ৬০,০০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের অংশীদারিত্ব ৩০,০০০ কোটি টাকা, রাজ্য সরকারের অংশীদারিত্ব ২০,০০০ কোটি টাকা এবং শিল্পের অবদান ১০,০০০ কোটি টাকা। এছাড়াও, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এবং বিশ্ব ব্যাংক কেন্দ্রীয় অংশের ৫০% পর্যন্ত সহ-অর্থায়ন করবে। এই সহ-অর্থায়ন পরিকল্পনাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং এর বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।

প্রশিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির উপর জোর

এই পরিকল্পনার অধীনে, প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) সুবিধাগুলিও উন্নত করা হবে। এর জন্য পাঁচটি প্রধান এনএসটিআই (ভুবনেশ্বর, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ, কানপুর এবং লুধিয়ানা)-তে অবকাঠামো উন্নত করা হবে। এছাড়াও, ৫০,০০০ প্রশিক্ষককে সেবা-পূর্ব এবং সেবাকালীন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে, যার ফলে তাদের দক্ষতা উন্নত হবে এবং তারা প্রশিক্ষণার্থী তরুণদের আরও কার্যকরভাবে শিক্ষা দিতে পারবে।

স্থায়ী উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

এই পরিকল্পনা কেবলমাত্র একটি তাত্ক্ষণিক উন্নয়ন নয়, বরং এটি ভবিষ্যতে হওয়া ধারাবাহিক উন্নয়নের অংশ। পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হল এটি নিশ্চিত করা যে সরকারি আইটিআই শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগ হিসেবেই থেকে যাবে না, বরং এগুলো শিল্প-পরিচালিত সংস্থা হিসেবে পরিণত হবে যা বিভিন্ন শিল্পের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত হবে। এই উদ্যোগ ভারতে প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে স্থায়ী পরিবর্তন আনার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এই পরিকল্পনাকে অনুমোদন দেওয়ার পর, সরকার জোর দিয়ে বলেছে যে ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি হল এর তরুণ জনশক্তি এবং এই জনশক্তিকে দক্ষ করা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারগুলির মধ্যে একটি। পরিকল্পনার অধীনে, জাতীয় দক্ষতা প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলির মাধ্যমে তরুণদের ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে, যার ফলে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তাদের পরিচয় স্থাপন করতে পারবে।

এই পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক গৃহীত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা ভারতকে বিশ্বের দক্ষতা উন্নয়নের মানচিত্রে অগ্রণী স্থান দখল করতে সাহায্য করবে। এতে শুধুমাত্র তরুণদের কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ পাওয়া যাবে না, বরং ভারতীয় শিল্পগুলিও দক্ষ ও সক্ষম কর্মী পাবে, যা তাদের উন্নয়নে সহায়ক হবে।

Leave a comment