গুজরাতের আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করা এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI-171 বৃহস্পতিবার ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়। এই বিমান দুর্ঘটনায় রাজস্থানের বান্সওয়ারা জেলার একজন চিকিৎসক দম্পতি এবং তাদের তিনটি ছোটো সন্তান সহ একই পরিবারের পাঁচ সদস্য ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। এই ঘটনায় সমগ্র রাজস্থান সহ দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
কোনরা মারা গেছেন?
মৃত পরিবারের সদস্যদের পরিচয় হলো ডাঃ কৌণী ব্যাস, তার স্বামী ডাঃ প্রদীপ যোশী এবং তাদের তিনটি সন্তান - প্রদ্যুৎ, মিরায়া এবং নকুল। এই পরিবার দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে চিকিৎসা সেবার সাথে যুক্ত ছিল এবং কিছুদিনের জন্য ভারতে এসেছিল। ডাঃ কৌণী সম্প্রতি উদয়পুরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন যাতে তিনি তার স্বামী এবং সন্তানদের সাথে লন্ডনে স্থায়ীভাবে থাকতে পারেন।
বেদনাদায়ক দুর্ঘটনার সূচনা
সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হলো, উড্ডয়নের কয়েক মিনিট আগেই এই পরিবার বিমানবন্দরে একটি সেলফি তুলেছিল, যা এখন তাদের শেষ ছবি হিসেবে দেখা যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই শেষ সেলফি প্রকাশিত হতেই শোক ও সমবেদনার বন্যা বয়ে গেছে। এই দুর্ঘটনাটি এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং 787-8 ড্রিমলাইনার বিমানের টেকঅফের সময় ঘটে।
ফ্লাইটে মোট ২৪২ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের মধ্যে ১৯৬ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং ১ জন কানাডিয়ান নাগরিক ছিলেন। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার পিছনে প্রযুক্তিগত ত্রুটির আশঙ্কা করা হচ্ছে, কিন্তু বিস্তারিত তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজস্থানের অন্যান্য জেলা থেকেও এই বিমানে অনেকে যাত্রী ছিলেন।
উদয়পুরের এক মার্বেল ব্যবসায়ীর ছেলে এবং মেয়ে, বিকাণেরের এক যুবক এবং লন্ডনে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যাওয়া আরও দুই যুবক – এরাও এই ফ্লাইটে ছিলেন। মোটামুটি রাজস্থানের ১২ জন এই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।
পরিবারে শোকের ছায়া, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীও দুঃখ প্রকাশ করেছেন
বান্সওয়ারা, উদয়পুর এবং বিকাণেরে মৃতদের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আত্মীয়-স্বজনদের কান্নায় ভেঙে পড়েছে, এবং মানুষ বিশ্বাস করতে পারছে না যে তাদের প্রিয়জন এতো তাড়াতাড়ি এবং এতো বেদনাদায়কভাবে চলে গেল। এই দুর্ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং মৃতদের পরিবারের সাথে ফোনে কথা বলে সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে সরকার মৃত পরিবারগুলিকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবে এবং বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সাথে মিলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে আত্মীয়-স্বজনদের প্রতিটি চাহিদার প্রতি সংবেদনশীলতার সাথে কাজ করতে হবে।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ব্যস্ত দল
এই দুর্ঘটনা আবারও বিমান ভ্রমণের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধরেছে। তবে, এয়ার ইন্ডিয়া এবং ডিজিএসি-এর দল তদন্তে ব্যস্ত এবং দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। একদিকে যদিও এই দুর্ঘটনা প্রযুক্তিগত তদন্তের বিষয় হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে এটি একটি পরিবারের ভেঙে পড়া এবং নির্দোষ জীবনের হঠাৎ অবসানের গল্প।
শেষ সেলফির মাধ্যমে যেন সেই পরিবার আমাদের সকলকে বলে গেল জীবন কতটা নাজুক - কখন, কোথায় এবং কীভাবে কোন মোড় নেবে, কেউ জানে না।