ট্রাম্পের ‘গোল্ডেন ডোম’ মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: ১৭৫ বিলিয়ন ডলারের মহাকাশ যুগের নিরাপত্তা

ট্রাম্পের ‘গোল্ডেন ডোম’ মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: ১৭৫ বিলিয়ন ডলারের  মহাকাশ যুগের নিরাপত্তা
সর্বশেষ আপডেট: 21-05-2025

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘গোল্ডেন ডোম মিসাইল ডিফেন্স শিল্ড’ নির্মাণের ঘোষণা করেছেন। ১৭৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এই উচ্চ প্রযুক্তির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ২০২৯ সালের মধ্যে তৈরি হবে, যা শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন থেকে দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

আমেরিকা: বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ এবং সামরিক উত্তেজনার পরিবেশ বিরাজ করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত, ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নিয়মিত সামরিক সংঘর্ষ এই সত্যটিকে উন্মোচন করেছে যে, কোনও দেশের নিরাপত্তা এখন শুধুমাত্র প্রথাগত অস্ত্র দ্বারা নয়, বরং অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

এই ধারাবাহিকতায়, আমেরিকাও নিজের নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা করে বলেছেন যে, আমেরিকা ‘গোল্ডেন ডোম মিসাইল ডিফেন্স শিল্ড’ নির্মাণ করবে। এটি একটি আধুনিক এবং সম্পূর্ণ সজ্জিত বায়ু ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হবে, যা আমেরিকাকে সম্ভাব্য বহিরাগত আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে।

ট্রাম্প বলেছেন – এখন সময় এসেছে আমেরিকাকে নিরাপদ করার

প্রেস কনফারেন্সে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা গোল্ডেন ডোম মিসাইল ডিফেন্স শিল্ড নিয়ে একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা করছি। এটি এমন কিছু যার কল্পনা আমাদের ৪০তম প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান বহু বছর আগে করেছিলেন। সেই সময় প্রযুক্তি ছিল না, কিন্তু এখন আমাদের সেই ক্ষমতা রয়েছে।”

ট্রাম্প আরও বলেছেন যে, তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, আমেরিকাকে বিদেশি ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ থেকে রক্ষা করা হবে, এবং এখন তিনি সেই দিকে দ্রুত কাজ করছেন।

কী ‘গোল্ডেন ডোম মিসাইল ডিফেন্স শিল্ড’?

ট্রাম্প কর্তৃক ঘোষিত এই সুরক্ষা কবচ একটি বহুস্তরীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হবে, যা আমেরিকার আকাশ ও মহাকাশ সীমান্তে নজরদারি করবে। এর প্রধান উদ্দেশ্য রাশিয়া, চীন বা অন্য কোন শত্রু রাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র, হাইপারসোনিক অস্ত্র এবং AI-চালিত ড্রোন থেকে আমেরিকাকে রক্ষা করা।

এই ব্যবস্থা শত্রু কর্তৃক ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রকে মহাকাশেই শনাক্ত করবে, ট্র্যাক করবে এবং ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে আকাশেই ধ্বংস করে দেবে।

‘গোল্ডেন ডোম’ এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী কী?

১০০% সাফল্যের খুব কাছাকাছি – ট্রাম্প বলেছেন যে, এই ব্যবস্থা প্রায় ১০০% সাফল্যের সাথে কাজ করবে।

উপগ্রহ-ভিত্তিক সুরক্ষা – এতে কয়েকশ উন্নত উপগ্রহ থাকবে যা কোনও সম্ভাব্য বিপদকে দ্রুত ট্র্যাক করতে পারবে।

হাইপারসোনিক এবং AI অস্ত্রের মোকাবেলায় সক্ষম – এই প্রতিরক্ষা কবচ হাইপারসোনিক গ্লাইড ভেহিকেল, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং AI-সজ্জিত ড্রোন-এর মতো অত্যাধুনিক বিপদকেও রোধ করতে পারবে।

রিয়েল-টাইম ইন্টারসেপশন – শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশেই ধ্বংস করার ক্ষমতা।

১৭৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়

এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পে আমেরিকার সরকার ১৭৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে যাচ্ছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন যে, এই প্রতিরক্ষা কবচটি ২০২৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে সম্পূর্ণরূপে সক্রিয় করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, একই বছর ট্রাম্পের कार्यकालও শেষ হবে। তিনি আরও বলেছেন যে, এই প্রকল্পের তত্ত্বাবধান এবং পরিচালনার দায়িত্ব মার্কিন মহাকাশ বাহিনীর জেনারেল মাইকেল গুয়েটলিনকে দেওয়া হয়েছে।

কেন আমেরিকার জন্য এই প্রতিরক্ষা কবচ প্রয়োজন?

সম্প্রতি ইসরায়েল ‘আয়রন ডোম’ নামক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকর ব্যবহার করেছে, যা বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। সেই মডেলকে মাথায় রেখে আমেরিকা এখন ‘গোল্ডেন ডোম’ নিয়ে আসছে, তবে ট্রাম্প দাবি করেছেন যে এটি তার চেয়ে অনেক বেশি উন্নত হবে।

বিশ্বের পরিবর্তিত নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমেরিকাকে এখন এমন একটি ব্যবস্থার প্রয়োজন, যা তার মাতৃভূমির সুরক্ষা করতে পারে। চীন, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলির আগ্রাসী নীতির মধ্যে এই প্রকল্প আমেরিকার প্রতিরক্ষা নীতিতে একটি বড় মাইলফলক হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।

Leave a comment