মঙ্গোলিয়ায় যৌথ সামরিক অনুশীলনে ভারতের অংশগ্রহণ: চীনের উদ্বেগ বৃদ্ধি

মঙ্গোলিয়ায় যৌথ সামরিক অনুশীলনে ভারতের অংশগ্রহণ: চীনের উদ্বেগ বৃদ্ধি
সর্বশেষ আপডেট: 12-06-2025

ভারত ও মঙ্গোলিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে চলমান এই সামরিক অনুশীলন রণনৈতিক দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দল বুধবার মঙ্গোলিয়ায় পৌঁছেছে, যেখানে তারা একটি বহুজাতিক সামরিক অনুশীলনে অংশগ্রহণ করবে।

নয়াদিল্লি: ভারত ও মঙ্গোলিয়ার মধ্যে সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা কেবলমাত্র আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক মঞ্চেও রণনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের ৪০ সদস্যের একটি সামরিক দল মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটারে পৌঁছেছে, যেখানে তারা ১৪ থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত চলমান বহুপাক্ষিক সামরিক অনুশীলন ‘খান কুয়েস্ট ২০২৫’-এ অংশগ্রহণ করবে।

এই অনুশীলনে ভারতের অংশগ্রহণ চীনকে বিরক্ত করতে পারে, কারণ এটি কেবল মঙ্গোলিয়া ও আমেরিকার যৌথ উদ্যোগ নয়, বরং এটি গণতান্ত্রিক দেশগুলির ঐক্যেরও বার্তা বহন করে।

ভারতীয় দলে কুমাউঁ রেজিমেন্টের সাহসী যোদ্ধারা

ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই দলে প্রধানত কুমাউঁ রেজিমেন্টের একটি ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা রয়েছেন। পাশাপাশি, এতে নারী সেনাকর্মীরাও অংশ নিচ্ছেন, যা ভারতের সামরিক শক্তিতে লিঙ্গীয় ভারসাম্য ও সবলীকরণের উদাহরণ উপস্থাপন করে। সেনাবাহিনীর এই অংশগ্রহণ ভারতের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানে ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তা ও বৈশ্বিক কূটনৈতিক ভূমিকাকে আরও সুদৃঢ় করে।

‘খান কুয়েস্ট’ কি?

‘খান কুয়েস্ট’ মঙ্গোলিয়ায় আয়োজিত একটি বহুপাক্ষিক শান্তিরক্ষা সামরিক অনুশীলন, যা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে আয়োজিত হয়। এর আয়োজন করে মঙ্গোলিয়ার সশস্ত্র বাহিনী এবং আমেরিকার ইন্ডো-প্যাসিফিক কমান্ড (USINDOPACOM)।

এই সামরিক অনুশীলনের শুরু হয় ২০০৩ সালে আমেরিকা ও মঙ্গোলিয়ার মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক অনুশীলন হিসাবে। ২০০৬ সাল থেকে এটি বহুপাক্ষিকভাবে আয়োজিত হচ্ছে। ২০২৫ সালে এর ২২তম সংস্করণ আয়োজিত হচ্ছে।

অনুশীলনের প্রধান উদ্দেশ্য

  • জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য প্রস্তুতি
  • বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে কার্যকরী সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা
  • মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি অভিযানের জন্য সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া
  • আন্তর্জাতিক সামরিক মান অনুযায়ী কার্যপদ্ধতি গ্রহণ করা
  • এই অনুশীলন সৈন্যদের অস্বাভাবিক ও চাপের পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া, বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর সাথে সমন্বয় রাখা এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে যৌথ মিশনের জন্য প্রস্তুত থাকতে সাহায্য করে।

চীনের অস্বস্তি নিশ্চিত

ভারত ক্রমাগতভাবে এই অনুশীলনে অংশগ্রহণ করছে। ২০২৪ সালে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর রাজপুতানা রাইফেলস ইউনিট এতে অংশগ্রহণ করেছিল। এবার কুমাউঁ রেজিমেন্টের অংশগ্রহণ এটা প্রমাণ করে যে ভারত কেবলমাত্র তার সৈন্যদের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়, বরং মঙ্গোলিয়া போன்ற কৌশলগতভাবে সংবেদনশীল দেশগুলির সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সুদৃঢ় করার দিকেও সক্রিয়।

চীনকে ভারত-মঙ্গোলিয়ার ঘনিষ্ঠতা অনেকবার বিরক্ত করেছে। মঙ্গোলিয়া যদিও চীনের প্রতিবেশী ও ঐতিহাসিক অংশীদারদের অন্তর্ভুক্ত, তবে ভারত ও আমেরিকার সাথে তার ক্রমবর্ধমান সামরিক অংশগ্রহণ বেইজিংয়ের কাছে বিরক্তিকর। এই পরিস্থিতিতে ভারতের উপস্থিতি কেবলমাত্র একটি কৌশলগত বার্তা নয়, বরং চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (OBOR) এবং ইন্ডো-প্যাসিফিক অঞ্চলে হস্তক্ষেপকে ভারসাম্য বজায় রাখার একটি চিন্তাশীল কৌশলও।

Leave a comment