গঙ্গার তীরে রবিবার একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে কানপুরে, যা সমগ্র এলাকাকে শোকে ডুবিয়ে দিয়েছে। পিকনিক করতে আসা একটি পরিবারের আনন্দ সেই মুহূর্তে শোকে পরিণত হয়, যখন এক ছোট্ট মেয়ে গভীর জলে ডুবে যাওয়ার সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার দুই মামা নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
কানপুর: রবিবারের দিনটি একটি সাধারণ ছুটির দিনের মতো শুরু হয়েছিল, যখন একটি পরিবার গঙ্গার তীরে পিকনিক করতে যায়। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই আনন্দের সেই দিনটি একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পরিণত হয়, যখন নদীর ঢেউ দুই যুবক ভাইকে গ্রাস করে। উভয় যুবক তাদের ভাগ্নীকে বাঁচাতে গভীর জলে ঝাঁপ দিয়েছিল, কিন্তু নিজেদের প্রাণ হারিয়ে ফেলে। এই দুর্ঘটনা শুধুমাত্র একটি পরিবারের জন্য নয়, সমগ্র এলাকার জন্যও গভীর শোকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক মুহূর্তের অসাবধানতা, জীবনভরের দুঃখ
এই দুঃখজনক ঘটনা কানপুরের গঙ্গাঘাট এলাকার। একটি পরিবার সেখানে ঘুরতে গিয়েছিল। প্রায় তিন মাস আগে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি যাওয়া এক নারী তার ছয় বছরের মেয়েকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে এসেছিল। রবিবার পরিবারটি পিকনিক করার পরিকল্পনা করে গঙ্গার তীরে সময় কাটাতে যায়। গরমের কারণে মেয়েটি জলে খেলতে নামে। খেলতে খেলতে সে গভীর জলে চলে যায় এবং ডুবতে থাকে। চিৎকার শুনে তার দুই মামা – ২৩ বছর বয়সী রোহিত এবং ২৭ বছর বয়সী সূর্য – এক মুহূর্তও নষ্ট না করে জলে ঝাঁপ দেন।
বোনের মেয়ের জন্য দিলেন প্রাণের বলিদান
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দুই ভাই মেয়েটিকে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছিল, কিন্তু তীব্র স্রোত এবং গভীরতার কারণে নিজেদের বাঁচাতে পারেনি। স্থানীয়দের এবং ডুবুরিদের সাহায্যে মেয়ে এবং এক মামাকে উদ্ধার করা হয়, কিন্তু অন্য মামাকে উদ্ধার করা হওয়ার আগেই অনেক দেরি হয়ে যায়। তিনজনকেই অতিদ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
সামাজিক দিক থেকে এই ঘটনা আরও মর্মস্পর্শী হয়ে উঠেছে কারণ রোহিতের বিয়ে মাত্র তিন মাস আগে হয়েছিল। পরিবারে নতুন জীবনের সূচনার মাঝে এই দুর্ঘটনা এমন একটি আঘাত সৃষ্টি করেছে যা ভরাতে বহু বছর লেগে যাবে।
গ্রাম ও পরিবারে শোকের পরিবেশ
দুর্ঘটনার পর সমগ্র গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। দুই যুবকের শেষকৃত্যে শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করে। পরিবারের নারীরা অজ্ঞান হয়ে পড়েছে, আর পিতার কান্নায় ভেঙে পড়েছে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছে রোহিত ও সূর্য উভয়েই পরিশ্রমী ও মিশুকে যুবক ছিল। তারা তাদের ভাগ্নীকে নিয়ে অত্যন্ত আন্তরিক ছিল। কে জানত এক হাসিখুশি রবিবার এতটা ভয়াবহ রূপ নেবে? – এক প্রতিবেশী বলেছেন।
প্রশাসনের ভূমিকা ও সতর্কতা
ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। মৃতদেহগুলিকে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে। প্রশাসন জনগণের কাছে আবেদন জানিয়েছে যাতে গঙ্গা নদীর মতো বড় নদীতে স্নান বা খেলার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। বিশেষ করে, বাচ্চাদের একা জলে যেতে দেওয়া উচিত নয় এবং গভীর জল থেকে দূরে রাখা উচিত।