ঝাড়খণ্ডের আস্থার মহাপর্ব, বিশ্ববিখ্যাত শ্রাবণী মেলা ২০২৫, এ বছর আগের চেয়ে অনেক বেশি জাঁকজমকপূর্ণ ও আধুনিক রূপে আয়োজন করা হবে। রাজ্য সরকার তীর্থযাত্রীদের সুবিধা ও নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মেলার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বড় ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ঝাড়খণ্ড শ্রাবণী মেলা ২০২৫: মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এ বছর ১১ জুলাই থেকে শুরু হতে চলা বিশ্ববিখ্যাত রাজকীয় শ্রাবণী মেলার আরও জাঁকজমকপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী আসবেন, তাদের নিরাপত্তা, সুবিধা ও আতিথেয়তায় কোনো ঘাটতি থাকবে না।
তিনি শুক্রবার শ্রীকৃষ্ণ লোক প্রশাসন সংস্থানের অবস্থিত সভাকক্ষে একটি উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন, যাতে বাবা বৈদ্যনাথ ধাম-বাসুকীনাথ তীর্থ ক্ষেত্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মেলার প্রস্তুতির বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করেছেন এবং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সময়মতো সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে তীর্থযাত্রীদের কোনও ধরনের অসুবিধা না হয়, সেজন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পানীয় জল, আবাসন, চিকিৎসা, ট্রাফিক ব্যবস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৫০ লক্ষ তীর্থযাত্রীর আগমনের প্রত্যাশা, প্রস্তুতি জোরদার
শ্রাবণী মেলায় এ বছর ৫০ লক্ষের বেশি তীর্থযাত্রীর আগমনের সম্ভাবনা প্রকাশ করা হচ্ছে। বাবা বৈদ্যনাথ ধাম ও বাসুকীনাথ তীর্থস্থলের পবিত্রতা বিবেচনা করে, এ বার ব্যবস্থাগুলিকে বিশেষভাবে শক্তিশালী ও ডিজিটাল করা হবে যাতে প্রতিটি তীর্থযাত্রী একটি নিরাপদ, পরিষ্কার ও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা পেতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যে সমস্ত বিভাগ সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন করবে। তিনি বলেছেন শ্রাবণী মেলা ঝাড়খণ্ডের পরিচয় এবং এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গৌরব। এটিকে আরও জাঁকজমকপূর্ণ করে রাজ্যকে একটি নতুন পরিচয় দেওয়া সম্ভব।
নিরাপত্তা ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ জোর
শ্রাবণী মেলার সময় লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা অভূতপূর্বভাবে শক্তিশালী করা হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সিস্টেম আপগ্রেড করা হচ্ছে। উচ্চ সংজ্ঞার ক্যামেরা, যানবাহনের নম্বর প্লেট পাঠক এবং ড্রোন নজরদারির মাধ্যমে ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ডিজিটালভাবে পরিচালনা করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং যানবাহনের গতিসীমা কঠোরভাবে পালন করতে হবে।
তীর্থযাত্রীদের সেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার
তীর্থযাত্রীদের কোনও অসুবিধার দ্রুত সমাধানের জন্য এ বার একটি কিউআর কোড ভিত্তিক অভিযোগ ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। তীর্থযাত্রীরা কোনও সমস্যা বা অভিযোগ কিউআর কোড স্ক্যান করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সরাসরি পৌঁছে দিতে পারবেন। মুখ্যমন্ত্রী এও নিশ্চিত করার কথা বলেছেন যে অভিযোগগুলির উপর দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রী নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা বিশ্রামাগার, ভোজনালয় ও স্নানাগার তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও মেলাপথে যেসব জমি খালি আছে, সেগুলিকে রাইয়তদের সম্মতিতে অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। তিনি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন মেলা শেষ হওয়ার পর জমির পুরোপুরি পরিষ্কার করে তা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
সমন্বয় ও পর্যবেক্ষণের কঠোর ব্যবস্থা
মুখ্যমন্ত্রী মুখ্য সচিব অলকা তিওয়ারীকে সমস্ত বিভাগের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করে প্রস্তুতির নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠকে পর্যটন, কলা-সংস্কৃতি মন্ত্রী সুদীপ্য কুমার, স্থানীয় বিধায়ক, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং তীর্থ ক্ষেত্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের এই প্রচেষ্টা ঝাড়খণ্ডের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিষ্ঠা করা।
বাবা বৈদ্যনাথ ধামের মহিমা, শিবভক্তদের আস্থা এবং ঝাড়খণ্ডের আতিথেয়তাকে এ বারের শ্রাবণী মেলার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিচয় দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।