একটি সড়ক দুর্ঘটনায় অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মীর মৃত্যুর পর এমন একটি পারিবারিক বিবাদ সামনে এলো যা সমগ্র হাসপাতাল চত্বরকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করে দিল। ঘটনাটি শুধুমাত্র মৃত্যুর নয়, তার সাথে জড়িত একটি গোপন সত্যেরও—দ্বিতীয় বিবাহ, যা মৃত ব্যক্তি বহু বছর ধরে গোপন রেখেছিলেন। কিন্তু হাসপাতালে মৃতের দ্বিতীয় স্ত্রী পৌঁছানোর সাথে সাথেই, সেখানে ইতোমধ্যে উপস্থিত প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা সত্যটি জানতে পেরে বিবাদটি ক্ষণমাত্রেই মারধরে রূপান্তরিত হয়।
দুর্ঘটনায় উন্মোচিত রহস্য
জানা গেছে, ৬২ বছর বয়সী রমেশ সিংহ (নাম পরিবর্তিত) কয়েক বছর আগে রেল বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি স্কুটারে কোনও কাজে বেরিয়েছিলেন, তখনই একটি তীব্র গতির গাড়ি তাকে ধাক্কা মারে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
পরিবারকে খবর পেলেই তার প্রথম স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে হাসপাতালে পৌঁছায়। কিছুক্ষণ পরে আরেকজন নারী আসেন, যিনি রমেশ সিংহকে নিজের স্বামী বলে দাবি করে তার চিকিৎসার কাগজপত্র ও অধিকার নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন।
যখন দ্বিতীয় বিবাহের রহস্য উন্মোচিত হয়
হাসপাতাল কর্মীরা প্রথমে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন, কিন্তু যখন দুই নারীই মৃতের ‘স্ত্রী’ হওয়ার দাবি করে, তখন বিষয়টি ব্যাপক আকার ধারণ করে। রমেশ সিংহের প্রথম স্ত্রী ও তার সন্তানরা জেনে অবাক হয়ে যায় যে তাদের পিতা দ্বিতীয় বিবাহ করেছিলেন—এবং তা তাদের অজান্তেই। বিষয়টি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে মৃতের প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা হাসপাতাল চত্বরেই দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে মারধর শুরু করে। এই সময় হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যস্থতা করতে হয়। পুলিশকেও ডাকতে হয়, যার ফলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
পুলিশ শান্তি স্থাপন করে, তদন্ত শুরু করে
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমে উভয় পক্ষকে শান্ত করে। এরপর দুই স্ত্রীর কাছ থেকে আলাদাভাবে জবানবন্দি নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনার খবর প্রশাসনিক পর্যায়ে জানিয়েছে, কারণ হাসপাতাল চত্বরে ঝগড়ার ফলে রোগী ও কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের মতে, মৃতের প্রথম বিবাহ প্রায় ৩৫ বছর আগে হয়েছিল এবং তার দুই সন্তান আছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় নারীর মতে, তার বিবাহ রমেশ সিংহের সাথে ৮ বছর আগে হয়েছিল এবং সে ভাড়া বাসায় তার সাথে থাকত। তিনি বলেন, রমেশ সিংহ প্রায়ই প্রথম পরিবার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেন।
আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি
এখন ঘটনাটি আর শুধু পারিবারিক বিবাদ নয়। দুই স্ত্রীই মৃতের সম্পত্তি ও পেনশন সংক্রান্ত অধিকার নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। প্রথম স্ত্রী দ্বিতীয় বিবাহকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে সম্পত্তির উপর নিজের পূর্ণ অধিকার দাবি করেছেন, অন্যদিকে দ্বিতীয় স্ত্রী আইনি নথি দেখানোর কথা বলেছেন। পুলিশ এখন তদন্তে লেগেছে যে, রমেশ সিংহ কি তালাক ছাড়াই দ্বিতীয় বিবাহ করেছিলেন? যদি তা পাওয়া যায়, তাহলে দ্বিতীয় বিবাহ অবৈধ বলে গণ্য হবে এবং তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
এই সম্পূর্ণ ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, এই ধরনের ঘটনা চিকিৎসার পরিবেশকে প্রভাবিত করে। তারা আত্মীয়স্বজনদের কাছে আবেদন করেছেন যাতে তারা শোকের সময় সংযম বজায় রাখেন এবং ব্যক্তিগত বিবাদকে হাসপাতাল চত্বরের বাইরে রাখেন।