দেশজুড়ে সরকারি চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণের ব্যবস্থা আগে থেকেই প্রযোজ্য, কিন্তু এখন বেসরকারি খাতেও সংরক্ষণের দাবী তীব্র হয়ে উঠেছে। এই বিষয়টি খোলাখুলিভাবে তুলে ধরেছেন লোকসভা সাংসদ ও আজাদ সমাজ পার্টি (কাঁশীরাম)-এর জাতীয় সভাপতি চন্দ্রশেখর আজাদ।
আগ্রা: এখন সময় এসেছে বেসরকারি খাতেও সামাজিক ন্যায়ের সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপনের। এই বার্তা নিয়ে আজাদ সমাজ পার্টি (কাঁশীরাম)-এর জাতীয় সভাপতি ও নগীনা থেকে লোকসভা সাংসদ চন্দ্রশেখর আজাদ আগ্রায় আয়োজিত ‘অস্তিত্ব বাঁচাও-ভ্রাতৃত্ব রক্ষা করো’ প্রবুদ্ধ জনসম্মেলনে বেসরকারি খাতে সংরক্ষণের জোরালো সমর্থন করেছেন।
এই সম্মেলনে চন্দ্রশেখর আজাদ শুধুমাত্র বেসরকারি খাতে অনুসূচিত জাতি, অনুসূচিত জাতি, এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জন্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেননি, বরং সামাজিক ন্যায়, নির্বাচনী স্বচ্ছতা এবং সংবিধান রক্ষা-সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে পাঁচটি দিক নিয়ে তাঁর স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তাঁর বক্তৃতা ছিল এক গভীর সামাজিক ও রাজনৈতিক সতর্কবার্তার মতো, যা আগামী সময়ের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করতে পারে।
১. বেসরকারি খাতে সংরক্ষণ: অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের আবশ্যকতা
চন্দ্রশেখর আজাদের যুক্তি ছিল যে, দেশে দ্রুতগতিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেসরকারীকরণের ফলে বহুজন সমাজের জন্য সংরক্ষণের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। সরকারি চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যেই সংরক্ষিত আসন কমে যাচ্ছে, এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক বৈচিত্র্যের চরম অভাব রয়েছে। তিনি বলেছেন, যখন সরকারের নীতির কারণে সরকারি চাকরি কমে যাচ্ছে, তখন সামাজিক ন্যায়ের দায়িত্ব বেসরকারি খাতকেও পালন করতে হবে। নয়তো এটি উন্নয়ন নয়, সামাজিক বৈষম্যের দিকে নিয়ে যাবে।
২. জাতিভিত্তিক জনগণনার দাবী: তথ্যে ন্যায়ের চাবিকাঠি
তিনি বলেছেন যে, ওবিসির জাতিভিত্তিক জনগণনা নিয়ে কেন্দ্র সরকারের নীরবতা কোনও ষড়যন্ত্রের চেয়ে কম নয়। যদি প্রকৃত তথ্য সামনে আসে, তাহলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, বহুজন সমাজের জনসংখ্যার অনুপাতে তাদের কত কম প্রতিনিধিত্ব পাওয়া গেছে।
তাঁর মতে, সঠিক তথ্য ছাড়া সামাজিক ন্যায়ের কোনও পরিকল্পনা অসম্পূর্ণ থাকবে।
৩. সংরক্ষণ ও সংবিধান: মূল চেতনায় হুমকি
সাংসদ চন্দ্রশেখর বলেছেন যে, বর্তমান ক্ষমতা কাঠামো সংরক্ষণকে নিষ্ক্রিয় করার এবং বাবা সাহেব কর্তৃক প্রণীত সংবিধানের মূল চেতনাকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, আমাদের অধিকার সংবিধান আমাদের দিয়েছে, কোনও অনুগ্রহ নয়। যদি আমাদের দুর্বল করা হয়, তাহলে এটি সংবিধানের হত্যা হবে।
৪. ইভিএম নিয়ে সন্দেহ: গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন
ইভিএম নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলেছেন যে, এই ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে দুর্বল করছে। তিনি ভোটপত্র ব্যবস্থার পুনরায় প্রবর্তনের দাবী জানিয়ে বলেছেন যে, স্বচ্ছ নির্বাচন গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড।
৫. দলিত-পিছিয়ে পড়া-মুসলমানদের উপর অত্যাচার: সমাজকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র
আজাদ অভিযোগ করেছেন যে, বর্তমান ব্যবস্থা দলিত, আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া এবং মুসলিম সমাজকে পিছিয়ে রাখার কৌশলে কাজ করছে। তিনি দেশজুড়ে বেড়ে উঠা অত্যাচারের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন যে, এটি শুধু সংবিধানের মূল্যবোধের লঙ্ঘন নয়, বরং সামাজিক সম্প্রীতির জন্যও হুমকি।
৬. মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন জরুরি
তিনি সম্মেলনে জোর দিয়ে বলেছেন যে, মণ্ডল কমিশনের অসম্পূর্ণ সুপারিশগুলি এখন সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা উচিত। সামাজিক ন্যায়ের দিকে এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যা বর্তমান সরকারগুলি উপেক্ষা করেছে।