রিলায়ন্স-দ্যাসল্টের যৌথ উদ্যোগ: ভারতে ফ্যালকন ২০০০ জেট উৎপাদন শুরু

রিলায়ন্স-দ্যাসল্টের যৌথ উদ্যোগ: ভারতে ফ্যালকন ২০০০ জেট উৎপাদন শুরু
সর্বশেষ আপডেট: 19-06-2025

অনিল আম্বানীর নেতৃত্বাধীন রিলায়ন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রিলায়ন্স অ্যারোস্ট্রাকচার ফ্রান্সের বিখ্যাত বিমান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান দ্যাসল্ট অ্যাভিয়েশনের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদারিত্ব স্থাপন করেছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা ও অ্যারোস্পেস উৎপাদন ক্ষমতাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে রিলায়ন্স অ্যারোস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং ফ্রান্সের দ্যাসল্ট অ্যাভিয়েশনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদারিত্ব স্থাপিত হয়েছে। এই অংশীদারিত্বের ফলে ভারতে ফ্যালকন ২০০০ ব্যবসায়িক জেট উৎপাদন শুরু হবে, যা শুধুমাত্র দেশের অ্যারোনটিক্স খাতকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করবে না, বরং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগকেও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

এই ঐতিহাসিক চুক্তির মাধ্যমে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে স্থাপিত হতে যাওয়া অত্যাধুনিক অ্যাসেম্বলি লাইনের মাধ্যমে ফ্যালকন ২০০০-এর মতো উচ্চমানের ব্যবসায়িক জেট উৎপাদনের পথ সুগম হবে। এই পদক্ষেপ ভারতকে আমেরিকা, ফ্রান্স, কানাডা এবং ব্রাজিলের মতো দেশের সাথে একই সারিতে স্থান করে দিচ্ছে, যারা পরবর্তী প্রজন্মের ব্যবসায়িক জেট উৎপাদনে অগ্রণী।

নাগপুরে গড়ে উঠবে ফ্যালকন ২০০০-এর অ্যাসেম্বলি লাইন

ফ্যালকন ২০০০-এর অ্যাসেম্বলি মহারাষ্ট্রের নাগপুরের মিহান (MIHAN) এলাকায় হবে, যেখানে রিলায়ন্স এবং দ্যাসল্টের যৌথ উদ্যোগ ইতোমধ্যেই কার্যকরী। এই অত্যাধুনিক উৎপাদন ইউনিটটি ২০০৭ সালে স্থাপিত হয়েছিল এবং এখন এই নতুন ঘোষণার সাথে এর আওতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নাগপুরে স্থাপিত হতে যাওয়া এই কারখানা ফ্যালকন ২০০০-এর চূড়ান্ত অ্যাসেম্বলি লাইন (Final Assembly Line) হিসেবে কাজ করবে, যা ভারত থেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত জেট বিমান উৎপাদন এবং বিশ্বব্যাপী সরবরাহের দিকে একটি বড় ধাপ। এটি শুধুমাত্র দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করবে না, বরং দেশীয় অ্যারোস্পেস শিল্পকেও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি দেবে।

ফ্রান্সের বাইরে প্রথম এক্সেলেন্স সেন্টার হবে ভারত

এই চুক্তির আওতায় ভারতে শুধুমাত্র অ্যাসেম্বলিই নয়, ফ্যালকন সিরিজের জন্য ‘সেন্টার অফ এক্সেলেন্স’ (COE)ও স্থাপন করা হবে। এই কেন্দ্র ফ্যালকন ৬এক্স এবং ফ্যালকন ৮এক্স-এর মতো উন্নত জেটের অ্যাসেম্বলি প্রোগ্রাম পরিচালনা করবে।

এটি প্রথমবারের মতো, ফ্রান্সের বাইরে দ্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন তাদের বিমানের জন্য COE স্থাপন করছে। দ্যাসল্ট অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান ও সিইও এরিক ট্রাপিয়ার এই পদক্ষেপকে ভারতের সাথে কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রতিশ্রুতির প্রতীক বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেছেন, এই কেন্দ্র ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার ও প্রযুক্তিবিদদের বিশ্বমানের প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দেবে এবং ভারতকে বিশ্বের অ্যারোনটিক্স সরবরাহ শৃঙ্খলে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করতে সাহায্য করবে।

বিশ্বব্যাপী চাহিদা পূরণ করবে মেড ইন ইন্ডিয়া ফ্যালকন ২০০০

বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক জেটের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতে নির্মিত ফ্যালকন ২০০০ জেট দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় বাজারকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৮ সালের মধ্যে ভারতে তৈরি প্রথম ফ্যালকন ২০০০ আকাশে উড়াল দেবে।

এই প্রকল্পের আওতায় নাগপুর কারখানায় অ্যাসেম্বলি, পরীক্ষা, গুণমান নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ সহ সমস্ত প্রক্রিয়া ভারতেই সম্পন্ন হবে। এটি ভারতের উৎপাদন ক্ষমতার সম্প্রসারণ এবং আত্মনির্ভরতার দিকে একটি মাইলফলক হবে।

অনিল আম্বানীর প্রতিক্রিয়া

রিলায়ন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান অনিল আম্বানী এই চুক্তিকে রিলায়ন্সের বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণ যাত্রার একটি ঐতিহাসিক মোড় বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, দ্যাসল্ট অ্যাভিয়েশনের সাথে এই অংশীদারিত্ব ভারতকে বিশ্বের অ্যারোনটিক্স সরবরাহ শৃঙ্খলে একটি নির্ভরযোগ্য ও অগ্রণী অংশীদার হিসেবে গড়ে তোলার দিকে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ।

তার মতে, এই চুক্তি শুধুমাত্র একটি বাণিজ্যিক উদ্যোগ নয়, বরং ভারতের প্রযুক্তিগত ক্ষমতা ও প্রতিভাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি দেওয়ার সুযোগ। তিনি আরও বলেছেন, ভারতের ইঞ্জিনিয়ার, প্রযুক্তিবিদ এবং সরবরাহ শৃঙ্খল বিশেষজ্ঞরা এখন বিশ্বমানের বিমান উৎপাদনে অংশগ্রহণ করবে।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ পেয়েছে নতুন মাত্রা

এই অংশীদারিত্ব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ পরিকল্পনাকে শক্তিশালী করার দিকে একটি বড় অবদান। ভারতে ফ্যালকন ২০০০ উৎপাদন এই প্রমাণ করে যে দেশটি এখন আর শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের আমদানিকারক নয়, বরং উচ্চ প্রযুক্তির উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে।

ভারত সরকার ইতোমধ্যেই প্রতিরক্ষা ও অ্যারোস্পেস উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। এই প্রকল্পের ফলে শুধুমাত্র স্থানীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা হবে না, বরং ভারত বিদেশি কোম্পানিদের জন্য বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্বের পছন্দের স্থান হিসেবেও গড়ে উঠবে।

Leave a comment