HAL ও Safran-এর অংশীদারিত্ব: ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র নতুন দিগন্ত

HAL ও Safran-এর অংশীদারিত্ব: ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র নতুন দিগন্ত
সর্বশেষ আপডেট: 19-06-2025

HAL একটি অগ্রণী এয়ারোস্পেস এবং প্রতিরক্ষা সংস্থা যা বিমান, হেলিকপ্টার, ইঞ্জিন এবং সংশ্লিষ্ট সিস্টেমের নকশা, উন্নয়ন, উৎপাদন এবং রক্ষণাবেক্ষণে জড়িত।

HAL: কখনও বিক্রয়ের উপকূলে দাঁড়িয়ে থাকা হিন্দুস্থান এয়ারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) এখন ভারতের প্রতিরক্ষা ও এয়ারোস্পেস ক্ষমতার মেরুদণ্ড হয়ে উঠছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের খ্যাতনামা এয়ার ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক সংস্থা Safran Aircraft Engines-এর সাথে HAL একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা ভারতের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচিকে একটি নতুন দিক দিবে। এই অংশীদারিত্বের আওতায় ভারতে বিশ্বমানের LEAP ইঞ্জিনের ঘূর্ণমান অংশগুলির উৎপাদন করা হবে, যা এয়ারবাস A320neo এবং বোয়িং 737 MAX-এর মতো বেসামরিক বিমানগুলিতে ব্যবহৃত হয়। এই চুক্তিটি কেবলমাত্র একটি বাণিজ্যিক চুক্তি নয়, বরং আত্মনির্ভর ভারতের বিমান চলাচল নীতির একটি শক্তিশালী ভিত্তিও।

HAL: সংকট থেকে সবলীকরণের যাত্রা

HAL-এর গল্প একসময় সংগ্রাম ও অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ ছিল। কয়েক বছর আগেও এই সংস্থাটি আর্থিক চাপ এবং নীতিগত অস্পষ্টতার কারণে বিক্রয়ের উপকূলে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু সরকারের কৌশলগত নীতি এবং প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরতার লক্ষ্য HAL-কে নতুন শক্তি দিয়েছে। এখন এই সংস্থাটি ভারতের একটি প্রধান নবরত্ন সরকারি খাতের ইউনিট হয়ে উঠেছে।

HAL বিমান, হেলিকপ্টার, ইঞ্জিন, অ্যাভিওনিক্স এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নকশা, উন্নয়ন এবং উৎপাদনে অগ্রণী। তেজস যুদ্ধবিমান, ধ্রুব হেলিকপ্টার এবং এখন এয়ার ইঞ্জিন নির্মাণের মতো ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্তমান ফ্রান্সের সাথে অংশীদারিত্ব এই উন্নয়ন পথেরই একটি অংশ।

ফ্রান্সের Safran Aircraft Engines-এর সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্ব

ফ্রান্সের Safran Aircraft Engines সংস্থা বিশ্বে উন্নত বিমান ইঞ্জিন নির্মাণের জন্য পরিচিত। HAL এবং Safran-এর মধ্যে এই অংশীদারিত্ব কেবলমাত্র শিল্পগত নয়, বরং প্রযুক্তিগত স্থানান্তর এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই অংশীদারিত্বের আওতায় ভারতে LEAP ইঞ্জিনের ঘূর্ণমান অংশগুলির উৎপাদন করা হবে। এই অংশগুলি Inconel-এর মতো উচ্চ তাপ-সহনশীল উপাদান দিয়ে তৈরি করা হবে, যা উন্নত প্রকৌশলের একটি চমৎকার উদাহরণ। এই পদক্ষেপ ভারতকে বিশ্বমানের এয়ারোস্পেস উৎপাদন কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

এই চুক্তিটি অক্টোবর 2023 সালে উভয় সংস্থার মধ্যে স্বাক্ষরিত MoU-এর সম্প্রসারণ, এবং ফেব্রুয়ারী 2025 সালে জালিয়াতি অংশ উৎপাদনের জন্য চুক্তিও হয়েছে। এই চুক্তিগুলির পরে এখন ফ্রান্স ভারতে দীর্ঘমেয়াদী উৎপাদন ইউনিট নির্মাণের দিকে HAL-এর সাথে একসাথে এগিয়ে যাচ্ছে।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচিতে সরাসরি সুবিধা

ভারত সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতির লক্ষ্য হল দেশ প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তি খাতে আত্মনির্ভর হবে। HAL এবং Safran-এর এই নতুন চুক্তি এই নীতিকে গতি দেবে। এখন LEAP ইঞ্জিনের মতো আধুনিক প্রযুক্তির উপাদানগুলি ভারতে তৈরি করা হবে, যার ফলে বিদেশী নির্ভরতা কমবে এবং দেশের মধ্যে প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।

তদুপরি, এর ফলে ভারতের তরুণদের এয়ারোস্পেস প্রকৌশল ও উৎপাদনে নতুন সুযোগ পাবে। উৎপাদন কার্যকলাপে স্থানীয় সরবরাহ শৃঙ্খলকে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনীতিতে নতুন গতি আসবে।

শেয়ার বাজারে हलचल, বিনিয়োগকারীদের বর্ধিত আগ্রহ

সম্প্রতি BSE-তে HAL-এর শেয়ার 4900.35 টাকায় ট্রেন্ড করছে, যাতে হালকা হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে। যদিও এই হ্রাস অস্থায়ী বলে মনে করা হচ্ছে কারণ Safran-এর সাথে নতুন চুক্তির ফলে আগামী দিনগুলিতে HAL-এর শেয়ারে ইতিবাচক বৃদ্ধি দেখা যেতে পারে।

HAL-এর 52 সপ্তাহের সর্বোচ্চ স্তর 5675 টাকা (৯ জুলাই 2024), এবং সর্বনিম্ন স্তর 3045.95 টাকা (৩ মার্চ 2025) ছিল। কোম্পানির মোট বাজার মূলধন বর্তমানে 3.27 লক্ষ কোটি টাকার বেশি, যা এটিকে ভারতের সবচেয়ে মূল্যবান সরকারি কোম্পানিগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন যে ফ্রান্সের সাথে অংশীদারিত্ব এবং ভারতে উচ্চ প্রযুক্তির উৎপাদন বৃদ্ধি HAL-এর শেয়ারের দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক বৃদ্ধি ঘটাবে।

প্রতিরক্ষা নির্মাণে ভারতের ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী ভূমিকা

HAL এবং Safran-এর অংশীদারিত্ব কেবলমাত্র ব্যবসায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ভারতের বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা অবস্থানকেও শক্তিশালী করে। ভারত এখন কেবলমাত্র প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়কারী দেশ নয়, বরং উৎপাদন, রপ্তানি এবং বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কৌশলগতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

LEAP ইঞ্জিনের মতো অত্যাধুনিক উপাদানগুলি ভারতে তৈরি হওয়া এই বিষয়ের ইঙ্গিত দেয় যে দেশটি এখন উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী বছরগুলিতে ভারত কেবলমাত্র তার যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টারের ইঞ্জিন দেশে তৈরি করতে পারবে না, বরং এগুলি রপ্তানিও করতে পারবে।

Leave a comment