ভারতের অতি ধনী শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিয়েল এস্টেট কোম্পানির বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক অংশীদার হয়ে উঠেছেন।
ভারতের অতি ধনী শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি এবার রিয়েল এস্টেটের জগতে একটি নতুন অধ্যায় যোগ করতে যাচ্ছেন। এইবার তিনি অংশীদারিত্ব করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও কোটিপতি ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোম্পানি ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সাথে। এই চুক্তিকে ভারতে প্রিমিয়াম রিয়েল এস্টেটের জগতে একটি বড় ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যেখানে ট্রাম্প ব্র্যান্ড মুম্বাইয়ের একটি বিশাল প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে।
এই চুক্তিটি শুধুমাত্র দুইজন दिग्गজ ব্যবসায়ীর অংশীদারিত্বের প্রতীক নয়, এটি ভারতে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড মূল্যের বর্ধিত প্রভাব এবং আড়ম্বরপূর্ণ রিয়েল এস্টেট বাজারের পরিবর্তিত চিত্রকেও তুলে ধরে।
রিলায়েন্স এবং ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের প্রথম অংশীদারিত্ব
মুকেশ আম্বানির কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ইউনিট রিলায়েন্স 4IR রিয়াল্টি ডেভেলপমেন্ট এই প্রকল্পের জন্য ট্রাম্প ব্র্যান্ডের লাইসেন্স পেয়েছে। এই চুক্তির অধীনে, রিলায়েন্স ট্রাম্প অর্গানাইজেশনকে প্রায় ১ কোটি ডলার অর্থাৎ প্রায় ৮৬.৫ কোটি টাকা ব্র্যান্ডিং এবং ডেভেলপমেন্ট ফি দিয়েছে।
এটি প্রথমবার যখন আম্বানি এবং ট্রাম্পের ব্যবসায়িক স্বার্থ একই মঞ্চে এসেছে। রিলায়েন্স এখন ট্রাম্প ব্র্যান্ডের নামে মুম্বাইতে একটি প্রিমিয়াম প্রকল্প তৈরি করতে যাচ্ছে, যার বিস্তারিত তথ্য আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রকাশিত হতে পারে।
মুম্বাইয়ে তৈরি হতে পারে ট্রাম্প-ব্র্যান্ডেড মেগাপ্রজেক্ট
যদিও এখন পর্যন্ত এই প্রকল্প সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি, তবে সূত্রের খবর অনুযায়ী এই চুক্তিটি মুম্বাইয়ের উপনগরীয় এলাকায় ৪০০০ একর জমিতে উন্নয়নশীল একটি বিশাল রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের অংশ হতে পারে।
এই প্রকল্পে আড়ম্বরপূর্ণ আবাসিক টাওয়ার, উচ্চমানের অফিস স্পেস, খুচরা কেনাকাটা জোন এবং ফাইভ স্টার হোটেল অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ট্রাম্প ব্র্যান্ডের পরিচয় আড়ম্বর এবং ব্যতিক্রমীতার জন্য পরিচিত, তাই এই প্রকল্পটিও একই মানের প্রতীক হতে পারে।
রিলায়েন্সের এই পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট যে, তারা এখন খুচরা, টেলিযোগাযোগ এবং শক্তি খাতের পর রিয়েল এস্টেট খাতেও একটি বড় শক্তি হিসেবে উঠে আসার জন্য প্রস্তুত।
ট্রাম্পের ব্যবসায়িক মডেল: নাম বিক্রি করুন, ঝুঁকি নিন না
ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের ব্যবসায়িক মডেল অত্যন্ত স্পষ্ট এবং ঝুঁকিমুক্ত। কোম্পানি কোনও প্রকল্পে সরাসরি বিনিয়োগ করে না এবং নির্মাণের দায়িত্বও নেয় না। তারা শুধুমাত্র তাদের ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার করার অনুমতি দেয় এবং তার বিনিময়ে নির্দিষ্ট ফি এবং লাভের অংশ পায়।
ভারতে এই মডেল প্রথমবার এই চুক্তির মাধ্যমে আসছে। রিলায়েন্সের মতো বিশাল কোম্পানির সাথে ট্রাম্পের এই অংশীদারিত্ব দেখায় যে, ট্রাম্প ব্র্যান্ড এখন ভারতের মতো উদীয়মান বাজারগুলিকে তাদের নতুন কৌশলের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আবার সক্রিয় ট্রাম্প ব্র্যান্ড
২০১৬ সালে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হন, তখন তিনি স্বার্থের সংঘাত এড়াতে বিদেশী ব্যবসায়িক চুক্তি থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু এখন ২০২৪ সালে, তাঁর ছেলেদের - ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র এবং এরিক ট্রাম্পের নেতৃত্বে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন আবার বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণ করছে।
২০২৪ সালে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৮৫৫ কোটি টাকা লাইসেন্সিং এবং ডেভেলপমেন্ট ফি আয় করেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় পাঁচগুণ বেশি। এর মধ্যে ভারত ছাড়াও সৌদি আরব, ভিয়েতনাম এবং দুবাইয়ের মতো দেশের বড় কোম্পানির সাথে করা অংশীদারিত্ব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
রিলায়েন্সের সাথে এই অংশীদারিত্ব ট্রাম্পের বিশ্বব্যাপী পুনরুদ্ধার অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে।
আম্বানি এবং ট্রাম্পের পুরোনো সম্পর্ক
মুকেশ আম্বানিকে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কিং এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ প্রভাবশালী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০০৭ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নিয়েছিলেন।
এছাড়াও, তিনি সম্প্রতি কাতারের আমির কর্তৃক আয়োজিত একটি রাষ্ট্রীয় ভোজে উপস্থিত ছিলেন, যেখানে ট্রাম্পও উপস্থিত ছিলেন। এই সমস্ত ঘটনা ইঙ্গিত করে যে দুটি পরিবারের মধ্যে ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
এখন এই অংশীদারিত্ব একটি আনুষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে, যার প্রভাব শুধুমাত্র ভারত-মার্কিন ব্যবসায়িক সম্পর্কের উপরই পড়বে না, বরং ভারতের রিয়েল এস্টেট খাতেও একটি নতুন আলোচনার সূত্রপাত করবে।
ভারতে আড়ম্বরপূর্ণ রিয়েল এস্টেটে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হবে
এই চুক্তিটি ভারতীয় রিয়েল এস্টেট শিল্পের জন্য অনেক দিক থেকে ঐতিহাসিক। একদিকে এটি ভারতে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের চাহিদা এবং গ্রহণযোগ্যতা প্রতিফলিত করে, অন্যদিকে এটি ভারতীয় কোম্পানিগুলির বর্ধিত বিশ্বব্যাপী অবস্থানের প্রমাণও দেয়।
মুম্বাই, যা ইতিমধ্যেই দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত, এখন ট্রাম্প-ব্র্যান্ডেড কারণে বিশ্ব মানচিত্রে একটি আড়ম্বরপূর্ণ রিয়েল এস্টেট হাব হিসেবে উঠে আসতে পারে। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং উচ্চ-মূল্যের ব্যক্তিদের দৃষ্টি ভারতীয় বাজারের দিকে আরও বৃদ্ধি পাবে।