১০৪% ট্যারিফে চীনের এক্সপোর্টারদের মধ্যে আতঙ্ক, শিপমেন্ট কমেছে, অর্ডার বাতিল, সমুদ্রে পণ্য ফেলে দেওয়া, কারখানায় ছাঁটাই, আমেরিকার পরিবর্তে এখন ইউরোপে ঝুঁকছে।
ব্যবসায়িক যুদ্ধ: আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক যুদ্ধ (Economic War) এখন ভয়ঙ্কর মোড়ে পৌঁছেছে। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) চীন থেকে আসা পণ্যের উপর মোট ১০৪% পর্যন্ত ট্যারিফ (Tariff) আরোপ করেছেন, যার ফলে চীনের এক্সপোর্টারদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। অনেক ব্যবসায়ী ট্যারিফের ভয়ে তাদের কন্টেইনার সমুদ্রেই ফেলে পালিয়ে যাচ্ছেন।
শিপমেন্টে প্রচণ্ড হ্রাস
South China Morning Post-এর প্রতিবেদনের মতে, চীনের একটি তালিকাভুক্ত এক্সপোর্ট কোম্পানির কর্মচারী জানিয়েছেন যে, তাদের আমেরিকায় দৈনিক শিপমেন্ট ৪০-৫০ কন্টেইনার থেকে কমে মাত্র ৩-৬ কন্টেইনারে নেমে এসেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ট্যারিফের ফলে মোট আমদানি শুল্ক ১১৫% পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, যার ফলে চীনের ব্যবসায়ীদের কঠিন অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।
ট্যারিফের ভয়ে অর্ডার বাতিল হচ্ছে
কোম্পানির কর্মচারীর মতে, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনাম থেকে হওয়া সমস্ত শিপিং পরিকল্পনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারখানার অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে। কিছু ক্ষেত্রে, পাঠানো পণ্যগুলি ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একজন ক্লায়েন্ট বলেছেন যে, সমুদ্রে চলে যাওয়া কন্টেইনারটি এখন শিপিং কোম্পানির কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে কারণ ট্যারিফ আরোপের পরে তিনি কেউ কিনবে না।
প্রচুর ক্ষতির মুখে চীনা ব্যবসায়ীরা
চীনের এক্সপোর্টাররা বলছেন যে, এখন প্রতিটি কন্টেইনারে তাদের এত ক্ষতি হচ্ছে, যতটা আগে দুটি কন্টেইনারে লাভ হত। ফলে, আমেরিকার পরিবর্তে এখন ইউরোপ এবং জাপানের মতো বাজারে এক্সপোর্ট বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
আমেরিকান ক্রেতারাও হাত টেনে নিচ্ছে
চীন বিশ্বের বৃহত্তম এক্সপোর্টিং দেশ এবং গত বছর তারা আমেরিকাকে ৪৩৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যখন আমেরিকা থেকে তারা মাত্র ১৪৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য পেয়েছে। কিন্তু মহার্ঘ ট্যারিফের কারণে আমেরিকার কোম্পানিগুলিও এখন অর্ডার বাতিল করছে। কিছু প্রতিবেদনের মতে, প্রতিদিন প্রায় ৩০০ কন্টেইনারের অর্ডার বাতিল হচ্ছে।
কারখানায় ছাঁটাই এবং শিফ্ট কমানো শুরু
নতুন ট্যারিফ এবং অনিশ্চয়তার কারণে চীনা কারখানাগুলি অপারেশন কমিয়ে দিচ্ছে। অনেক কর্মচারীকে কম শিফ্টে ডাকা হচ্ছে। অন্যদিকে, যাদের আমেরিকান শাখা আছে, সেখানে ফ্রন্টলাইন কর্মীদের ছাঁটাই শুরু হয়ে গেছে। এক্সপোর্টের চাহিদা কমে যাওয়ার ফলে চাকরির উপরও সংকট গভীর হতে শুরু করেছে।
