কোভিড মহামারীর সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে কেন্দ্রীয় সরকার মূল্যবৃদ্ধি ভাতা (DA) এবং মূল্যবৃদ্ধি সহায়তা (DR) বৃদ্ধির ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
নতুন দিল্লি: কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ লক্ষ কর্মী এবং পেনশনভোগীর দৃষ্টি আবারও সরকারের সেই সিদ্ধান্তের ওপর আটকে আছে, যেখানে কোভিড কালীন সময়ে বন্ধ থাকা ১৮ মাসের মূল্যবৃদ্ধি ভাতা (DA) এবং মূল্যবৃদ্ধি সহায়তা (DR) এর বকেয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় পরিষদ (Joint Consultative Mechanism) এর স্থায়ী কমিটির ৬৩তম বৈঠকে এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উত্থাপিত হয়েছে, কিন্তু সরকার এখনও পর্যন্ত কোনও সুবিধার ঘোষণা দেয়নি।
DA-DR বকেয়ার পুরো ঘটনা কী?
কোভিড-১৯ মহামারীর সময়, ২০২০-২১ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক চাপের কথা উল্লেখ করে জুলাই ২০২০ থেকে জানুয়ারী ২০২১ পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ১৮ মাসের জন্য কেন্দ্রীয় কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের DA/DR বৃদ্ধি বন্ধ করে দিয়েছিল। এই বৃদ্ধি স্থগিত হলেও, এর বকেয়া এখনও পর্যন্ত কর্মচারীদের দেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে কর্মচারীদের দাবি এই অবধি সম্পূর্ণ বকেয়া তাদের দেওয়া হোক কারণ এটি তাদের সাংবিধানিক এবং আর্থিক অধিকারের সাথে জড়িত।
বৈঠকে কী হয়েছিল?
জাতীয় পরিষদের স্থায়ী কমিটির ৬৩তম বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী সংগঠনের প্রতিনিধিরা আবারও এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উত্থাপন করেছেন। এই বৈঠকে কর্মচারী পক্ষের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শিবগোপাল মিশ্র এবং এম. রাঘবৈয়া যে সমস্ত वरिष्ठ নেতা। তারা সরকারকে স্পষ্টভাবে জিজ্ঞাসা করেছেন যে, কর্মচারীদের বকেয়া DA-র भुगतान কখন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
কর্মচারী পক্ষের যুক্তি ছিল: DA বকেয়া শুধুমাত্র কর্মচারীদের আয়ের অংশ নয়, এটি তাদের পেনশন এবং ভবিষ্যৎ তহবিল (PF) সহ অন্যান্য সুবিধার সাথেও জড়িত।
আর্থিক সংকট এখন কেটে গেছে এবং সরকারের আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
यদি DA-এর भुगतान তাৎক্ষণিকভাবে করা সম্ভব না হয়, তাহলে কিস্তিতে এর সমাধান করা যেতে পারে।
সরকারের উত্তর: পুরোনো অবস্থানে অটল
এই বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পুরোনো অবস্থানেই অটল ছিলেন। তারা বলেছেন যে, কোভিডের সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত चुनौतीपूर्ण ছিল এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে সামাজিক ও কল্যাণমূলক কর্মসূচিতে ব্যাপক ব্যয় করতে হয়েছিল। তার প্রভাব এখনও অনুভূত হচ্ছে, তাই DA/DR বকেয়া भुगतान বর্তমানে সম্ভব নয়।
এই বক্তব্য আবারও কর্মচারীদের আশা ভঙ্গ করেছে। তবে, সরকার অবশ্যই বলেছে যে, তারা এই বিষয়টি সম্পূর্ণ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে এবং ভবিষ্যতে আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলে এ ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।
বকেয়ার অধিকারের কী আইন আছে?
সংগঠনগুলির দাবি, মূল্যবৃদ্ধি ভাতা কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ঘোষিত ৭ম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নির্ধারিত হয় এবং এটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ছিল অস্থায়ী। অতএব, কর্মচারীদের পুরো বকেয়া দেওয়া সরকারের দায়িত্ব।
তবে, সরকারের যুক্তি, তারা DA বৃদ্ধি বন্ধ করেছিল, প্রত্যাহার করেনি। অর্থাৎ এপ্রিল ২০২১ থেকে DA আবার বৃদ্ধি শুরু হয়েছে, কিন্তু পূর্বের বকেয়া দেওয়া হয়নি। এটি স্থগিত করা হয়েছিল, বাতিল করা হয়নি।
৮ম বেতন কমিশন নিয়েও আলোচনা
বৈঠকে ৮ম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন গঠনের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণভাবে উত্থাপিত হয়েছিল। কর্মচারী সংগঠনগুলি দাবি করেছে যে, সরকার দ্রুত কমিশন গঠন করুক যাতে ১ জানুয়ারী ২০২৬ থেকে নতুন সুপারিশগুলি কার্যকর করা যায়।
এ বিষয়ে সরকার জানিয়েছে যে, কমিশনের কিছু সদস্যের নিয়োগ সংক্রান্ত অধিসূচনা জারি করা হয়েছে এবং বাকি প্রক্রিয়া চলছে। কর্মচারীদের দাবি, যদি সুপারিশগুলি সময়মত কার্যকর না হয়, তাহলে তাদের বকেয়া সহ भुगतान দেওয়া উচিত।
নতুন বীমা প্রস্তাবও আলোচনায়
বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের জন্য একটি নতুন বীমা পরিকল্পনা (CGEGIS) নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ব্যয় বিভাগ জানিয়েছে যে, তারা একটি নতুন প্রস্তাব প্রণয়ন করেছে, যা শীঘ্রই কর্মচারী সংগঠনের সাথে ভাগ করা হবে। এর উদ্দেশ্য হল কর্মচারীদের মৃত্যু, দুর্ঘটনা বা কর্মজীবনের সময় বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করা।
কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ
DA বকেয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের টালবাহানা নীতির ফলে কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে। ইউনিয়নগুলির দাবি, যদি সরকার নির্বাচনের পূর্বে বা অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে আন্দোলনের বিকল্প খোলা রাখা হবে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিক্ষোভ সমাবেশ পর্যন্ত, এই বিষয়টি আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।