গ্রেগ অ্যাবেল একজন আমেরিকান ব্যবসায়ী, যিনি এখন ওয়ারেন বাফেটের কোম্পানি বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে-এর পরবর্তী সিইও হবেন। ওয়ারেন বাফেট তার অবসরের পর গ্রেগ অ্যাবেলকে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
নয়াদিল্লি: বিশ্বের অন্যতম প্রখ্যাত ও প্রভাবশালী বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট সম্প্রতি এক ঐতিহাসিক ঘোষণা করেছেন যে, তিনি বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে-এর সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করবেন এবং তার উত্তরাধিকারী হিসেবে গ্রেগ অ্যাবেলকে নির্বাচিত করেছেন। বাফেট ওমাহায় অনুষ্ঠিত কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের বার্ষিক সভার সময় এই ঘোষণা করেছেন।
এই পরিবর্তন কেবল বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে-এর ভবিষ্যৎকেই নয়, বিনিয়োগের জগতেও নতুন দিকের ইঙ্গিত দেবে। এই খবরের পর সকলের দৃষ্টি গ্রেগ অ্যাবেলের উপর নিক্ষিপ্ত, এবং সকলেই জানতে চান, তিনি কে, যিনি বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিনিয়োগ সাম্রাজ্যের নেতৃত্ব গ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন।
গ্রেগ অ্যাবেলের পরিচয়
গ্রেগ অ্যাবেল, যাঁর জন্ম কানাডার এডমন্টনে, ১৯৮৪ সালে অ্যালবার্টা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিং-এ ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। এরপর, তিনি ইউটিলিটি, রেলওয়ে এবং রিটেল শিল্পে তার দৃঢ় পরিচয় তৈরি করেছেন। তিনি বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে এনার্জির প্রাক্তন সিইও ছিলেন এবং এই কোম্পানির সাথে তার কর্মজীবন ২০ বছরের পুরোনো।
অ্যাবেলকে ওয়ারেন বাফেটের ঘনিষ্ঠ বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত। তার কার্যশৈলী এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত কোম্পানিকে কেবলমাত্র লাভ বৃদ্ধিই দেয়নি, বরং বহু ঝুঁকির মধ্যেও তাকে সফলতার উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
বার্কশায়ার হ্যাথওয়েতে গ্রেগ অ্যাবেলের অবদান
গ্রেগ অ্যাবেলের অবদান বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে-এর সাফল্যে অবিস্মরণীয়। বিশেষ করে, তিনি জাপানের পাঁচটি প্রধান কোম্পানিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন, যার ফলে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে অসাধারণ লাভ করে। তদুপরি, অ্যাবেল বার্কশায়ার এনার্জির একটি অংশ বিক্রি করে কোম্পানিকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করেছেন। তার দ্বারা গৃহীত বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত, যা প্রাথমিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছিল, পরবর্তীকালে অত্যন্ত লাভজনক প্রমাণিত হয়েছে। অ্যাবেলের নেতৃত্বে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে-এর এনার্জি বিভাগ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নতুন সুযোগ গ্রহণ করেছে।
সিইও হওয়ার যাত্রা
গ্রেগ অ্যাবেলের বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে-এর যাত্রা ২০ বছর আগে শুরু হয়েছিল। তার কার্যশৈলী তাকে বাফেটের কাছে নিয়ে এসেছে এবং ধীরে ধীরে তিনি কোম্পানির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তার প্রভাব বিস্তার করেছেন। ২০১৮ সালে তাকে কোম্পানির বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়, এবং বর্তমানে তিনি বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে-এর অ-বীমা ব্যবসায়ের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন। বাফেটের দৃষ্টিতে তার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা তাকে এই মর্যাদাপূর্ণ পদে পৌঁছে দিয়েছে।
গ্রেগ অ্যাবেল সিইও হওয়ার পর বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে-এর শেয়ারহোল্ডারদেরও বিশ্বাস রয়েছে যে, কোম্পানির ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকবে। তার শান্ত ও সুশৃঙ্খল কার্যশৈলী তাকে বিনিয়োগকারী সম্প্রদায়ের কাছে একজন নির্ভরযোগ্য ও সক্ষম নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
গ্রেগ অ্যাবেলের নেতৃত্বে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের ভবিষ্যৎ
ওয়ারেন বাফেট তার অবসরের ঘোষণা করার সময় স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন গ্রেগ অ্যাবেল বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বাফেট এটাও বলেছেন যে, তিনি এই পরিবর্তন থেকে কোম্পানির জন্য একটি নতুন দিকের প্রত্যাশা করেন। তবে, গ্রেগ অ্যাবেলের সিইও হওয়ার সিদ্ধান্ত কোম্পানির বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের অনুমোদনের উপর নির্ভর করবে, তবে বাফেটের বিশ্বাস এবং তার নেতৃত্বে অর্জিত সাফল্যের পর এটি অনুমোদন পাওয়া প্রায় নিশ্চিত।
অ্যাবেলের নেতৃত্বে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের জন্য এটি কেবল নতুন সুযোগের সময় নয়, এটি কোম্পানিকে একটি নতুন দিকেও নিয়ে যাবে। অ্যাবেলের চিন্তাধারায় যে স্থিরতা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার বোধ রয়েছে, তা বার্কশায়ার হ্যাথওয়েকে আরও বেশি সাফল্য এনে দিতে পারে। বিশেষ করে তার অভিজ্ঞতা তাকে শক্তি, খুচরা এবং রেলপথের মতো প্রধান ক্ষেত্রে সাফল্য এনে দিয়েছে, যা কোম্পানির জন্য আগামী দশকে নতুন সুযোগের ইঙ্গিত হতে পারে।
গ্রেগ অ্যাবেলের ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং জীবনশৈলী
মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, গ্রেগ অ্যাবেলের মোট সম্পত্তি প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮৩,০০০ কোটি টাকা)। তার আইওয়ার ডেস মোইনেসে একটি বিলাসবহুল বাংলোও রয়েছে। তবে, অ্যাবেলের জীবন খুবই সাধারণ, এবং তিনি কখনোই তার সম্পত্তি ও ঐশ্বর্যকে জনসমক্ষে প্রদর্শন করেননি। তার ব্যক্তিগত জীবনে এটা স্পষ্ট দেখা যায় যে, তিনি তার কাজের প্রতি অত্যন্ত নিবেদিত এবং চিন্তাশীল।
ওয়ারেন বাফেট কেন তাকে উত্তরাধিকারী হিসেবে বেছে নিলেন?
ওয়ারেন বাফেট গ্রেগ অ্যাবেলকে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারণ তিনি মনে করেন অ্যাবেলের কাছে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল গুণ রয়েছে। তার বিশাল অভিজ্ঞতা, বার্কশায়ারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা এবং বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি তাকে এই সুযোগ দিয়েছে। বাফেটের পরামর্শ অনুসারে, গ্রেগ অ্যাবেলের সিইও হওয়ার ফলে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে নতুন দিক পাবে এবং কোম্পানি তার বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও ভাল ফলাফল প্রদান করবে।
গ্রেগ অ্যাবেলের নিয়োগ কেবল বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের জন্য নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে না, এটি বিনিয়োগকারীদেরও বুঝতে সাহায্য করে যে, কোম্পানির কাছে একটি শক্তিশালী এবং সক্ষম নেতৃত্ব রয়েছে, যা ভবিষ্যতেও ক্রমাগত সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে।
