সীমান্তচল থেকে নির্বাচনী প্রচারের সূচনা করে ওয়াইসি এবার মিথিলাঞ্চল ও সারণের দিকে এগিয়ে চলেছেন। ৪ মে মোতিহারী ও গোপালগঞ্জে সভা করবেন।
বিহার নির্বাচন: ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনা তীব্র হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM)-এর প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি রাজ্যে তাঁর নির্বাচনী প্রচারের সূচনা করেছেন সীমান্তচল অঞ্চল থেকে। ওয়াইসির এই সফরকে আসন্ন নির্বাচনের জন্য দলের শঙ্খধ্বনি বলে মনে করা হচ্ছে।
সীমান্তচল থেকে সূচনা, মিথিলাঞ্চল ও সারণের দিকে ঝোঁক
ওয়াইসি শুক্রবার বিহারের কিশানগঞ্জে পৌঁছেছিলেন। শনিবার তিনি বহাদুরগঞ্জে জনসভাকে সম্বোধন করবেন। এরপর ৪ মে তিনি মোতিহারীর ঢাকা ও গোপালগঞ্জেও জনসভা করবেন। এটা স্পষ্ট যে AIMIM সীমান্তচল থেকে এগিয়ে এখন মিথিলাঞ্চল ও সারণের মতো নতুন অঞ্চলে প্রবেশের পরিকল্পনায় কাজ করছে।
২০২০ সালে চমকপ্রদ সাফল্য
২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে AIMIM বিহারে প্রথমবারের মতো ১৮টি আসনে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল, যার মধ্যে পাঁচটি আসনে দল জয়ী হয়েছিল। এই সব আসনই ছিল সীমান্তচল অঞ্চলের, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যার প্রভাব বেশি। সেই সময় AIMIM-এর সাফল্যকে মহাজোট, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD)-এর জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করা হয়েছিল।
মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে আঘাত হানার কৌশল
AIMIM-এর রাজনৈতিক ফোকাস প্রধানত মুসলিম ভোটারদের উপর। বিহারে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ১৮ শতাংশ। সীমান্তচলের কিশানগঞ্জ, অরারিয়া, পূর্ণিয়া ও কাটিহারের মতো জেলা মুসলিম-বহুল বলে বিবেচিত হয়। ২০২০ সালে ওয়াইসি এই অঞ্চলগুলিতে নির্বাচন করেছিলেন এবং প্রভাবশালী উপস্থিতি তৈরি করেছিলেন। এখন দলের লক্ষ্য হলো মিথিলাঞ্চল ও সারণের সেসব অঞ্চলে প্রবেশ করা যেখানে মুসলিম ভোট নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
পুরোনো বিধায়কদের ফিরে আসা পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে
২০২০ সালে AIMIM-এর যারা পাঁচজন বিধায়ক জয়ী হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে চারজন পরে RJD-তে যোগ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে শাহানওয়াজ আলমও রয়েছেন, যিনি অরারিয়া থেকে RJD-এর প্রার্থী হিসেবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করে পরাজিত হয়েছিলেন। শুধুমাত্র আখতারুল ইমান AIMIM-এ থেকে গেছেন। এখন দল এই অঞ্চলগুলিতে আবার দৃঢ়ভাবে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মিথিলাঞ্চল ও সারণের উপর বিশেষ নজর
AIMIM-এর নেতারা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন যে দল এবার মিথিলাঞ্চল ও সারণের কিছু নতুন আসনেও প্রার্থী দাঁড় করাতে পারে। দরভঙ্গা, মধুবনী, ছাপরা, গোপালগঞ্জ ও সিওয়ানের মতো এলাকায় AIMIM-এর কর্মকাণ্ড বেড়েছে। তবে, সারণে AIMIM-এর জন্য চ্যালেঞ্জ বেশি হবে কারণ এই অঞ্চলটি RJD ও JDU উভয়ের প্রভাবেই রয়েছে।
মহাজোটের জন্য বেড়েছে উদ্বেগ
মহাজোট, বিশেষ করে RJD, AIMIM-কে ভোট কাটার দল বলে মনে করে। RJD-র দাবি, ওয়াইসির দল মুসলিম ভোটের ভাগাভাগি করে পরোক্ষভাবে NDA-কে সাহায্য করে। তবে, ওয়াইসি বারবার বলে আসছেন যে তিনি BJP ও মহাজোট উভয়ের কাছেই প্রশ্ন করবেন। তিনি এই অভিযোগও করেন যে RJD ক্ষমতায় আসার পর মুসলিম প্রতিনিধিত্বকে কেবলমাত্র প্রতীকী রেখেছে এবং বাজেট ও বিভাগে তাদের উপেক্ষা করা হয়েছে।
NDA-র উপরও প্রভাব পড়তে পারে
একদিকে AIMIM মহাজোটের ভোট ব্যাঙ্ককে চ্যালেঞ্জ দেয়, অন্যদিকে NDA, বিশেষ করে JDU-র জন্যও এটি উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। সীমান্তচল ও মিথিলাঞ্চলে NDA-র অধিকাংশ প্রার্থী JDU থেকে থাকেন, এবং AIMIM-এর সাথে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। পাশাপাশি, ধর্মীয় বিষয় নিয়ে ওয়াইসির স্পষ্টবাদিতা BJP-র জন্যও চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে AIMIM-এর কৌশল
AIMIM বিহারে তার প্রভাব বিস্তার করে পুরোনো ঘাঁটিগুলিকে আবার শক্তিশালী করতে চায় এবং নতুন অঞ্চলে প্রবেশ করতে চায়। দল মুসলিম ভোটারদের একত্রিত করে RJD-এর একচেটিয়া অধিকার ভাঙার দিকে কাজ করছে।