উত্তর প্রদেশে তাপমাত্রার অবিরাম বৃদ্ধির সাথে সাথে বিদ্যুৎ সংকটের সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠেছে। শহরগুলিতে ট্রিপিং, বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়া এবং লো ভোল্টেজের মতো সমস্যার কারণে সাধারণ মানুষ অসহায় অবস্থায় পড়েছে।
লখনউ: উত্তর প্রদেশ বর্তমানে প্রচণ্ড গরমের কবলে আছে, কিন্তু তার চেয়েও বেশি কষ্টকর অবস্থা তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে। রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমাগত ৩১ হাজার মেগাওয়াটের উপরে রয়েছে, কিন্তু সরবরাহ এবং অবকাঠামোর অবস্থা এই চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় নির্ধারিত রোস্টার অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের চেয়েও ১ থেকে ২ ঘণ্টা কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে, যার ফলে জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গ্রামে বিদ্যুৎ নেই, কৃষক ও গৃহস্থালী ভোক্তারা হতাশ
রাজ্য সরকার গ্রামীণ এলাকায় প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি করে, কিন্তু বাস্তব সরবরাহ মাত্র ১৭.৩১ ঘণ্টা। এর ফলে সেচ কাজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শাকসবজির ফসল শুকিয়ে যাচ্ছে এবং ক্ষুদ্র শিল্প-কারখানাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কুশীনগর, গোন্ডা, ফতেহপুর এবং গাজীপুরের মতো জেলা থেকে ট্রান্সফর্মার পোড়ার কয়েক ডজন অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক জায়গায় ৪ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত ট্রান্সফর্মার বদল করা হয়নি, যার ফলে স্থানীয় লোকেরা বিক্ষোভ ও উপকেন্দ্র ঘেরাওয়ের মতো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে।
চাহিদা রেকর্ড স্তরে, ব্যবস্থা ধ্বসের পথে
জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে গরম ও উৎকট আবহাওয়ার প্রভাব বিদ্যুতের চাহিদার উপর স্পষ্ট দেখা গেছে:
- ১০ জুন – ৩১,২৪২ মেগাওয়াট
- ১১ জুন – ৩১,৪৮৬ মেগাওয়াট
- ১২ জুন – ৩১,৪১৫ মেগাওয়াট
- ১৩ জুন – ৩১,৪২০ মেগাওয়াট
এত বেশি চাহিদার মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ক্রমশঃ ব্যর্থ হচ্ছে। শহরাঞ্চলে লো ভোল্টেজ এবং ট্রিপিংয়ের অভিযোগ সাধারণ হয়ে উঠেছে, যখন গ্রামীণ এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ফলে জনজীবন স্তব্ধ হয়ে পড়ছে।
কেবল ও ট্রান্সফর্মার পোড়ার ঘটনা বেড়েছে
সমগ্র রাজ্যে ট্রান্সফর্মার পোড়া এবং কেবল গলার ঘটনা দ্রুত বেড়ে উঠছে। কর্মকর্তাদের মতে, ট্রান্সফর্মারগুলি ক্রমাগত অতিরিক্ত চাপে থাকে এবং তাদের ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। এমতাবস্থায় বৃহৎ আকারের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ফিডারভিত্তিক বিদ্যুৎ কাটা করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনস্থ প্রকৌশলীদের সামনে দ্বিগুণ সমস্যা রয়েছে।
একদিকে ট্রান্সফর্মার পোড়ার ঘটনার উপর শাস্তির হুঁশিয়ারি, অন্যদিকে স্থানীয় লোকজনের রাগ। অনেক প্রকৌশলী জানিয়েছেন যে তারা ট্রান্সফর্মার বদল করতেও দ্বিধা করছেন কারণ রিপোর্টে বেশি সংখ্যা নথিভুক্ত হলে তাদের উপর দায়িত্ব আসতে পারে।
অভিযোগ আছে, কিন্তু সমাধান নেই
- গোন্ডা: ধরমেই গ্রামে তিন দিন ধরে ট্রান্সফর্মার পড়ে আছে, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
- কুশীনগর: কাপ্তানগঞ্জ निবাসী চার দিন ধরে ট্রান্সফর্মার নষ্ট হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন, কোন সমাধান হয়নি।
- গাজীপুর: দয়ালপুর গ্রামে চার দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই, ট্রান্সফর্মার বদল করা হয়নি।
- ফতেহপুর: আমৌর গ্রামে ২০ দিন ধরে ট্রান্সফর্মার নষ্ট, কৃষকরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ইউপি পাওয়ার কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের দাবি, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রিত রোস্টার অনুযায়ী করা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। যেখানে কর্মকর্তারা মাত্র আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ কাটার কথা বলছেন, সেখানে গ্রামীণ এলাকায় স্থানীয় ত্রুটির কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে।