আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার একটি বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের উপর আরোপিত আমদানি শুল্ক (ট্যারিফ) ৯০ দিনের জন্য অস্থায়ীভাবে স্থগিত করার ঘোষণা করেছেন। এই পদক্ষেপকে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যকে স্বস্তি দেওয়ার দিকে একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ট্যারিফ পরিকল্পনা: আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে চীন বাদে বাকি অধিকাংশ দেশের জন্য আমদানি শুল্ক (ট্যারিফ) -এর উপর ৯০ দিনের অস্থায়ী ছাড় ঘোষণা করেছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতসহ ৭৫ টিরও বেশি দেশকে অতিরিক্ত ট্যারিফ থেকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে চীনের উপর ট্যারিফের হার আরও বাড়িয়ে ১২৫% করা হয়েছে।
ভারত ট্যারিফ সুবিধা পেল
ভারতের জন্য এই সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে স্বস্তিদায়ক, কারণ সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের উপর ২৬% পর্যন্ত ট্যারিফ আরোপ করেছিল, যার ফলে দেশীয় বাজারে চাপ বেড়েছিল। এখন ৯০ দিনের এই মেয়াদে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যিক সম্পর্কের মধ্যে আবার উষ্ণতা ফিরে আসতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইঙ্গিত দিয়েছে যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির উপর আলোচনা দ্রুত এগিয়ে চলেছে এবং শীঘ্রই কোনো বড় ঘোষণা সম্ভব।
চীনের প্রতি ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান
চীনকে এই ট্যারিফ সুবিধা থেকে সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প চীনের উপর অবিলম্বে ১২৫% ট্যারিফ আরোপ করার আদেশ জারি করেছেন, যা আগে ১০৪% ছিল। এই সিদ্ধান্তকে আমেরিকার ‘ন্যায্য বাণিজ্য’ নীতির অধীনে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ট্রাম্প তার বক্তব্যে বলেছেন, "চীন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়মের ক্রমাগত লঙ্ঘন করেছে। এখন সময় এসেছে যখন তাদের এর দাম চুকাতে হবে।"
আমেরিকার বাজারে তীব্র উত্থান
ট্যারিফে অস্থায়ী বিরতির ঘোষণার পর আমেরিকার শেয়ার বাজারে অসাধারণ উত্থান দেখা গেছে। ডাউ জোন্স সূচক প্রায় ২,৫০০ পয়েন্ট লাফিয়ে ৪০,০৪৮.৫৯ তে বন্ধ হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলির মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম বৃদ্ধি। নাসড্যাক-এ ১২.২% ঐতিহাসিক বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে, এবং এস অ্যান্ড পি ৫০০ প্রায় ৬% লাফিয়ে ৫,২৮১.৪৪ এ পৌঁছেছে। এই উত্থানে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসও শক্তিশালী হয়েছে।
ট্যারিফ বন্ধ করার পিছনে বড় কারণ
এই হঠাৎ সিদ্ধান্তের পেছনে আমেরিকার বন্ড বাজারে হ্রাস এবং বর্ধমান অর্থনৈতিক চাপকে প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। সিএনএনের প্রতিবেদনের মতে, আমেরিকার ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট ট্রাম্পকে সতর্ক করেছিলেন যে ট্যারিফের চাপ আমেরিকার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এরপর ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই অবস্থান আগামী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে মাথায় রেখে নেওয়া হতে পারে। তিনি চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান বজায় রেখে অন্যান্য দেশের সাথে সহযোগিতার ইঙ্গিত দিতে চাইছেন যাতে আমেরিকার বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক অবস্থান শক্তিশালী থাকে এবং দেশীয় অর্থনৈতিক চাপও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।