সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে যে, তাঁরা এমন নিয়ম তৈরি করুক যাতে নির্বিরোধে নির্বাচিত প্রার্থীদের কমপক্ষে কিছু ভোট পেতেই হবে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারা ৫৩(২) এর বৈধতা নিয়ে শুনানির সময় সর্বোচ্চ আদালত এই মন্তব্য করে।
নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়ে বলেছে যে, নির্বাচনে নির্বিরোধে নির্বাচিত প্রার্থীদের জন্য এমন নিয়ম তৈরি করতে হবে যাতে ওই প্রার্থীদের কমপক্ষে কিছু ভোট পেতে হয়। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারা ৫৩(২) এর বৈধতা নিয়ে শুনানির সময় এই সিদ্ধান্ত আসে।
আদালত আরও বলেছে যে, নির্বিরোধে নির্বাচিত প্রার্থীদের কেবলমাত্র আসনে জয়ী হওয়ার পরিবর্তে কিছু শতাংশ ভোটও পেতে হবে যাতে নিশ্চিত করা যায় যে তাদের নির্বাচন প্রকৃত জনসমর্থনের উপর ভিত্তি করে।
জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারা ৫৩(২) কি?
জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারা ৫৩(২) নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত একটি বিশেষ ধারা যা নির্বিরোধ নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত। এই ধারা বলে যে, যদি কোন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ওই আসনের সংখ্যার সমান হয়, তাহলে নির্বাচন কর্মকর্তা সকল প্রার্থীকেই বিজয়ী ঘোষণা করেন। এর অর্থ হল, যদি কোন এলাকায় একমাত্র প্রার্থী থাকে, তাহলে তাকে কোন ভোট ছাড়াই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
এই বিধান অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্ন উত্থাপন করে, বিশেষ করে যখন কোন প্রার্থী কোন প্রতিপক্ষ ছাড়াই নির্বিরোধে জিতে যায়। এমন ক্ষেত্রে জানা যায় না যে প্রার্থী কত শতাংশ জনসমর্থন পেয়েছে, যার ফলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এই কারণেই সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে এ ব্যাপারে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়
সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে বলেছে যে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সংস্কারের জন্য নিয়ম তৈরি করতে হবে, যার ফলে নির্বিরোধ নির্বাচনেও প্রার্থীদের কিছু ভোট পেতে হবে। বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি এন. কোটিশ্বর সিংহের বেঞ্চ জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারা ৫৩(২) নিয়ে শুনানির সময় এই কথা বলে।
আদালত স্পষ্ট করে বলেছে যে, নির্বিরোধ নির্বাচনে প্রার্থীদের একটি ন্যূনতম শতাংশ ভোট পেতে হবে যাতে নিশ্চিত করা যায় যে তাদের জয় প্রকৃত জনসমর্থনের উপর ভিত্তি করে। বেঞ্চ আরও বলেছে যে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এটি একটি প্রয়োজনীয় সংস্কার হতে পারে যার ফলে নির্বিরোধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং জনসাধারণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়াও, আদালত নির্বাচন কমিশনের জবাবের উপরও বিবেচনা করেছে, যেখানে কমিশন জানিয়েছে যে, সংসদীয় নির্বাচনে মাত্র নয়বার নির্বিরোধ প্রার্থী জিতেছে। তবে, আবেদনকারী 'বিধি সেন্টার ফর লিগ্যাল পলিসি'-এর আইনজীবী অরবিন্দ দাতার বলেছেন যে, বিধানসভা নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা বেশি।
কেন প্রয়োজন এই পরিবর্তন?
নির্বিরোধে নির্বাচিত প্রার্থীদের জনসমর্থন ছাড়াই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সবসময় প্রশ্ন উঠে আসে। যখন কোন প্রার্থী কোন প্রতিযোগিতা ছাড়াই নির্বিরোধে জিতে যায়, তখন এটি নির্বাচিত প্রতিনিধির জনসমর্থন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অভাবকে প্রতিফলিত করে। এমন ক্ষেত্রে স্পষ্ট হয় না যে প্রার্থীটি আসলে জনগণের পছন্দের কিনা।
এমনকি অনেক সময় স্থানীয় নির্বাচনে, যেখানে বিরোধী দল দুর্বল হয় অথবা প্রার্থীর সংখ্যা সীমিত থাকে, সেখানে প্রার্থীরা নির্বিরোধে জিতে যায়। এই অবস্থা গণতন্ত্রের মূলনীতির বিরুদ্ধে যেতে পারে, কারণ প্রকৃত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জনগণের মতামত অপরিহার্য। তাই সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশনা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনবে এবং নিশ্চিত করবে যে কোন প্রার্থী কেবলমাত্র আসনের সংখ্যার উপর নির্ভর করে নয়, বরং জনমতের ভিত্তিতে বিজয়ী ঘোষিত হবে।
কি প্রভাব পড়বে?
যদি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার নতুন নিয়ম তৈরি করে, তাহলে এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এতে নির্বাচনে নিরপেক্ষতা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের আস্থা নির্বাচনী ব্যবস্থায় দৃঢ় হবে। এছাড়াও, এতে নির্বিরোধে নির্বাচিত প্রার্থীদের নিশ্চিত করার সুযোগ পাবে যে তাদের সমর্থন প্রকৃত এবং জনগণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাদের সমর্থন করে।
এছাড়াও, এটি যেসব প্রার্থী নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তাদের পক্ষে বিরোধীকে দাঁড় করাতে পারে না তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হবে। এতে এই বার্তা যাবে যে রাজনীতিতে প্রকৃত সংগ্রাম এবং প্রতিযোগিতার প্রয়োজন এবং নির্বিরোধে জয়ের জন্যও জনসমর্থন অপরিহার্য।