স্টারলিঙ্ক: ভারতে উচ্চগতির ইন্টারনেটের নতুন যুগের সূচনা

স্টারলিঙ্ক: ভারতে উচ্চগতির ইন্টারনেটের নতুন যুগের সূচনা
সর্বশেষ আপডেট: 25-05-2025

ভারতের দূরবর্তী অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যা খুব শীঘ্রই ইতিহাসের পাতায় চলে যাবে। বিশ্বের সবচেয়ে প্রখ্যাত কোটিপতি এবং টেসলার সিইও এলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা Starlink ভারতে চালু হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পরিষেবা শুরু হলে দেশজুড়ে, বিশেষ করে গ্রামীণ এবং নেটওয়ার্কবিহীন অঞ্চলে, উচ্চ-গতির ইন্টারনেটের নতুন ঢেউ আসার আশা করা হচ্ছে। একটি প্রতিবেদনের মতে, Starlink ভারতে অনলিমিটেড ডেটা প্ল্যান মাত্র ১০ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৮৪০ টাকা মাসিক দরে চালু করতে পারে।

Starlink কি?

Starlink এলন মাস্কের কোম্পানি SpaceX-এর একটি প্রকল্প যা পৃথিবীর কক্ষপথে হাজার হাজার লো-অর্বিট স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করে। ঐতিহ্যবাহী ব্রডব্যান্ডের মতো এটি ফাইবার বা মোবাইল টাওয়ারের উপর নির্ভর করে না, বরং সরাসরি আকাশ থেকে ইন্টারনেট সিগন্যাল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়।

ভারতে কেন Starlink প্রয়োজন?

ভারতের অনেক দূরবর্তী অঞ্চলে এখনও পর্যন্ত ইন্টারনেট সুবিধা অত্যন্ত ধীর বা একেবারেই অনুপলব্ধ। নক্সাল প্রভাবিত অঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা, মরুভূমি অঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতে ডিজিটাল অ্যাক্সেস এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। Starlink এমন স্থানে বিপ্লব সাধন করতে পারে যেখানে টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলির জন্য ফাইবার বা টাওয়ার স্থাপন করা ব্যয়বহুল এবং কঠিন।

মূল্য কত হতে পারে?

 প্রতিবেদনের মতে, Starlink ভারতে তার অনলিমিটেড ডেটা প্ল্যান প্রায় ১০ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৮৪০ টাকা মাসিক দরে চালু করতে পারে। এই মূল্য অন্যান্য ব্রডব্যান্ড কোম্পানিগুলির তুলনায় বেশ প্রতিযোগিতামূলক বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, এখনও পর্যন্ত কোম্পানি এই মূল্য সম্পর্কে কোনও সরকারি ঘোষণা দেয়নি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের মতো বৃহৎ এবং সংবেদনশীল বাজারে টিকে থাকার জন্য Starlink-কে কম মূল্য এবং উন্নত পরিষেবা প্রদান করা প্রয়োজন। যাতে তারা গ্রামীণ এবং দূরবর্তী অঞ্চলেও ব্যবহারকারীদের সংযুক্ত করতে পারে এবং একটি শক্তিশালী গ্রাহক ভিত্তি তৈরি করতে পারে।

কিন্তু হার্ডওয়্যারের দাম চমকে দিতে পারে

Starlink-এর ইন্টারনেট প্ল্যান সস্তা হতে পারে, কিন্তু এটি চালানোর জন্য যা Starlink কিট প্রয়োজন, তার দাম ভারতীয় গ্রাহকদের চমকে দিতে পারে। এই কিটে ডিশ অ্যান্টেনা, রাউটার এবং আরও কিছু যন্ত্রপাতি থাকে।

গ্লোবাল মার্কেটে এর দাম প্রায় ২১,০০০ থেকে ৩২,০০০ টাকার মধ্যে হয়। ভারতে যেখানে লোকেরা ৪০০-৬০০ টাকায় ১০০ Mbps পর্যন্ত গতির ব্রডব্যান্ড প্ল্যান নেয়, সেখানে এতো মূল্যবান কিট কেনা অনেকের পক্ষে কঠিন হতে পারে।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের কি কি সুবিধা?

যেসব স্থানে কেউ পৌঁছায়নি সেখানে পৌঁছানো: ফাইবার, টাওয়ার বা কেবল বিছানো খুব ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। কিন্তু Starlink-এর মতো স্যাটেলাইট পরিষেবা এ থেকে মুক্ত এবং দেশের প্রত্যেক কোণে পৌঁছাতে পারে।

দ্রুত এবং স্থির সংযোগ: Starlink দাবি করে যে তার পরিষেবা ১০০ Mbps থেকে ২৫০ Mbps পর্যন্ত ডাউনলোড গতি দিতে পারে - তাও কোনো বিরতি ছাড়াই।

জরুরী অবস্থায়ও কাজ করবে: বন্যা, ভূমিকম্প বা অন্যান্য দুর্যোগের সময় যখন টেলিযোগাযোগ টাওয়ারগুলি কাজ করে না, তখন স্যাটেলাইট ইন্টারনেট জীবনদায়িনী হতে পারে।

Starlink-কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এমন অন্যান্য প্লেয়ার

Starlink ভারতে প্রবেশ করার আগেই এখানে অনেক খেলোয়াড় স্যাটেলাইট ইন্টারনেট বাজার নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে:

OneWeb: ভারতী গ্রুপ এবং ব্রিটেনের সরকারের সমর্থনে এই কোম্পানিও স্যাটেলাইট সংযোগ প্রদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Reliance Jio & SES: রিলায়েন্স জিও লক্সেমবার্গের SES কোম্পানির সাথে অংশীদারিত্ব করেছে যাতে ভারতে উচ্চ-গতির স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালু করা যায়।

Tata-backed Nelco এবং Globalstar: এই কোম্পানিগুলিও স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম নিয়ে ট্রায়াল মোডে রয়েছে।

সরকারের ভূমিকা কী হবে?

ভারতে কোনও স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার আগে কোম্পানিগুলিকে সরকারের কাছ থেকে অনেক ধরণের অনুমোদন নিতে হয়। এর মধ্যে লাইসেন্স, যন্ত্রপাতি আমদানি এবং স্পেকট্রামের অনুমোদন অন্তর্ভুক্ত। Starlink ইতিমধ্যেই ভারত সরকারের কাছ থেকে GMPCS লাইসেন্স পেয়েছে, কিন্তু এখনও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুমোদনের অপেক্ষা করছে।
সরকারের পক্ষ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিটি গ্রামে ইন্টারনেট পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে Starlink-এর মতো স্যাটেলাইট পরিষেবাগুলি এই কাজে ত্বরাণ্বিত করতে পারে, বিশেষ করে সেসব স্থানে যেখানে এখনও পর্যন্ত নেটওয়ার্ক পৌঁছাতে পারেনি। সরকার এবং Starlink-এর অংশীদারিত্ব দেশের ডিজিটাল উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।

Leave a comment