তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন বিরোধী দলগুলিকে পুনর্নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণের বিরোধিতায় ঐক্যবদ্ধ করছেন। চেন্নাইয়ে বৈঠক আয়োজন, যেখানে অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের নেতারা সম্ভাব্য আসন কমানো নিয়ে আলোচনা করবেন।
পুনর্নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণী বৈঠক: তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এবং ডিএমকে সভাপতি এম. কে. স্ট্যালিন পুনর্নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণের বিষয় নিয়ে বড় রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। আজ (২২শে মার্চ) চেন্নাইয়ে একটি বৃহৎ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে পুনর্নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণে কথিতভাবে প্রভাবিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য বিরোধী নেতারা অংশগ্রহণ করবেন। এই বৈঠকের উদ্দেশ্য হল পুনর্নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বিরোধী মোর্চা গঠন করা। স্ট্যালিন তামিলনাড়ুতে পরবর্তী বছর বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়ে এই বিষয়টি উত্থাপন করছেন, যার ফলে এটিকে একটি নির্বাচনী কৌশল হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির ঐক্যবদ্ধতা
স্ট্যালিনের নেতৃত্বে এই বৈঠক পুনর্নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণের বিরোধিতা নিয়ে একটি বড় রাজনৈতিক মঞ্চ হতে চলেছে। দক্ষিণ ভারতের রাজ্য—তামিলনাড়ু, কেরালা, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা—এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। এছাড়াও পাঞ্জাব, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিও এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করছে, কারণ তাদেরও আশঙ্কা রয়েছে যে পুনর্নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণের পর তাদের লোকসভা আসন কমতে পারে।
স্ট্যালিন এই বৈঠকের জন্য সাতটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যার মধ্যে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পি. বিজয়ন, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভন্ত রেড্ডি, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান এবং কর্ণাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি. কে. শিবকুমার অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ থেকেও জ্যেষ্ঠ নেতারা এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করছেন।
পুনর্নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণের ভয় এবং দক্ষিণের রাজ্যগুলির উদ্বেগ
দক্ষিণের রাজ্যগুলি উদ্বিগ্ন যে, যদি পুনর্নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ ২০২৬ সালের জনগণনার ভিত্তিতে হয়, তাহলে তাদের লোকসভা আসনের সংখ্যা কমতে পারে। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন দাবি করেন যে, এই প্রক্রিয়ার ফলে রাজ্যের আটটি লোকসভা আসন কমতে পারে। অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং রাজস্থানের মতো হিন্দিভাষী রাজ্যগুলির আসনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডিএমকে'র যুক্তি হল যে, দক্ষিণ ভারত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন করেছে, কিন্তু এখন তারই শাস্তি পাচ্ছে। এই কারণে তারা দাবি করছে যে, সংসদীয় আসন নির্ধারণ ১৯৭১ সালের জনসংখ্যার ভিত্তিতে করা উচিত এবং পরবর্তী ৩০ বছর ধরে এটিকে স্থির রাখা উচিত।
সংঘীয় কাঠামোতে আক্রমণের অভিযোগ
স্ট্যালিন পুনর্নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণকে সংঘীয় কাঠামোতে সরাসরি আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি মনে করেন, এটি কেবলমাত্র আসন পুনর্গঠনের বিষয় নয়, বরং এর ফলে রাজ্যের অধিকার, নীতি-নির্ধারণ এবং সম্পদের উপর প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, এর ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক নীতিগুলিতে রাজ্যের অংশগ্রহণ কমতে পারে। ডিএমকে সহ অনেক বিরোধী দল এটিকে রাজ্যের রাজনৈতিক অধিকারের উপর আক্রমণ বলে মনে করছে।
গৃহমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্য
পুনর্নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ নিয়ে উঠে আসা আশঙ্কার মধ্যে গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ স্ট্যালিনের দাবিগুলি খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, তামিলনাড়ুর লোকসভা আসনে কোনও কাটছাঁট হবে না। কেন্দ্র সরকারের দাবি, পুনর্নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণের প্রক্রিয়া সকল রাজ্যের স্বার্থকে মাথায় রেখে করা হবে এবং কোনও রাজ্যের সাথে অন্যায় করা হবে না।
বিরোধী ঐক্য নতুন দিক পাবে কি?
এই বৈঠককে বিরোধী দলগুলির জোটের নতুন প্রচেষ্টা হিসেবেও দেখা হচ্ছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী I.N.D.I.A. জোট বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্বল প্রমাণিত হয়েছিল। এখন স্ট্যালিন এই নতুন বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। যদি এই জোট শক্তিশালী হয়, তাহলে এটি দক্ষিণ বনাম উত্তরের রাজনীতিতে নতুন মোড় দিতে পারে।