শেখ চিল্লির গল্প: চলল - এক মজার কাণ্ড

শেখ চিল্লির গল্প: চলল - এক মজার কাণ্ড
সর্বশেষ আপডেট: 27-12-2024

চলল - শেখ চিল্লির গল্প

শেখ চিল্লির এই গল্পটি তার বোকামি এবং খামখেয়ালী আচরণের উপর ভিত্তি করে তৈরি। ঘটনাটি ছিল এরকম যে, একবার শেখ চিল্লি বাজারের মাঝে ‘চলল-চলল’ বলতে বলতে দৌড়াতে শুরু করে। সেই সময় শহরটিতে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ছিল। লোকেরা যখন শেখকে ‘চলল-চলল’ বলতে বলতে দৌড়াতে দেখল, তখন তারা ভাবল যে, সম্ভবত দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে মারামারি শুরু হয়ে গেছে। মারামারির ভয়ে সব দোকানদার তাদের দোকানপাট বন্ধ করে নিজেদের বাড়ির দিকে যেতে শুরু করল। পুরো বাজারে নীরবতা নেমে এলো। শুধু শেখই এখানে-ওখানে ‘চলল’ বলতে বলতে দৌড়াচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর এক-দুজন লোক শেখকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “ভাই! এটা তো বলো যে মারামারি কোথায় চলছে, কী হয়েছে?”

শেখ তাদের কথা কিছুই বুঝতে পারল না। সে অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল, “আপনারা কী জিজ্ঞাসা করছেন? কিসের মারামারি? আমি কোনো মারামারির ব্যাপারে কিছুই জানি না।” তখন তারা উত্তর দিল, “তুমিই তো এতক্ষণ ধরে ‘চলল-চলল’ বলে চিৎকার করছিলে। আমরা শুধু এটাই জানতে চাইছি যে, কোন এলাকায় মারামারি চলছে।” শেখ তখনও কিছুই বুঝতে পারছিল না। সে বলল, “আমি কোনো মারামারির ব্যাপারে জানি না এবং আপনারা কী বলছেন, তাও আমি বুঝতে পারছি না।” এই কথা বলে শেখ চিল্লি আবার ‘চলল-চলল’ বলতে বলতে দৌড়াতে লাগল। তখনই তাদের মধ্যে একজন তাকে ধরে জিজ্ঞাসা করল, “শুধু এইটুকু বলো যে, ‘চলল-চলল’ কেন চিৎকার করছ?”

হেসে চিল্লি বলল, “আজ অনেক দিন পর আমার একটা খোটো(নষ্ট) পয়সা চলেছে। আমি কত দিন ধরে ওটা আমার পকেটে রেখে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম, কিন্তু কোনো দোকানদার সেটা নিচ্ছিল না। আজ একটি দোকানে সেই দুয়ানিটা(দুই আনা) চলেছে। তাই এই খুশিতে দৌড়াতে দৌড়াতে আমি পুরো এলাকায় ‘চলল-চলল’ বলে চিৎকার করছি।” শেখের কথা শুনে সবার খুব রাগ হলো। তারা ভাবল, এই লোকটার কথা শুনেই সবাই অকারণে হয়রান হচ্ছে। এই ভেবে সবাই সেখান থেকে চলে গেল এবং শেখও হাসতে হাসতে সামনের দিকে এগিয়ে চলল। সেখান থেকে কিছু দূরে একটি গাছের নিচে কিছু গ্রামবাসী দরকার পড়লে কীভাবে দুর্ঘটনা থেকে মানুষকে বাঁচানো যায়, সেই নিয়ে আলোচনা করছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিল হাকিম। কথা প্রসঙ্গে হাকিম সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি দেখেন আপনাদের আশেপাশে কোনো লোক জলে ডুবে গেছে, যার পেট জলে ভর্তি এবং শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, তাহলে আপনারা কী করবেন?”

দূর থেকে শেখ চিল্লিও এই কথা শুনতে পেয়েছিল। সব শুনে সে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। এরপর হাকিম আবার সবাইকে একই প্রশ্ন করলেন, কিন্তু কারও কাছে কোনো উত্তর ছিল না। হাকিমের চারপাশে বসে থাকা কয়েকজন লোক শেখ চিল্লিকে জিজ্ঞাসা করল, “আরে, তুমি বলো তো কী করবে?” শেখ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল, “যদি কারও শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমি প্রথমে একটি কাফন কিনব এবং কবর খুঁড়তে লোক নিয়ে আসব।” এই কথা বলে শেখ হাসতে হাসতে নিজের পথে এগিয়ে গেল। শেখ চিল্লির উত্তর শুনে সেখানে উপস্থিত লোকেরা হতবাক হয়ে গেল। তারা মনে মনে ভাবল, এই লোকটা কোনো কথার গুরুত্ব না বুঝেই সবকিছু বলে দেয়। এর থেকে কিছু জিজ্ঞাসা করাই ভুল।

এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে - কোনো কিছু না ভেবেই খুশিতে চিৎকার করে চেঁচিয়ে ঘোরা উচিত নয়। এছাড়াও, অন্যদের কথা শুনে নিজের কাজকে প্রভাবিত করাও উচিত নয়। প্রত্যেকটি কথার কারণ জেনে তবেই কোনো পদক্ষেপ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

Leave a comment