উদয়পুরে মহারাণা প্রতাপ জয়ন্তীর উপলক্ষে রাজ্যপাল হরিভাউ কিসনরাও বাগড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, যেখানে তিনি ভারতের প্রাথমিক ইতিহাস নিয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন।
উদয়পুর: মহারাণা প্রতাপ জয়ন্তীর উপলক্ষে রাজস্থানের রাজ্যপাল হরিভাউ কিসনরাও বাগড়ে ইতিহাস নিয়ে একটি বড় এবং বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত জোধা-আকবর বিবাহের কথিত সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন যে, আকবর রাজকুমারী জোধাবাইয়ের সাথে বিয়ে করেননি, বরং একজন দাসীর মেয়ের সাথে তার বিয়ে হয়েছিল। এ সময় রাজ্যপাল ভারতের প্রাথমিক ইতিহাস বিদেশি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা হয়েছে এবং তাতে অনেক মিথ্যা তথ্য আছে বলেও অভিযোগ করেছেন।
জোধা-আকবর বিবাহের স্বীকৃতিকে নাকচ করা
উদয়পুরের কুম্ভ সভাগৃহে আয়োজিত মহারাণা প্রতাপ জয়ন্তী সমারোহে নিজের বক্তব্যে রাজ্যপাল বাগড়ে বলেছেন যে, জোধা-আকবর বিবাহ একটি মিথ এবং ইতিহাসের পাতা থেকে এটিকে সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন। তিনি আকবরের জীবনী নির্ভর বিখ্যাত গ্রন্থ "আকবরনামা"-র উল্লেখ করে বলেছেন যে, এতে আকবর নিজের বিয়ের কোন উল্লেখ করেননি, যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, ওই বিবাহ কথিতভাবে ঘটেনি।
তিনি আরও বলেছেন যে, রাজা ভারমল, যিনি আমেরের শাসক ছিলেন, আকবরের বিয়ে একজন দাসীর মেয়ের সাথে করেছিলেন, কোন রাজকুমারীর সাথে নয়। যদিও তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, এই তথ্য তিনি শুনেছেন এবং পড়েননি, তবুও এটি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। রাজ্যপালের এই দাবিতে ইতিহাসবিদ এবং সামাজিক ক্ষেত্রে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
মহারাণা প্রতাপকে কম গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ
রাজ্যপাল এই উপলক্ষে মহারাণা প্রতাপের বীরত্ব এবং অবদানের কথাও স্মরণ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, ইতিহাসের বইতে আকবরকে মহারাণা প্রতাপের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা ঠিক নয়। মহারাণা প্রতাপ তার জীবনে কখনও আত্মসম্মানের সাথে আপোষ করেননি এবং দেশের জন্য অসাধারণ অবদান রেখেছেন। তিনি বলেছেন যে, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির আওতায় ইতিহাস আরও সুষম ও সঠিকভাবে পড়ানো হবে যাতে আগামী প্রজন্ম তাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারে।
রাজ্যপাল বাগড়ে বলেছেন যে, যদি মহারাণা প্রতাপ এবং ছত্রপতি শিবাজি একই সময়ে থাকতেন, তাহলে ভারতের চিত্র সম্পূর্ণ বদলে যেত। উভয় যোদ্ধাই তাদের যুগের মহান দেশপ্রেমিক ছিলেন, যারা বিদেশি আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণের বলিদান দিয়েছেন। তাদের দেশপ্রেম এবং সাহস ভারতের আত্মসম্মানের প্রতীক।
সীমান্তে দেশপ্রেমের উদাহরণ
এছাড়াও, রাজ্যপাল ভারত-পাক সীমান্তের কাছে বসবাসকারী গ্রামবাসীদের দেশপ্রেমের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, এই গ্রামবাসীরা আসল ভারতের প্রতীক, যারা কঠিন পরিস্থিতিতেও দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকে। তাদের দেশপ্রেম আমাদের শিক্ষা দেয় যে, দেশের জন্য সম্মান ও সমর্পণ সর্বোচ্চ।
রাজ্যপাল হরিভাউ বাগড়ের এই বক্তব্য ইতিহাসের গভীরে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা আবারও উজ্জ্বল করে তুলেছে। জোধা-আকবর বিবাহের বিষয়টি শতাব্দী ধরে ভারতীয় ইতিহাস ও লোকসাহিত্যের অংশ। যদিও ইতিহাসে অনেক সময় সত্য ও মিথ একে অপরের সাথে জড়িয়ে যায়, তবে এ ধরণের বিতর্কিত দাবি জনতা ও ইতিহাসবিদদের মধ্যে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করে। কিছু বিশেষজ্ঞ এই দাবিকে ঐতিহাসিক প্রমাণের অভাবে বিতর্কিত মনে করছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে ইতিহাসের পর্যালোচনার অংশ বলে মনে করছেন।