২০২২ সালের আগে পর্যন্ত রাজস্থানের ছাত্র রাজনীতিতে নির্মল চৌধুরী একজন সাধারণ ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু সেই বছর তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেন। নির্দল প্রার্থী হিসেবে রেকর্ড ভোটে রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচনে জয়লাভ করে সকলকে অবাক করে দেন।
রাজস্থানের ছাত্র রাজনীতিতে এখন আবারও এক নাম আলোচনায় — নির্মল চৌধুরী। একজন ব্যক্তি যিনি কেবল রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ইতিহাস রচনা করেননি, বরং রাজ্যের যুব রাজনীতিতেও নিজের দৃঢ় পরিচয় তৈরি করেছেন। কিন্তু এখন একই নাম পুলিশি কার্যক্রম ও রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি জয়পুরে তাঁর গ্রেফতার রাজ্যের রাজনীতিকে আবারও উত্তাল করে তুলেছে। আসুন জেনে নিই কে নির্মল চৌধুরী, কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ছাত্র রাজনীতিতে তিনি কীভাবে নিজের স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ পরিচয় তৈরি করেছেন।
সাধারণ পরিবেশ থেকে অসাধারণ উত্থানের যাত্রা
নির্মল চৌধুরী রাজস্থানের নাগৌর জেলার মেড়তা উপজেলার একটি ছোট গ্রাম ধামণিয়ার বাসিন্দা। তাঁর পিতা একটি সরকারি স্কুলে শিক্ষক এবং মা গৃহিণী। তাঁদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা সাধারণ ছিল, কিন্তু তাঁর মধ্যে শৈশব থেকেই নেতৃত্বের ঝলক দেখা গিয়েছিল। তাঁর দুই বোন জয়পুরের প্রতিষ্ঠিত মহারাণী কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন। প্রথম দিকে নির্মল একজন সাধারণ ছাত্র হিসেবেই পরিচিত ছিলেন, কিন্তু ২০২২ সাল তাঁর জীবনের দিক পরিবর্তন করে দেয়।
২০২২ সালের ছাত্র সংসদের নির্বাচন নতুন পরিচয় দিয়েছে
নির্মল চৌধুরীর নাম প্রথমবার আলোচনায় আসে যখন তিনি ২০২২ সালে রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেন। এই নির্বাচনে তিনি NSUI, ABVP এবং অন্যান্য সংগঠনের প্রার্থীদের পিছনে ফেলে রেকর্ড ভোটে জয়লাভ করেন। বিশেষত, সে সময় তাঁর কোনও বড় সংগঠনের সমর্থন ছিল না। তবুও, তাঁর জনসংযোগ, ছাত্রদের মধ্যে জনপ্রিয়তা এবং প্রচারণা শৈলী তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব করে তোলে।
রাজনীতির মূলধারায় প্রবেশ
ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর নির্মল চৌধুরী ক্রমাগত ছাত্রদের স্বার্থের বিষয়গুলি তুলে ধরেন। তিনি প্রায়শই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের কণ্ঠস্বর হিসেবে দেখা দিতেন। এরপর ২০২৪ সালে তিনি NSUI-এর সদস্যপদ গ্রহণ করেন এবং তাঁকে সংগঠনের জাতীয় নির্বাচন প্রভারী নিযুক্ত করা হয়। এটি ছিল তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের একটি বড় সাফল্য, যা স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে তিনি এখন ছাত্র রাজনীতি থেকে এগিয়ে গিয়ে মূলধারার রাজনীতিতেও প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুত।
তালি থেকে বিতর্ক পর্যন্ত
নির্মল চৌধুরীর রাজনৈতিক যাত্রা বিতর্ক থেকেও মুক্ত ছিল না। ২০২৩ সালে একটি অনুষ্ঠানের সময় যখন মঞ্চে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তাঁকে সবার সামনে থাপ্পড় মারেন, তখন এই ঘটনা রাজ্যজুড়ে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। সে সময় মঞ্চে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতও উপস্থিত ছিলেন। এই ঘটনার পর রাজ্যের রাজনীতিতে ভূমিকম্প আসে এবং সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়।
এছাড়াও, অনেকবার নির্মল চৌধুরী ছাত্রদের জন্য ধর্ণা, প্রতিবাদ এবং প্রশাসনের সাথে সংঘর্ষে পিছিয়ে থাকেননি। জয়পুরের একটি কোচিং ইনস্টিটিউটে ছাত্রদের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন। একইভাবে একজন ডাক্তারের সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনায় তিনি পুলিশের সাথে তীব্র বাকবিতণ্ডা করেছিলেন, যার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
সাম্প্রতিক ঘটনা: পরীক্ষার সময় গ্রেফতার
২২শে জুন ২০২৫-এ আবারও তাঁর নাম আলোচনায় আসে যখন জয়পুর পুলিশ তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে গ্রেফতার করে। আসলে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিজি সেমিস্টারের পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন। এ সময় সাধারণ পোশাকে থাকা পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, ২০২২ সালে রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এই ঘটনার সময় রাজস্থানের দুদু থেকে বিধায়ক অভিমন্যু পুনিয়াও তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন। অভিমন্যু পুনিয়া, যিনি নিজেও পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন, নির্মলকে বাঁচানোর জন্য তাঁর সাথে পুলিশের গাড়িতে উঠে যান। তবে, পরে তিনি থানা থেকে নিজের বাসভবনে ফিরে যান।
গ্রেফতারের পর রাজনীতিতে উত্তাপ
নির্মল চৌধুরীর গ্রেফতারের পর ছাত্র সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলির তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তাঁর সমর্থকরা থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ করে এবং তাঁর অবিলম্বে মুক্তির দাবী করে। অন্যদিকে NSUI এটিকে রাজনৈতিক প্রতিশোধ বলে অভিযোগ করে এবং দাবি করে যে বিজেপি সরকার ছাত্র নেতাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, প্রশাসনের দাবি এটি আইনের সাধারণ প্রক্রিয়া এবং কেউই আইনের উপরে নয়। পুলিশ স্পষ্ট করে বলেছে যে মামলা আদালতে বিচারাধীন এবং পরবর্তী ব্যবস্থা আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুযায়ী করা হবে।
যুব রাজনীতিতে বর্ধমান প্রভাব
নির্মল চৌধুরীর জনপ্রিয়তা কেবল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর অনুসারীর সংখ্যা লক্ষ লক্ষে পৌঁছে গেছে এবং প্রতিটি ছাত্র অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি জনসমাগমের কারণ হয়ে থাকে। তাঁর সাধারণ পোশাক, আক্রমণাত্মক বক্তৃতা শৈলী এবং ছাত্রদের স্বার্থের প্রতি স্পষ্ট মনোভাব তাঁকে অন্যান্য নেতাদের থেকে আলাদা করে।
ভবিষ্যতে কি বড় নেতা হবেন?
রাজস্থানের রাজনীতিতে ছাত্র সংসদের পথ ধরে বিধানসভা এবং সংসদে পৌঁছানোর অনেক উদাহরণ রয়েছে। নির্মল চৌধুরীর বর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং ক্রমাগত সক্রিয়তাকে দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী দিনে তিনি কোনও দলের টিকিটে বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
তাঁর জনসমর্থন ভিত্তিক রাজনীতি, সামাজিক বিষয়গুলিতে স্পষ্টতা এবং যুবকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ তাঁকে ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক হতে পারে।