ভারত আবারও প্রমাণ করে দিয়েছে যে, আতঙ্কবাদের বিরুদ্ধে তার নীতি শূন্য সহনশীলতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ৬ই মে রাতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK)-এ অবস্থিত আতঙ্কবাদী ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালিয়েছে।
অপারেশন সিন্দুরে ব্যবহৃত অস্ত্র: ৬ই মে রাতে একটি সাহসী ও কৌশলগত সামরিক অভিযানে ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের ভেতরে অবস্থিত ৯টি আতঙ্কবাদী ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন সিন্দুর, যা আতঙ্কবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় নীতির প্রতিফলন ঘটায়। অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল সেসব ঘাঁটি ধ্বংস করা, যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে আতঙ্কবাদী হামলার ষড়যন্ত্র রচনা করা হচ্ছিল।
এই হামলায় ভারতীয় সেনা অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। রাফেল যুদ্ধবিমান থেকে SCALP ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে, যা দীর্ঘ দূরত্ব পর্যন্ত আঘাত করতে ও নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম। এছাড়াও ভারতের গর্ব ব্রহ্মোস, একটি সুপারসোনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যবহার করা হয়েছে। স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, অভিযানে precision weapons (অত্যন্ত নির্ভুল অস্ত্র) ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে collateral damage (অযথা ক্ষতি) সর্বনিম্ন রাখা সম্ভব হয়েছে।
রাফেল ও স্ক্যাল্পের জুটি মৃত্যুর বার্তা বয়ে এনেছে
এই অভিযানে ভারতীয় বিমানবাহিনীর রাফেল যুদ্ধবিমান ফ্রান্সে তৈরি দীর্ঘ দূরত্ব পর্যন্ত আঘাত করতে সক্ষম স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত করার ক্ষমতা ৫০০ কিলোমিটারের বেশি এবং এটি অত্যন্ত নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদ করার জন্য পরিচিত। এর ফলে আতঙ্কবাদীদের কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
সুখোই ও ব্রহ্মোসের মারাত্মক সমন্বয়
রাফেলের সাথে সাথে সুখোই Su-30 MKI যুদ্ধবিমানও এই অভিযানে অংশগ্রহণ করেছে। এই বিমানগুলিকে ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সুপারসোনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্রহ্মোস দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছিল। ব্রহ্মোসের গতি 2.8 ম্যাক, অর্থাৎ এটি আওয়াজের গতির প্রায় তিনগুণ দ্রুতগতিতে উড়ে। এর সামনে কোন লক্ষ্যের বাঁচা সম্ভব নয় বলে মনে করা হয়।
ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ভারত ও রাশিয়া যৌথভাবে উদ্ভাবন করেছে। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এটি স্থলবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী তিনটি বাহিনীই ব্যবহার করতে পারে। স্থলবাহিনী এটিকে ভূমি থেকে ভূমিতে আঘাত করার জন্য ব্যবহার করে, যখন বিমানবাহিনী এটিকে যুদ্ধবিমানে ও নৌবাহিনী এটিকে তাদের যুদ্ধজাহাজে স্থাপন করে।
মিराज-২০০০ ও স্পাইস-২০০০-এরও ব্যবহার হয়েছে
অপারেশন সিন্দুরে ভারত মিরাজ-২০০০ বিমানও নামিয়েছে, যার ব্যবহার আগেও বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকে করা হয়েছিল। এই বিমান থেকে ইসরায়েলি প্রযুক্তিতে তৈরি স্পাইস-২০০০ স্মার্ট বোমা ফেলা হয়েছে। এই বোমা GPS গাইডেন্স সিস্টেমে সজ্জিত এবং লক্ষ্যস্থলে অত্যন্ত নির্ভুল আঘাত করতে সক্ষম।
প্রথমবার হারোপ ড্রোনের ব্যবহার
এবার আরও একটি বড় ঘটনা হল, ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রথমবার ইসরায়েলি "হারোপ" লয়েটারিং মিউনিশনের ব্যবহার করেছে। এটি এক ধরণের ‘কাঁামিকাজে ড্রোন’, যা লক্ষ্যকে ট্র্যাক করার পর নিজেই তার সাথে ধাক্কা খেয়ে বিস্ফোরিত হয়। এই ড্রোন দীর্ঘ সময় ধরে আকাশে মন্ডলান করে থাকে এবং লক্ষ্য নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথেই আঘাত হানে। ভারত ২০২১ সালে ইসরায়েল থেকে এই ড্রোন কিনেছিল এবং এখন এর সফল সামরিক ব্যবহার সামনে এসেছে।
নির্ভুল আঘাত
ভারতীয় সেনা এই হামলায় কেবলমাত্র আতঙ্কবাদী ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করেছে। উচ্চ পর্যায়ের নির্ভুলতার অস্ত্রের কারণে কোনো নাগরিক বা সাধারণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এই হামলা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং আত্মরক্ষার অধিকার অনুযায়ী করা হয়েছে। অপারেশন সিন্দুরের মাধ্যমে ভারত আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সে আতঙ্কবাদীদের তাদের আস্তানায় গিয়ে মারবে এবং যেকোনো মূল্যেই দেশের নিরাপত্তার সাথে আপোষ করবে না। এই অভিযান কৌশলগত, প্রযুক্তিগত ও কূটনৈতিকভাবে ভারতের বর্ধিত ক্ষমতার ইঙ্গিত বহন করে।