ফেব্রুয়ারীতে মূল্যস্ফীতি ৭ মাসের নিম্নতম ৩.৬১% এ নেমেছে, অন্যদিকে IIP ৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। RBI সুদের হার কমাতে পারে।
হোলির দিনে দেশবাসী মূল্যস্ফীতির দিক থেকে বড় স্বস্তি পেয়েছে। ফেব্রুয়ারী ২০২৫-এ ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতির হার ৭ মাসের নিম্নতম স্তরে নেমে এসেছে। এই হ্রাস ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) কর্তৃক নির্ধারিত সীমার নিচে, যা সাধারণ জনগণের জন্য বড় স্বস্তি। একইসাথে, শিল্প উৎপাদনে উন্নতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যা অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে।
মূল্যস্ফীতির হারে ব্যাপক হ্রাস
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারী ২০২৫-এ খুচরা মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩.৬১%, যেখানে জানুয়ারীতে তা ছিল ৪.২৬%। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি ৬৫ বেসিস পয়েন্ট কমেছে। জুলাই ২০২৪-এর পর এটিই প্রথমবার যখন মূল্যস্ফীতির হার এত কম হয়েছে। এই হ্রাসের প্রধান কারণ খাদ্যপণ্যের দাম কমে যাওয়া। টমেটো, পেঁয়াজ, আলু এবং অন্যান্য সবুজ শাকসব্জির দাম কমেছে, যার ফলে খাদ্য মূল্যস্ফীতির উপর প্রভাব পড়েছে।
খাদ্যদ্রব্যের দাম কমেছে
ফেব্রুয়ারী মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে উল্লেখযোগ্য হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে। কনজিউমার ফুড প্রাইস ইন্ডেক্স (CFPI) ৩.৭৫% রেকর্ড করা হয়েছে, যা জানুয়ারীর তুলনায় ২২২ বেসিস পয়েন্ট কম। এটিকে মে ২০২৩-এর পর সর্বনিম্ন খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বলে মনে করা হচ্ছে। এর পিছনে প্রধান কারণ হল শাকসবজি, ডিম, মাংস, মাছ, ডাল এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যের দাম কমে যাওয়া। এছাড়াও, গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির মধ্যে পার্থক্য দেখা গেছে।
শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল
গ্রামীণ অঞ্চলে মূল্যস্ফীতির হার শহরাঞ্চলের তুলনায় বেশি ছিল। ফেব্রুয়ারীতে গ্রামীণ ভারতে খুচরা মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩.৭৯%, যেখানে জানুয়ারীতে তা ছিল ৪.৫৯%। অন্যদিকে, গ্রামীণ অঞ্চলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি জানুয়ারীর ৬.৩১% থেকে কমে ফেব্রুয়ারীতে ৪.০৬% হয়েছে। অন্যদিকে, শহরাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির হার ৩.৩২% রেকর্ড করা হয়েছে, যা জানুয়ারীতে ছিল ৩.৮৭%। খাদ্য মূল্যস্ফীতিও শহরাঞ্চলে জানুয়ারীর ৫.৫৩% থেকে কমে ফেব্রুয়ারীতে ৩.২০% এ নেমে এসেছে।
RBI আবার সুদের হার কমাতে পারে
মূল্যস্ফীতির এই ব্যাপক হ্রাসের পরে আশা করা হচ্ছে যে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) তার পরবর্তী আর্থিক নীতিতে সুদের হার কমাতে পারে। এর আগেও RBI রেপো রেট কমিয়েছে, যার ফলে হোম লোন এবং অন্যান্য ঋণগ্রহীতা স্বস্তি পেয়েছে। এখন যখন মূল্যস্ফীতির হার আরও কমেছে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবার সুদের হার কমাতে পারে, যার ফলে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ আরও বৃদ্ধি পাবে।
শিল্প উৎপাদনে চমৎকার উন্নতি
মূল্যস্ফীতি কমার সাথে সাথে শিল্প উৎপাদনেও শক্তিশালীকরণ ঘটেছে। জানুয়ারী ২০২৫-এ শিল্প উৎপাদন সূচক (IIP) ৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জানুয়ারী ২০২৪-এর ৪.২% এর চেয়ে বেশি। এই তথ্য দেখায় যে উৎপাদন খাতে শক্তিশালীকরণ ঘটছে এবং ভারতীয় অর্থনীতি উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার ডিসেম্বর ২০২৪-এ ৩.২% বৃদ্ধির অনুমান করেছিল, তা সংশোধন করে ৩.৫% করা হয়েছে, যা শিল্প উৎপাদনের বর্ধমান প্রবণতা দেখায়।
কিছু খাতে এখনও মূল্যস্ফীতি বিদ্যমান
যদিও, কিছু খাতে এখনও মূল্যস্ফীতি দেখা গেছে। আবাসন মূল্যস্ফীতি ফেব্রুয়ারীতে ২.৯১% ছিল, যা জানুয়ারীতে ছিল ২.৮২%। স্বাস্থ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার জানুয়ারীর ৩.৯৭% থেকে বেড়ে ফেব্রুয়ারীতে ৪.১২% হয়েছে। অন্যদিকে, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে মূল্যস্ফীতির হার ২.৮৭% রেকর্ড করা হয়েছে, যা জানুয়ারীতে ছিল ২.৭৬%। অন্যদিকে, জ্বালানি ও শক্তি মূল্যস্ফীতি ঋণাত্মক ছিল এবং জানুয়ারীর -১.৪৯% থেকে বেড়ে ফেব্রুয়ারীতে -১.৩৩% হয়েছে।