বলিউড ছেড়ে যাওয়া মমতা কুলকর্ণী প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ মেলায় কিन्नর আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর হিসেবে সেবা দিয়েছিলেন, যার পর তিনি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। পরে তিনি পদত্যাগও করেছেন।
मनोरঞ্জন: বলিউডের প্রাক্তন অভিনেত্রী মমতা কুলকর্ণী, যিনি সাংসারিক জীবন ছেড়ে আধ্যাত্মিক পথ অবলম্বন করেছেন, সম্প্রতি প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ মেলায় কিन्नর আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর হন। এই পদ পাওয়ার পর তাঁকে প্রচুর বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এই সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়ে মমতা প্রথমবার বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং তাঁর মতামত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন এটি তাঁর ২৫ বছরের কঠোর তপস্যার ফল এবং এটি ঈশ্বরের ইচ্ছা দ্বারা সম্ভব হয়েছে।
মমতা কুলকর্ণী বলেছেন - '২৫ বছরের তপস্যার ফল পেয়েছি'
মমতা কুলকর্ণী মিডিয়ার সাথে আলোচনায় জানিয়েছেন, তাঁর জন্য মহামণ্ডলেশ্বর হওয়া একটি ঐশ্বরিক আশীর্বাদ ছিল, যা প্রায় ১৪০ বছর পর প্রথম ঘটনা। তিনি বলেছেন, ঈশ্বর আমাকে আমার ২৫ বছরের তপস্যার ফল দিয়েছেন। এটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের। তিনি আরও বলেছেন, আধ্যাত্মিক সাধনায় এই পদটি তাঁর এক ধরণের পুরষ্কার, যা তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সাফল্য।
মমতা ২০০৯ সালে তাঁর চলচ্চিত্র জীবন ছেড়ে সম্পূর্ণরূপে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন এবং তাঁর নামের সাথে ‘শ্রী যমই মমতা নন্দগিরি’ যুক্ত করেন। তিনি বলেছেন, তাঁর জীবন এখন সনাতন ধর্মের প্রচার-প্রসার এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য উৎসর্গীকৃত। মহাকুম্ভে মহামণ্ডলেশ্বর হওয়ার পর যে বিতর্ক ও পদত্যাগ হয়েছিল, সে বিষয়ে মমতা সংযত ও স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই পদটি ঈশ্বরের হাতে ছিল এবং আমি এই পদের জন্য নির্বাচিত হয়েছি। বিতর্কগুলির ফলে আমার মনোযোগ আধ্যাত্মিক সাধনার দিকেই কেন্দ্রীভূত।
রাজনীতিতে আগ্রহ নেই
মমতা এটাও স্পষ্ট করেছেন যে তাঁর রাজনীতিতে আসার কোনো ইচ্ছা নেই। কল্কি ধামের সাথে যুক্ত মমতা জানিয়েছেন, তাঁকে কল্কি বিষ্ণুর দশম অবতার হিসেবে মনে করা হয় এবং তিনি একটি শিলান্যাস অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্যও লাভ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমার উদ্দেশ্য কেবল সনাতন ধর্মের প্রচার-প্রসার, রাজনীতিতে আমার কোনো পরিকল্পনা নেই।
মমতা কুলকর্ণী মুসলমানদের প্রতি তাঁর স্নেহ ও সম্মানের কথাও খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, সাধনাকালে তিনি দুবাইতে প্রচুর শান্তি পেয়েছেন এবং সেখানকার মানুষ তাঁকে অনেক ভালোবাসে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, "আমি মুসলমানদের ভালোবাসি, কিন্তু আতঙ্কবাদের সাথে কখনোই নয়। আতঙ্কবাদী কোনো ধর্ম, জাতি বা আত্মীয়ের সাথে জড়িত নয়। তারা শুধুমাত্র আতঙ্কবাদী।"
মমতার এই বক্তব্য সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তির দিকে একটি ইতিবাচক বার্তা। তিনি আরও জানিয়েছেন, আজও অনেকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করেন, কিন্তু তাঁর বিশ্বাস যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব অসীম ও সর্বব্যাপী।
সন্ন্যাসের পথে ২৫ বছরের সাধনা
মমতা কুলকর্ণীর আধ্যাত্মিক যাত্রা ২৫ বছরের পুরোনো। বলিউড ছেড়ে তিনি যোগ, ধ্যান এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সাধনাকে গ্রহণ করেছেন। তাঁর মতে, এই সময়টি তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও পরিপূরক অভিজ্ঞতা। এই তপস্যার ফলস্বরূপ তিনি মহামণ্ডলেশ্বর হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
মহামণ্ডলেশ্বর হওয়ার পর যে বিতর্ক ও সমালোচনা মমতার উপর এসেছে, তিনি তা তাঁর সাধনার পথে আসা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিটি আধ্যাত্মিক যাত্রায় সংগ্রাম থাকে। আমি এটাকে ঈশ্বরের পরীক্ষা বলে মনে করেছি এবং ধৈর্য্যের সাথে আমার কাজ চালিয়ে গেছি।
মমতা কুলকর্ণীর এই আধ্যাত্মিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর জীবনের নতুন পরিচয়কে তুলে ধরে। একসময় বলিউডের জৌলুসে ঝিলিক ছড়ানো অভিনেত্রী আজ আধ্যাত্মিক পথে চলে এক ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছেন। তাঁর এই যাত্রা দেখায় যে জীবনে পরিবর্তন সম্ভব এবং সত্য তপস্যার ফল সবসময় পাওয়া যায়।