২০২১ সালের নন্দীগ্রাম নির্বাচনের ফল নিয়ে যখন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন থেকেই এই বিষয়টি বারবার চর্চার কেন্দ্রে। এ দিন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সেই পরাজয়ের কাহিনী ফের টেনে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, "আমাকে হারানো হয়েছিল, কিন্তু আমি ভবানীপুর থেকে জিতে এসেছি।" সঙ্গে ছিল একরাশ আত্মবিশ্বাস এবং বিজেপির উদ্দেশে হুঁশিয়ারি।
'আগে জিতে আসুন'—বিজেপি বিধায়ককে কড়া ভাষায় আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রীর
বক্তব্য চলাকালীন হঠাৎ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বিধানসভায়। বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে মমতা বলেন, “বেশি কথা বলবেন না। লজ্জা থাকা উচিত। আপনি কী করে ঘোরেন, আমি জানি! আগে ভোটে জিতে আসুন।” একঝলকে যেন ফিরে এলো ভোট-রাজনীতির পুরনো তিক্ততা।
‘জয়ের রেকর্ড আমার ঝুলিতেই’—ভবানীপুর স্মরণে মমতা
নন্দীগ্রামে হারলেও ভবানীপুরে জয় মুখ্যমন্ত্রীর বহুদিনের ঘাঁটি। ২০১১ ও ২০১৬-র পর ২০২1-এর উপনির্বাচনেও জিতেছিলেন সেখান থেকেই। সেই ইতিহাস তুলে ধরে তিনি যেন প্রমাণ করতে চাইলেন—একটি হারে তাঁর রাজনৈতিক জায়গা বদলায় না।
১০০ দিনের কাজের বকেয়া নিয়ে কেন্দ্রকে তুলোধোনা করলেন মমতা
তৃণমূল বিধায়ক তরুণ মাইতির প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে ফের সরব মুখ্যমন্ত্রী। জানালেন, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে এখনও রাজ্যের ৬,৯১৯ কোটি টাকা বকেয়া। তার মধ্যে মজুরি বাবদ ৩,৭৩১ কোটি এবং আনুষঙ্গিক খাতে ৩,১৮৭ কোটি। তাঁর দাবি, "এটা নৈতিক অন্যায়, বাংলার টাকা অন্য রাজ্যকে দিয়েছে কেন্দ্র।
১৬০টি কেন্দ্রীয় দল এসেছিল, তবুও টাকা মেলেনি!—ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী |
মমতা অভিযোগ করেন, কেন্দ্র বারবার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দল পাঠালেও প্রকল্পের অর্থ ছাড়েনি। “এটা দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য, জানি না,” বলেই তীব্র কটাক্ষ করলেন। তাঁর সাফ কথা—রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে বাংলা রাজ্যের প্রতি ন্যায্যতা দেওয়া উচিত।
রাজনৈতিক যুদ্ধের ময়দানেই মমতা যেন ফিরে পেলেন নিজের ঘরানা
আবারও বুঝিয়ে দিলেন, হার মানার মানুষ নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের পরাজয় আজও তাঁর মনে দাগ কাটে ঠিকই, কিন্তু সেই ক্ষতকে ঢেকে দিয়েছেন ভবানীপুরের জয়ের প্রলেপে। বিধানসভার ভাষণে ফের একবার জ্বলে উঠল তাঁর ‘ফাইটার’ সত্তা।