লখনউতে অমিত শাহের ‘মিত্র’ বক্তব্য: উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে তোলপাড়

লখনউতে অমিত শাহের ‘মিত্র’ বক্তব্য: উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে তোলপাড়
সর্বশেষ আপডেট: 16-06-2025

লখনউতে অমিত শাহের ‘মিত্র’ বক্তব্যে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে তোলপাড়। অখিলেশ যাদবের কটাক্ষ, বিজেপির পাল্টা জবাব ও ঐক্যের বার্তা।

UP News: লখনউতে সম্প্রতি একটি সরকারি অনুষ্ঠানে রোমাঞ্চকর রাজনৈতিক দৃশ্য দেখা গেছে। এই মঞ্চে কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য একসাথে বসেছিলেন। অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ৬০ হাজারেরও বেশি নবনিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের নিয়োগপত্র বিতরণ করা। কিন্তু পুরো আয়োজনে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে অমিত শাহের কেশব প্রসাদ মৌর্যকে ‘মিত্র’ বলে সম্বোধন করা।

অমিত শাহ মঞ্চের মাঝখানে বসে ছিলেন, তার ডানদিকে সিএম যোগী এবং বামদিকে ডেপুটি সিএম মৌর্য। পুরো অনুষ্ঠানের সময় অমিত শাহ উভয় নেতার সাথে কথা বলেছেন। কিন্তু যখন তিনি তার বক্তৃতায় মৌর্যকে ‘মিত্র’ বলেছেন, তখন রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় শুরু হয়েছে।

‘মিত্র’ সম্বোধনে দৃষ্টি আকর্ষণ

অমিত শাহ প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে কেশব মৌর্যকে ‘মিত্র’ বলে সম্বোধন করেছেন। বিশেষতঃ, সিএম যোগী সেই সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিও ক্লিপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে শুধুমাত্র ‘মিত্র’ অংশটি হাইলাইট করা হয়েছে।

যদিও, সম্পূর্ণ বক্তৃতা যদি মনোযোগ সহকারে শোনা হয়, তাহলে স্পষ্ট হবে যে অমিত শাহ প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে ‘সফল ও জনপ্রিয়’ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন এবং তারপর মৌর্যকে ‘মিত্র’ বলেছেন। এই পুরো ঘটনাটিকে বিজেপির কৌশলগত দিক থেকে দেখা হচ্ছে, যেখানে অমিত শাহ একসাথে যোগী এবং মৌর্য উভয়কেই রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন।

বিজেপির ওবিসি রাজনীতিতে নতুন দিক

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অমিত শাহের এই বক্তব্য শুধুমাত্র কথা নয়, এর পিছনে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তা লুকিয়ে আছে। ওবিসি শ্রেণীর রাজনীতিতে বিজেপির দখল আবার শক্তিশালী করার চেষ্টা হিসেবে এই বক্তব্যকে দেখা হচ্ছে।

কেশব মৌর্য, যিনি দলের বড় ওবিসি মুখদের একজন, বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর কিছুটা রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এইবার অমিত শাহের জনসমক্ষে তাকে ‘মিত্র’ বলায় এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে বিজেপি আবার ওবিসি কার্ডকে জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সিএম যোগীর জন্যও স্পষ্ট বার্তা

অমিত শাহ তার বক্তৃতায় সিএম যোগীরও প্রশংসা করেছেন। তাকে ‘সফল ও জনপ্রিয়’ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। এতে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে দলের নেতৃত্ব বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী চেহারা নিয়ে কোনও পরিবর্তনের মেজাজে নেই।

এটিকে বিজেপির স্পষ্ট কৌশল বলে মনে করা যেতে পারে, যেখানে একদিকে ওবিসি শ্রেণীকে সামলে নেওয়া হচ্ছে এবং অন্যদিকে যোগী আদিত্যনাথের জনপ্রিয়তাও বজায় রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ, বিজেপি এই বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে যে উত্তরপ্রদেশে দল সম্পূর্ণরূপে ঐক্যবদ্ধ।

অখিলেশ যাদবের কটাক্ষ ও বিজেপির প্রতিক্রিয়া

এই বক্তব্যের পরে সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদবও পিছনে থাকেননি। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “ইনাদের ইশতেহারে নেই তাদের ছবি… অন্যকে বলে দিয়েছে ‘মিত্র’!” তার এই বক্তব্যকে বিজেপির অভ্যন্তরে চলমান সম্ভাব্য টানাপড়েনের ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে, বিজেপির পক্ষ থেকেও দ্রুত জবাব এসেছে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রী নরেন্দ্র কশ্যপ বলেছেন যে, যেখানে সপা ও কংগ্রেসের মঞ্চে পারস্পরিক ঝগড়া ও গালিগালাজ হয়, সেখানে বিজেপিতে পারস্পরিক সম্মান ও সৌহার্দ্য রয়েছে। তিনি বলেছেন, অমিত শাহ সিএম যোগীর প্রশংসা করেছেন এবং মৌর্যকে ‘মিত্র’ বলেছেন, এটি রাজনীতিতে ইতিবাচক সংকেত।

বিরোধীদের বক্তব্যের প্রতিরোধ

বিজেপির এই পদক্ষেপকে সপা কর্তৃক তৈরি ‘ঠাকুর বনাম পিডিএ’ বক্তব্যের প্রতিরোধ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। অখিলেশ যাদব ক্রমাগত যোগী সরকারকে একটি নির্দিষ্ট জাতির সরকার বলে অভিহিত করেছেন। এই অবস্থায় অমিত শাহের এই বক্তব্য বিজেপির অন্তর্ভুক্তিমূলক চেহারা সামনে আনার চেষ্টা বলে মনে করা যেতে পারে।

মৌর্যের পুনরাগমনের প্রস্তুতি?

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দল মৌর্যকে আবার সক্রিয় রাজনৈতিক ভূমিকায় আনতে চায়। ওবিসি সমাজে তার শক্তিশালী অবস্থান আবার কাজে লাগানোর প্রস্তুতি চলছে। একই সাথে এটিও ইঙ্গিত যে মৌর্যকে দুর্বল মনে করা তাড়াহুড়ো হবে।

তবে, ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যেভাবে মৌর্যের এলাকায় বিজেপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তা তার রাজনৈতিক অবস্থানের উপর প্রভাব ফেলেছিল। এখন বিজেপি হয়তো তাকে আবার কেন্দ্রীয় ভূমিকা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

Leave a comment