কুরনূলের নববধূ ও তার মায়ের তেজেশ্বর হত্যা: অবৈধ সম্পর্কের জের

কুরনূলের নববধূ ও তার মায়ের তেজেশ্বর হত্যা: অবৈধ সম্পর্কের জের
সর্বশেষ আপডেট: 2 দিন আগে

কুরনূলের নববধূঐশ্বর্য এবং তার মা মিলে তেজেশ্বরকে হত্যা করেছে। দুজনেরই একই ব্যাংক কর্মীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। সুপারি দিয়ে নির্দোষ যুবককে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

Kurnool Murder Case: তেলঙ্গানার কুরনূল থেকে এমন একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা সামনে এসেছে যা সমগ্র রাজ্যকে অবাক করে দিয়েছে। এই ঘটনায় এক নববধূ, তার মা এবং এক ব্যাংক কর্মী মিলে এক নির্দোষ যুবককে হত্যা করেছে। এটি মাত্র হত্যার ঘটনা নয়, বরং সম্পর্কের নামে প্রতারণা, কামনা এবং লোভের গল্প। তিনজন মিলে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তা কোনও চলচ্চিত্রের গল্পের চেয়ে কম নয়।

বিয়ের আগেই শুরু হয়েছিল ষড়যন্ত্র

এই ভয়ঙ্কর ঘটনার শুরু ২০২৪ সালের প্রথম দিকে। কুরনূল জেলার তেজেশ্বর নামের এক যুবকের বিয়ে ঠিক হয় ঐশ্বর্য নামের এক যুবতীর সাথে। ২০২৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি উভয় পরিবার বিয়ের সম্মতি দেয় এবং ১৮ মে তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কেউ জানত না যে এই সম্পর্ক এক ভয়াবহ অবসানের দিকে এগিয়ে চলেছে।

বিয়ের আগেই দুইল্হন হারিয়ে গিয়েছিল

১৩ মে, অর্থাৎ বিয়ের ঠিক ৫ দিন আগে ঐশ্বর্য হঠাৎ করে হারিয়ে যায়। পরিবারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ নানা কথা বলতে শুরু করে। কেউ কেউ বলছিল সে অন্য কারও সাথে প্রেম করত এবং তার সাথে পালিয়ে গেছে। মানুষ তাকে এক ব্যাংক কর্মীর সাথে দেখেছিল, যে এখন এই ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন।

ফিরে আসার পর আবার বিয়ের সিদ্ধান্ত

১৬ মে ঐশ্বর্য ফিরে আসে এবং বলে যে তার মায়ের উপর দেনমোহরের চাপের কারণে সে কয়েকদিনের জন্য এক বন্ধুর কাছে গিয়েছিল। সে তেজেশ্বর এবং পরিবারের কাছে ক্ষমা চায় এবং বিয়ের অনুরোধ করে। পরিবার রাজি হয় এবং ১৮ মে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বিয়ের পর পরিবর্তিত আচরণ

বিয়ের পরের দিন থেকেই তেজেশ্বর তার স্ত্রীর আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করে। সে সারাদিন মোবাইলে ব্যস্ত থাকত এবং কথাও বলত না। তেজেশ্বর যখন প্রশ্ন করে, ঐশ্বর্য তা এড়িয়ে যায়। সে এ কথা তার পরিবারের সাথেও শেয়ার করে, কিন্তু কেউ গুরুত্ব সহকারে নেয়নি।

১৭ জুন তেজেশ্বরের হত্যা

১৭ জুন তেজেশ্বর বাড়ি থেকে বের হয় এবং আর ফিরে আসে না। যখন অনেকক্ষণ পরও কোন খবর পাওয়া যায়নি, তার ভাই কুরনূল পুলিশে একটি নিখোঁজের রিপোর্ট দায়ের করে। পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং ঐশ্বর্যর কল ডিটেইলস (CDR) সংগ্রহ করে। সেখান থেকেই রহস্য উন্মোচিত হতে শুরু করে।

প্রেমিকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ

CDR থেকে জানা যায় যে বিয়ের পরও ঐশ্বর্য সেই ব্যাংক কর্মীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিল, যার সাথে সে বিয়ের আগে পালিয়ে গিয়েছিল। বিয়ের পরও সে তার সাথে ২০০০ বারের বেশি কথা বলেছে। যখন পুলিশ ঐশ্বর্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, সে প্রথমে সব অস্বীকার করে। কিন্তু প্রমাণ সামনে আসার পর সে এবং তার মা সুজাতা সত্যি কবুল করে।

মা-মেয়ে দুজনেরই একই ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক

এখান থেকে এই মামলার সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর দিক উন্মোচিত হয়। ঐশ্বর্য এবং তার মা সুজাতা উভয়েই সেই ব্যাংক কর্মীর সাথে সম্পর্কে জড়িত ছিল। সুজাতা আগে থেকেই সেই ব্যক্তির সাথে সম্পর্কে ছিল, পরে ঐশ্বর্যও তার কাছাকাছি চলে আসে। দুজনে মিলে পরিকল্পনা করে তেজেশ্বরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলার।

সম্পত্তি এবং সম্পর্ক রক্ষার উদ্দেশ্য

ঐশ্বর্যের তেজেশ্বরের প্রতি কোন আবেগ ছিল না। সে শুধুমাত্র সেই ব্যাংক কর্মীর সাথে থাকতে চাইত এবং তেজেশ্বরের সম্পত্তিও তার নামে করতে চাইত। তেজেশ্বর যখন সন্দেহ করে এবং বিরোধিতা করে, তখন হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়।

সুপারি দিয়ে হত্যা করা হয়

তদন্তে জানা যায় যে ব্যাংক কর্মী পেশাদার খুনিদের সুপারি দিয়েছিল এবং তাদের সাহায্য করার জন্য তার ড্রাইভারকেও পাঠিয়েছিল। ১৭ জুন তেজেশ্বরকে জমি সংক্রান্ত কাজের বहाনায় ডেকে নেওয়া হয়। যখন সে গাড়িতে উঠে, খুনিরা ছুরি দিয়ে তার উপর আক্রমণ করে এবং নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে। পরে তার লাশ জনশূন্য স্থানে ফেলে দেওয়া হয়।

পুলিশ তদন্তের পর ঐশ্বর্য এবং তার মা সুজাতাকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যাংক কর্মী এবং অন্যান্য অভিযুক্তরা এখনও পলাতক। পুলিশ তাদের খোঁজে মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করছে এবং বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।

Leave a comment