ভারতীয় ক্রিকেটে ঘরোয়া পর্যায়ে অসাধারণ অবদান রাখা কিংবদন্তী স্পিনার পদ্মকর শিবালকার ৮৪ বছর বয়সে পরলোক গমন করেছেন। বয়সজনিত সমস্যার কারণে তিনি ২০২৫ সালের ৩ মার্চ মুম্বাইয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। শিবালকার ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের সেই দুর্ভাগ্যবান তারকাদের একজন, যাঁরা ঘরোয়া ক্রিকেটে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন কিন্তু কখনোই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাননি।
৫০০-এর বেশি উইকেট নেওয়ার পরও আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়নি
বামহাতি স্পিনার পদ্মকর শিবালকার ১৯৬১-৬২ সালে রঞ্জি ট্রফি থেকে তার ক্যারিয়ারের শুরু করেন এবং ১৯৮৭-৮৮ সাল পর্যন্ত মুম্বাইয়ের হয়ে খেলেন। তার ১২৪টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ৫৮৯ উইকেট নিয়েছেন শিবালকার, ১৯.৬৯-এর অসাধারণ বোলিং গড় নিয়ে। তিনি ৪২ বার ইনিংসে ৫ উইকেট এবং ১৩ বার ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি করেছেন।
যদিও, তার ভাগ্য কখনো তার সাথে ছিল না এবং তিনি ভারতীয় দলের হয়ে কখনোই টেস্ট বা ওয়ানডে ক্রিকেট খেলতে পারেননি। ১৯৭০-এর দশকে ভারতীয় দলে বিশ্বনাথান বিশ্বনাথ, বিশন সিং বেদী প্রভৃতি বড় স্পিনারদের থাকার কারণে তিনি জাতীয় দলে সুযোগ পাননি।
রঞ্জি ট্রফিতে ঐতিহাসিক সাফল্য
১৯৭২-৭৩ সালের রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে তার পারফরম্যান্স ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। এই ম্যাচে তিনি ১৬ রানে ৮ উইকেট এবং ১৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে মুম্বাই (তখন বোম্বে) কে তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে জয় এনে দেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে তার অভূতপূর্ব অবদানের জন্য, বিসিসিআই ২০০৭ সালে তাকে সি.কে. নায়ডু ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট’ অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করেছিল।
সুনীল গাভাস্কর এবং MCA শোক প্রকাশ
মহান ভারতীয় ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কর শিবালকারের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, "মুম্বাই ক্রিকেট আরেকটি অমূল্য রত্ন হারালো। সম্প্রতি আমরা মিলিন্দ রেগেকে হারিয়েছি, এবং এখন শিবালকারও আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এই দুজনেই মুম্বাই ক্রিকেটের অনেক ঐতিহাসিক জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন।"
মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (MCA)-এর সভাপতি অজিন্ক্য নাইকও তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, "পদ্মকর শিবালকারের খেলায় অবদান অতুলনীয়। তিনি ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা স্পিনার। মুম্বাই ক্রিকেটের প্রতি তার আন্তরিকতা এবং খেলায় তার দক্ষতা সর্বদা স্মরণীয় থাকবে। তার মৃত্যু ক্রিকেট জগতের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।"
শিবালকারের মৃত্যুর সংবাদে ভারতীয় ক্রিকেট জগৎ শোকে নিমজ্জিত। তার সমসাময়িক খেলোয়াড় এবং ক্রিকেটপ্রেমীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছেন। যদিও তিনি ভারতীয় দলের জার্সি পরেননি, তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে তার অর্জন সর্বদা স্মরণীয় থাকবে।
