কানস চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্তের তারকারা তাঁদের আভিভাবনার প্রদর্শন করছেন, সেখানেই উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কন্যাও লাল কার্পেটে তাঁর বিশেষ উপস্থিতি জানিয়েছেন। তিনি অত্যন্ত স্টাইলিশ একটি গাউন পরে প্রবেশ করেছিলেন, যা ফ্যাব্রিক ওয়েস্ট, অর্থাৎ বর্জ্য কাপড়ের টুকরো দিয়ে তৈরি।
বিনোদন: ফ্রান্সের কান শহরে অনুষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র উৎসবে এবার ভারতীয় প্রতিভাদের ব্যাপক আভাস পাওয়া গেছে। লাল কার্পেটে যেখানে বলিউডের বিখ্যাত তারকারা তাঁদের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট দিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, সেখানেই উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্কের কন্যা আরুষি নিশঙ্কও তাঁর অনন্য স্টাইলে উৎসবে একটি বিশেষ পরিচয় তৈরি করেছেন।
আরুষি, যিনি পেশায় একজন অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক, এই কানস চলচ্চিত্র উৎসবে কেবলমাত্র তাঁর আত্মপ্রকাশই করেননি, বরং ফ্যাশনের মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বার্তাও দিয়েছেন। তিনি যে গাউনটি পরেছিলেন, তা কোনও সাধারণ ডিজাইনার পোশাকের মতো ছিল না, বরং এটি ফ্যাব্রিক ওয়েস্ট দিয়ে তৈরি, যা পরিবেশ সংরক্ষণের একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করে।
ফ্যাশনে নতুন অধ্যায়: জিরো ওয়েস্ট প্রযুক্তির কীর্তি
আরুষি যে গাউনটি পরেছিলেন, তা বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড 'Mambo Couture' কর্তৃক ডিজাইন করা হয়েছিল। এই হালকা সবুজ গাউনটি ফ্যাব্রিক ওয়েস্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি তৈরিতে জিরো ওয়েস্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, ডিজাইনিংয়ের সময় কোনও কাপড়ই নষ্ট করা হয়নি, যার ফলে কাপড় শিল্প থেকে উৎপন্ন বর্জ্য কমানো সম্ভব হয়েছে।
এই অনন্য প্রয়াসের মাধ্যমে আরুষি এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে ফ্যাশন ও পরিবেশের মেলবন্ধন সম্ভব। এই উদ্যোগ আজকের যুগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যখন কাপড় শিল্প পরিবেশ দূষণের অন্যতম বড় কারণ হিসেবে পরিণত হয়েছে।
বার্বি লুকে দেখা গেল আরুষিকে
আরুষির গাউনটি ছিল স্ট্র্যাপলেস ডিজাইনের, যেখানে কাঁধ থেকে ঝুলন্ত রাফেল স্লিভস একটি নাটকীয় লুক দিয়েছে। উপরের অংশে কর্ছেট স্টাইল এবং সিলভার স্টোন ওয়ার্ক তাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ছোট ছোট প্লিটস এবং ফ্লেয়ার্স দিয়ে স্কার্টটিকে বল গাউনের লুক দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, রাফেল দিয়ে তৈরি লম্বা ট্রেইলে লুকে রাজকীয় ভাব যোগ হয়েছে।
এই গাউনে কেবলমাত্র ঐতিহ্যগত সৌন্দর্যের ঝলকই ছিল না, বরং একটি আধুনিক বার্তাও লুকিয়ে ছিল। তাঁর সম্পূর্ণ লুকটি যেন বার্বি ডলকে জীবন্ত করে তুলেছে এবং লাল কার্পেটে সকলের দৃষ্টি কেবলমাত্র তাঁর উপরই আটকে ছিল।
লুকটিকে মেকআপ ও হেয়ারস্টাইল দিয়ে সম্পূর্ণ করা
আরুষি তাঁর চুলগুলি হাফ পোনিটেল স্টাইলে সাজিয়েছিলেন, যখন সামনের দিকে হালকা ফ্লিক্স এবং নিচের দিকে ওয়েভি কার্লস তাঁর হেয়ারস্টাইলে আভিজাত্য যোগ করেছে। তিনি একটি পিঙ্ক টোন মেকআপ বেছে নিয়েছিলেন, যেখানে শিমারি আইশ্যাডো, উইংড আইলাইনার, ব্লাশ্ড চিকস এবং গ্লসি লিপস তাঁর সৌন্দর্যকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। আরুষি নিশঙ্ক কেবলমাত্র একজন অভিনেত্রী ও প্রযোজক নন, বরং তিনি দীর্ঘদিন ধরে জল সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি স্পর্শ গঙ্গা जैसी উদ্যোগেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে গ্ল্যামার এবং সমাজসেবা একসাথে চলতে পারে।
আরুষির কানস লাল কার্পেটে আত্মপ্রকাশ কেবলমাত্র ফ্যাশন বা স্টাইলে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল একটি সাংস্কৃতিক বার্তা যে ভারতের মেয়েরা এখন বিশ্বব্যাপী মঞ্চে কেবলমাত্র সৌন্দর্যই নয়, বুদ্ধিমত্তা ও সামাজিক সচেতনতা নিয়ে তাদের উপস্থিতি জানাচ্ছে। উত্তরাখণ্ডের মতো পাহাড়ি রাজ্য থেকে বেরিয়ে ফ্রান্সের এই প্রতিষ্ঠিত মঞ্চে পৌঁছানো নিজেই একটি অনুপ্রেরণা।