পায়াল কাপাড়িয়ার (Payal Kapadia) কান চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি হিসেবে আমন্ত্রণ পাওয়া তার কর্মজীবনের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও চলচ্চিত্রের প্রতি তার অনন্য বোধের ফল।
Payal Kapadia Cannes 2025: ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাতা পায়াল কাপাড়িয়া তার অনন্য চলচ্চিত্র অবদানের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন। এখন ভারতীয় চলচ্চিত্রের জন্য আসছে আরও একটি গৌরবের মুহূর্ত, কারণ আসন্ন Cannes 2025 চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য পায়াল কাপাড়িয়াকে জুরি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এভাবে তিনি তার চলচ্চিত্র যাত্রায় আরও একটি বৃহৎ সাফল্য অর্জন করতে যাচ্ছেন, যা শুধুমাত্র তার জন্য নয়, ভারতীয় চলচ্চিত্রের জন্যও গর্বের বিষয়।
পায়াল কাপাড়িয়াকে Cannes 2025-এ জুরি সদস্য হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং এই তথ্য সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ পায়াল ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি নতুন দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং তার এই অবদান এখন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগৎ স্বীকৃতি দিয়েছে।
পায়ালের ঐতিহাসিক সাফল্য
পায়াল কাপাড়িয়ার চলচ্চিত্র 'অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট' (All We Imagine As Light) গত বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে একটি ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছিল। এই চলচ্চিত্রটি কানে প্রধান প্রতিযোগিতায় স্থান পেতে তিন দশকের মধ্যে প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র হয়েছিল। চলচ্চিত্রটি শুধু ভারতের নাম উজ্জ্বল করেনি, বরং 'গ্র্যান্ড প্রিক্স' এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পুরষ্কারেও ভূষিত হয়েছিল। এই চলচ্চিত্রে পায়াল নারী বন্ধুত্ব, প্রেম এবং আকাঙ্ক্ষাকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও মার্মিকভাবে উপস্থাপন করেছিলেন।
তার এই চলচ্চিত্রটিকে গোল্ডেন গ্লোবসে 'শ্রেষ্ঠ পরিচালক' এবং 'শ্রেষ্ঠ বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র' জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল এবং এর পরে BAFTA লংলিস্টেও তিনটি বিভাগে স্থান পেয়েছিল। এই সবকিছু পায়ালের চলচ্চিত্র কর্মজীবনের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে এবং এখন জুরি সদস্য হওয়া আরও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
Cannes 2025-এ পায়াল কাপাড়িয়ার অবদান
কান চলচ্চিত্র উৎসব বিশ্বজুড়ে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য একটি সম্মানজনক মঞ্চ, যেখানে প্রতি বছর বিশ্বের সেরা চলচ্চিত্রগুলিকে সম্মানিত করা হয়। এ বছর, Cannes 2025-এর জুরিতে পায়াল কাপাড়িয়ার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জুরির সভাপতিত্ব করছেন বিখ্যাত ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশ, যিনি তার চলচ্চিত্র 'দ্য ইংলিশ পেশেন্ট', 'থ্রি কালার্স: ব্লু' এবং 'চকোলেট'-এর জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন। পায়ালের সাথে এই জুরিতে আরও অনেক আন্তর্জাতিক তারকা রয়েছেন, যেমন:
- হ্যালি বেরি (আমেরিকান অভিনেত্রী ও পরিচালক)
- আলবা রোহারওয়াচার (ইতালীয় অভিনেত্রী)
- লিলা স্লিমানি (ফ্রেঞ্চ-মরক্কান লেখিকা)
- ডিউডো হামাদি (কঙ্গোর চলচ্চিত্র পরিচালক ও নির্মাতা)
- হং সাংসু (কোরিয়ান পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার)
- কারলোস রেগাদাস (মেক্সিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা)
জেরেমি স্ট্রং (আমেরিকান অভিনেতা)
এই জুরি এ বছরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ২১টি চলচ্চিত্রের মধ্য থেকে "পাল্মে ডি'ওর" বিজয়ী নির্বাচন করবে। গত বছর এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিখ্যাত পরিচালক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা গ্রেটা গেরউইগ, যিনি "এনোরা" চলচ্চিত্রকে শীর্ষ পুরষ্কার দিয়েছিলেন। এখন পায়াল কাপাড়িয়ার পালা, এবং তিনি এ বছরের কানে ভারতীয় চলচ্চিত্রের গর্ব ও মর্যাদা বৃদ্ধির কাজ করবেন।
পায়ালের বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্র প্রভাব
পায়াল কাপাড়িয়ার এই সাফল্য ভারতীয় চলচ্চিত্রের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা। তিনি এখন সেই সীমিত সংখ্যক ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন যারা কান চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি সদস্য হিসেবে তাদের স্থান করে নিয়েছেন। পায়ালের এই সম্মান শুধুমাত্র তার কর্মজীবনকে এগিয়ে নেবে না, বরং ভারতীয় চলচ্চিত্রকেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বেশি স্বীকৃতি দেবে।
এর আগে অনেক প্রধান ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেতা কান চলচ্চিত্র উৎসবে জুরির অংশ হয়েছেন, যাদের মধ্যে মৃণাল সেন, মীরা নায়ার, শেখর কাপুর, ঐশ্বর্যা রায় বচ্চন, নন্দিতা দাস, শর্মিলা ঠাকুর, বিদ্যা বালান ও দীপিকা পাড়ুকোণের মতো নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এখন পায়াল কাপাড়িয়ার নাম এই তালিকায় যুক্ত হওয়ায় ভারতীয় চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক পরিচিতি আরও শক্তিশালী হবে।
ভবিষ্যতে পায়ালের অবদান
পায়াল কাপাড়িয়ার এই সম্মানের সাথে আশা আরও বেড়েছে যে তিনি ভবিষ্যতে ভারতীয় চলচ্চিত্রের নতুন ধারা স্থাপন করবেন। তার চলচ্চিত্র 'অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট' ভারতীয় চলচ্চিত্রের সংবেদনশীলতা ও কলাকে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং আগামী বছরগুলিতে তিনি আরও উত্তম চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারেন।
পায়ালের যাত্রা ও তার এই নতুন পদক্ষেপ থেকে শুধুমাত্র ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পই নয়, বিশ্বজুড়ে চলচ্চিত্রপ্রেমীরাও এই বার্তা পাবে যে কলা ও চলচ্চিত্রের সীমানা আর শুধুমাত্র ভৌগোলিক সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতারা এখন বিশ্বজুড়ে তাদের চিন্তা ও কলা ভাগ করে নিতে পারেন এবং পায়াল কাপাড়িয়া এই পরিবর্তনের অগ্রদূত হবেন।