নামে কি আছে? শেক্সপিয়ারের এই প্রসিদ্ধ উক্তি এদিনগুলি জয়পুরে মিষ্টান্নের প্রসঙ্গে বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। জয়পুরের কিছু প্রধান মিষ্টান্ন দোকান তাদের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্নের নাম থেকে ‘পাক’ শব্দটি সরিয়ে তার জায়গায় ‘শ্রী’ যোগ করা শুরু করেছে।
জয়পুর: গোলাপী নগরী জয়পুরের মিষ্টান্ন বাজারে এখন এক নতুন সাংস্কৃতিক ঢেউ চলছে। বহু বছর ধরে জনপ্রিয় মিষ্টান্নের নাম থেকে এখন ‘পাক’ শব্দটি সরিয়ে ‘শ্রী’ শব্দটি যোগ করা হচ্ছে। এই পরিবর্তন কেবলমাত্র একটি ভাষাগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং দেশপ্রেমের অনুভূতি দ্বারা অনুপ্রাণিত একটি সাংস্কৃতিক প্রকাশ হয়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত ‘মৈসুর পাক’, ‘আম পাক’, ‘গোন্দ পাক’ জাতীয় মিষ্টান্নগুলিকে ‘মৈসুর শ্রী’, ‘আম শ্রী’ এবং ‘গোন্দ শ্রী’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
মিষ্টান্নের মধ্যে দেশপ্রেমের স্বাদ
জয়পুরের বৈশালী নগরস্থিত ‘ত্যোহার সুইটস’ -এর পরিচালিকা অঞ্জলি জৈন বলেন, "আমাদের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র মিষ্টান্ন বিক্রি করা নয়, বরং সংস্কৃতি এবং জাতীয়তাবোধকেও রক্ষা করা। ‘পাক’ শব্দের অর্থ যাই হোক না কেন, কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপটে এটি অনেকের কাছে মানসিক অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এখন আমাদের মিষ্টান্নগুলিতে ‘শ্রী’ -এর পবিত্রতা এবং ভারতীয়তার ছায়া দেখা যাবে।"
তিনি জানান, সম্প্রতি দেশে ঘটা ‘অপারেশন সিন্দুর’ এবং পাকিস্তান সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে উঠে আসা জনআন্দোলন দেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ প্রতীকী হওয়ার সাথে সাথে ভারতীয়দের অনুভূতিকে সম্মান করার মতো।
পুরোনো নাম, নতুন পরিচয়
জয়পুরের প্রসিদ্ধ ‘বোম্বে মিষ্টান্ন ভান্ডার’ এবং ‘অগ্রওয়াল ক্যাটারার্স’ও একই পথে চলে তাদের মিষ্টান্নের নাম থেকে ‘পাক’ শব্দটি সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘বোম্বে মিষ্টান্ন ভান্ডার’ -এর মহাপরিচালক বিনীত ত্রিখা জানান, আমাদের উদ্যোগের উদ্দেশ্য একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া, যে ভারতের সংস্কৃতি ও অনুভূতি সর্বোচ্চ। ‘মোতি পাক’ এখন ‘মোতি শ্রী’ হয়ে গেছে এবং গ্রাহকরা এটিকে উন্মুক্ত মনে গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, এই নাম পরিবর্তন কেবলমাত্র বাণিজ্যিক কৌশল নয়, বরং মানসিক দায়িত্ব, যার মধ্যে আমাদের মিষ্টান্নের মাধ্যমে ভারতের পরিচয় এবং গৌরব উজ্জ্বল করা হচ্ছে।
জনমতের সম্মতি
এই উদ্যোগকে কেবলমাত্র মিষ্টান্ন দোকানদারদের সমর্থনই পাওয়া যাচ্ছে না, বরং সাধারণ মানুষও এটির সাথে মানসিকভাবে যুক্ত হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা পুষ্পা কৌশিক জানান, যখন আমি প্রথমবার ‘মৈসুর শ্রী’ নামটি শুনেছিলাম, তখন গর্ব অনুভব করেছিলাম। এটি কেবল নাম নয়, বরং আমাদের অনুভূতির সম্মান। একইভাবে স্থানীয় ব্যবসায়ী রমেশ ভাটিয়া মনে করেন, এই পরিবর্তন যতই ছোট মনে হোক না কেন, কিন্তু এর সাংস্কৃতিক প্রতিধ্বনি বড়। "এই সিদ্ধান্ত আমাদের সৈনিক এবং দেশের জন্য সমর্থনের মিষ্টি প্রকাশ।"
ভাষাবিদদের মতে ‘পাক’ শব্দটি ফারসি উৎপত্তির, যার অর্থ ‘শুদ্ধ’, ‘পবিত্র’ অথবা ‘মিষ্টি খাবার’। হিন্দি ব্যাকরণে এটি পাকশিল্প, খাবার তৈরির সাথে যুক্ত। কিন্তু আজকের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে কিছু মানুষের কাছে এই শব্দটি পাকিস্তানের প্রসঙ্গে নেতিবাচক অর্থ ধারণ করেছে। এমন অবস্থায় অনুভূতির অগ্রাধিকার ব্যাকরণের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।