ঝুঁঝুনুতে দেড় কোটি টাকার সাইবার প্রতারণা: ২৬ লক্ষ টাকা উদ্ধার

ঝুঁঝুনুতে দেড় কোটি টাকার সাইবার প্রতারণা: ২৬ লক্ষ টাকা উদ্ধার
সর্বশেষ আপডেট: 29-04-2025

ঝুঁঝুনুতে সাইবার প্রতারকরা এক অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর কাছ থেকে ট্রেডিংয়ের নামে দেড় কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে। সাইবার পুলিশ ২৬ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে এবং একজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রতারকরা একজন শ্রমিককে প্রলোভন দেখিয়ে তার অ্যাকাউন্ট খুলিয়েছিল।

ঝুঁঝুনু: রাজস্থানের ঝুঁঝুনু জেলা থেকে একটি চাঞ্চল্যকর এবং উদ্বেগজনক ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে সাইবার প্রতারকরা এক অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে। মাত্র ১৫-২০ দিনের মধ্যে ট্রেডিংয়ের নামে তারা এক ডজনের বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে নিয়েছে। তবে সুখের বিষয় হলো, সাইবার থানা এই ঘটনাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে প্রতারিত টাকার প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে। পাশাপাশি, এই ঘটনার সাথে জড়িত একজন অভিযুক্তকে জয়পুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রতারণার শুরু কীভাবে?

এই ঘটনার শুরু হয় যখন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী তার মোবাইল ফোনে একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগের প্রস্তাব পান। প্রতারকরা তাকে আশ্বাস দিয়েছিল যে সে সহজেই বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবে। তারা অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলীকে ট্রেডিংয়ে বিনিয়োগ করার জন্য উৎসাহিত করে এবং ধীরে ধীরে তাকে তার জালে ফাঁসিয়ে নেয়।

অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী বিনিয়োগ সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেন এবং প্রতারকরা ধীরে ধীরে তাকে প্রভাবিত করে। এরপর, প্রতারকরা অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর কাছ থেকে ক্রমাগত টাকা চাইতে শুরু করে। বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছিল, কিন্তু প্রতারণার এই খেলা তখন শেষ হয় যখন প্রকৌশলী তার এক পরিচিতের সাথে এই বিষয়টি শেয়ার করেন। পরিচিত ব্যক্তিটি এটিকে প্রতারণার ঘটনা বলে মনে করে এবং এরপর অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

প্রতারণার টাকা কোথা থেকে এসেছে?

সাইবার থানার ভারপ্রাপ্ত ডিএসপি রামখিলাড়ি মীণার মতে, যখন এই মামলার তদন্ত করা হয়, তখন দেখা যায় যে প্রতারকরা এই প্রতারণার জন্য বিভিন্ন রাজ্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছিল। এই রাজ্যগুলির মধ্যে কর্ণাটক, কেরাল, গুজরাট, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং পাঞ্জাব অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রতারকরা অনেক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছিল, যাতে প্রতারণার টাকা সহজেই লুকিয়ে রাখা যায়।

এই ঘটনায় একটি অ্যাকাউন্ট ছিল সवाईমাধোপুর জেলার সুরওয়াল থানা এলাকার আডুন্দা গ্রামের জিতেন্দ্রর। পুলিশ যখন জিতেন্দ্রর কাছে পৌঁছায়, তখন তাকে জয়পুরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে দেখা যায়। যখন পুলিশ জিতেন্দ্রের সাথে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তখন জানা যায় যে প্রতারকরা তাকে প্রতি মাসে ১৫০০ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলিয়েছিল। জিতেন্দ্রর এই বিষয়ে কোন ধারণা ছিল না যে তার অ্যাকাউন্ট প্রতারকদের কাজে লাগছে।

জিতেন্দ্রকে কীভাবে ফাঁসানো হয়েছিল?

জিতেন্দ্র স্বীকার করেছে যে সাইবার প্রতারকরা তাকে সহজেই তার জালে ফাঁসিয়ে নিয়েছে। প্রতারকরা তাকে আশ্বাস দিয়েছিল যে তাকে টাকা দেওয়ার পর তাকে প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা পাওয়া যাবে। জিতেন্দ্র তার অজান্তেই প্রতারকদের কথামতো এই অ্যাকাউন্ট খুলেছিল এবং এর ব্যবহার প্রতারকরা করেছিল। এই ঘটনায় পুলিশ জিতেন্দ্রের কাছ থেকে আরও তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং তাকে আদালতে হাজির করা হবে।

পুলিশের পদক্ষেপ এবং প্রতারণার টাকা উদ্ধার

সাইবার থানার কর্মকর্তা ডিএসপি রামখিলাড়ি মীণা জানিয়েছেন যে পুলিশ এই ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। পুলিশ এখন পর্যন্ত প্রতারণার টাকার প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে। প্রতারকদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং পুলিশ অন্যান্য অ্যাকাউন্টধারীদের সাথেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এই ঘটনায় আরও কিছু অভিযুক্তের সন্ধান চলছে এবং পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়

এই ঘটনা একটি উদাহরণ যে অনলাইন প্রতারকদের থেকে বাঁচার জন্য আমাদের সর্বদা সতর্ক থাকা উচিত। যদি আপনার কাছে কোনও বিনিয়োগের প্রস্তাব আসে, তাহলে তা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করার আগে সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করুন। কোনও বিনিয়োগের সাথে সম্পর্কিত প্রস্তাবে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্বাস করবেন না, বিশেষ করে যদি তা খুব ভালো লাগে অথবা কোন ধরণের প্রলোভন দেয়। সাইবার প্রতারকদের জালে না পড়ার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:

  • কোনও অনলাইন লেনদেন করার সময় সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করুন।
  • যদি কোন অপরিচিত ব্যক্তি আপনাকে টাকা বিনিয়োগ করার জন্য বলে, তাহলে তার তথ্য যাচাই করুন।
  • কোনও সন্দেহজনক কল, মেসেজ বা ইমেলের উত্তর দিবেন না।
  • যদি ব্যাংকের সাথে সম্পর্কিত কোনও তথ্য আপনার কাছ থেকে চাওয়া হয়, তাহলে তা দিবেন না।
  • সন্দেহ হলে, অবিলম্বে আপনার নিকটস্থ সাইবার পুলিশ স্টেশনের সাথে যোগাযোগ করুন।

সাইবার সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতন থাকুন

এই ঘটনা আমাদের শিক্ষা দিয়েছে যে আমাদের অনলাইন সুরক্ষা নিয়ে সর্বদা সচেতন থাকা উচিত। সাইবার প্রতারকরা প্রতিদিন নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে মানুষকে প্রতারিত করার চেষ্টা করে। তাই আমাদের সতর্ক থাকার মাধ্যমেই আমরা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারি।

Leave a comment