ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। শুক্রবার ইরান আবারও ইসরায়েলের উপর ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করেছে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে অবিরত আট দিন ধরে ভয়াবহ গোলাগুলি চলছে। এই সংঘর্ষ পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে উদ্বেগের পরিবেশ তৈরি করেছে।
ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের সর্বশেষ খবর: মধ্যপ্রাচ্য আবারও যুদ্ধের কगারে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে শুরু হওয়া সংঘর্ষ এখন চরমে পৌঁছেছে বলে মনে হচ্ছে। শুক্রবার এই যুদ্ধের আট দিন হলো, যখন একদিকে ইসরায়েল ইরানি সামরিক ঘাঁটিতে হামলার কথা নিশ্চিত করেছে, অন্যদিকে ইরান তেল আবিবসহ দক্ষিণ ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আক্রমণ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে ইসরায়েলের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে হামলাকে "গুরুতর যুদ্ধাপরাধ" বলে অভিহিত করেছেন।
ইরানের প্রতিরোধী আক্রমণ
ইরানের এই প্রতিরোধী পদক্ষেপে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব কেঁপে উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে শুরু হওয়া আক্রমণ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত চলে, যেখানে ১০০ টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। এই আক্রমণে তেল আবিবের বহু আবাসিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অন্যদিকে বিয়ারশেবায় অবস্থিত সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২৪০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্তৃক প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, এই পদক্ষেপ "সার্বভৌমত্ব ও আত্মরক্ষার" অধিকার অনুসারে নেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, ইরানি পারমাণবিক প্রতিষ্ঠানে ইসরায়েলের হামলা অগ্রহণযোগ্য ছিল এবং এর কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণ: 'খামেনেই দায়ী'
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াব গ্যালেন্ট এবং তাঁর সহযোগী ইসরায়েল কাটজ শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে বক্তব্য দিয়ে হামলার জন্য সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেঈকে দায়ী করেছেন। কাটজ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, খামেনেই যুদ্ধ শুরু করেছেন, এখন তার পরিণতিও ভোগ করবেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (IDF) দাবি করেছে যে, গত ২৪ ঘন্টায় তারা তেহরান এবং ইরানের কুম শহরে অবস্থিত সামরিক ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রকে লক্ষ্য করেছে। তবে, এখনও পর্যন্ত স্বাধীন সূত্র থেকে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
পারমাণবিক সংকট: আলোচনা নাকি যুদ্ধ?
সংকটের আরেকটি দিক আরও উদ্বেগজনক – ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচী। জাতিসংঘে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন যে, তাদের দেশের পারমাণবিক নীতি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, কিন্তু ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে এই অবকাঠামো ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
এদিকে, জেনেভায় ইউরোপীয় নেতাদের সাথে ইরানি প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছে, যেখানে পারমাণবিক সমৃদ্ধি কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রয়টার্সের মতে, একজন উচ্চপদস্থ ইরানি কর্মকর্তা ইঙ্গিত করেছেন যে, দেশটি পারমাণবিক চুক্তির কিছু শর্ত পুনরায় কার্যকর করার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে – যদি সামরিক হামলা বন্ধ হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা: ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে এখন একটি বড় সিদ্ধান্ত রয়েছে – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি এই সংঘর্ষে সক্রিয় হস্তক্ষেপ করবে? হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র শুক্রবার বলেছেন, রাষ্ট্রপতি দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন যে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় কিনা। সূত্র অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ব্যাক-চ্যানেল আলোচনাও চলছে। মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে গোপন বৈঠকের ধারা চলছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট ফলাফল বেরিয়ে আসেনি।
এই সংঘর্ষ পশ্চিম এশিয়ায় শান্তির সম্ভাবনাকে ম্লান করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ থেকে স্পষ্ট যে, এটি কোনও সীমিত সংঘর্ষ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত সংঘর্ষের সূচনা হতে পারে। ইসরায়েল তার সামরিক ক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার করছে, অন্যদিকে ইরানও পুরো শক্তি দিয়ে জবাব দিচ্ছে।