ইরানে উত্তেজনা: শত শত ভারতীয় ছাত্র আশ্রয় নিয়ে আছেন বেসমেন্টে

ইরানে উত্তেজনা: শত শত ভারতীয় ছাত্র আশ্রয় নিয়ে আছেন বেসমেন্টে
সর্বশেষ আপডেট: 16-06-2025

ইরানে চলমান উত্তেজনার মধ্যে শত শত ভারতীয় ছাত্র ভয় ও বিস্ফোরণের মধ্যে বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়ে আছেন। অনেক ছাত্র ভারত সরকারের কাছে দ্রুত তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার আবেদন জানিয়েছেন।

ইরানের ছাত্র: ইজরায়েলি বিমান হামলার মধ্যে ইরানে শত শত ভারতীয় ছাত্র আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পড়াশোনা করা এই ছাত্ররা তাদের অ্যাপার্টমেন্টের বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছেন, যেখানে তারা গুলির আওয়াজ এবং বোমা বিস্ফোরণের মধ্যে রাত কাটাচ্ছেন। ছাত্রদের দাবি, তারা গত কয়েকদিন ধরে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেন না। তারা ভারত সরকারের কাছে দ্রুত তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার আবেদন জানিয়েছেন।

তেহরানে ভারতীয় দূতাবাসের পরামর্শ

তেহরানে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস ইরানে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের জন্য পরামর্শ জারি করেছে। এতে নাগরিকদের ঘরে থাকার এবং জরুরি অবস্থায় দূতাবাস কর্তৃক প্রকাশিত টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দূতাবাস জরুরি হেল্পলাইন নম্বরও শেয়ার করেছে, যাতে যেকোনো পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক সহায়তা পাওয়া যায়।

ছাত্রদের বাস্তব অবস্থা

কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার বাসিন্দা ইমতিসাল মোহিদীন, যিনি তেহরানের শাহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিবিএসের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, জানিয়েছেন যে শুক্রবার রাত ২:৩০ টায় তিনি জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছিলেন। ভয়ে তিনি অবিলম্বে বেসমেন্টের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন যে বিস্ফোরণটি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে হয়েছিল। এর পর থেকে তিনি বেসমেন্টেই আছেন এবং ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ক্লাস বন্ধ, ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক

শাহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫০ জনের বেশি ভারতীয় ছাত্র পড়াশোনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সকল ক্লাস স্থগিত করেছে এবং ছাত্রদের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হওয়া থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। ইমতিসালের দাবি, রাতভর বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে এবং আতঙ্কের মধ্যে বেঁচে থাকা খুব কঠিন হয়ে উঠেছে।

কেরমান থেকেও সাহায্যের আবেদন

তেহরান থেকে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দূরে কেরমান শহরে অবস্থিত কেরমান ইউনিভার্সিটি অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসে এমবিবিএসের প্রথম বর্ষের ছাত্র ফায়জান নবীও এএনআইয়ের সাথে কথোপকথনে পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন। শ্রীনগরের বাসিন্দা ফায়জান জানিয়েছেন যে তাদের শহরেও গুলিবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে এবং সকল ছাত্রকে ৩-৪ দিনের জন্য পানীয় জল মজুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন যে ইন্টারনেট খুব দুর্বল, যার ফলে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করাও ঠিকমতো হচ্ছে না। ফায়জান বলেছেন, “আমরা ডাক্তার হতে এসেছি, কিন্তু এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে শুধুমাত্র জীবিত থেকে ভারতে ফিরে যাওয়ার আশা রয়েছে।”

পরিজনদের উদ্বেগ, ছাত্রদের অস্থিরতা

ছাত্রদের মতে, তাদের বাবা-মা ক্রমাগত যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। ফায়জান জানিয়েছেন যে তাঁর বাবা-মা দিনে ১০ বার ফোন করেন, কিন্তু ইন্টারনেটের খারাপ অবস্থার কারণে তিনি তাদের ঠিকমতো জানাতে পারছেন না যে তারা নিরাপদে আছেন। ছাত্রদের দাবি, প্রতিনিয়ত ভয়ের মধ্যে থাকতে হয় এবং যেকোনো সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

সোপোরের ছাত্রী মিধাতের অভিজ্ঞতা

জম্মু-কাশ্মীরের সোপোরের বাসিন্দা মিধাত, যিনি ইরান ইউনিভার্সিটি অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসে এমবিবিএসের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী, জানিয়েছেন যে প্রথম হামলার সময় রাতটি ছিল তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ানক রাত। তিনি বলেছেন, “বিস্ফোরণের শব্দ এত কাছে থেকে শোনা গেছে যে মনে হয়েছে হামলা আমাদেরই পাশে হচ্ছে। আমরা সবাই খুব ভয় পেয়েছিলাম এবং অ্যাপার্টমেন্টেই লুকিয়ে ছিলাম।”

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পর্যাপ্ত সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না

মিধাত জানিয়েছেন যে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে কোনও বিশেষ সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও ভারতীয় দূতাবাস হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রামের মাধ্যমে যোগাযোগে রয়েছে, কিন্তু ছাত্রদের মনে হয় শুধুমাত্র পরামর্শ এবং বার্তা দিয়ে স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের এখন শুধুমাত্র একটাই আশা—ভারত সরকার তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনবে।

Leave a comment