ইরানের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা: আমেরিকার 'অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ' অভিযোগে তেহরানের তীব্র প্রতিক্রিয়া

ইরানের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা: আমেরিকার 'অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ' অভিযোগে তেহরানের তীব্র প্রতিক্রিয়া
সর্বশেষ আপডেট: 02-05-2025

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেঈ আমেরিকার নতুন নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা করে তাকে অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদী চেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে এটি তেহরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার চাপের ষড়যন্ত্র।

ইরান বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা: ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আবার একবার তিক্ততার মুখোমুখি হয়েছে। ইরান অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর অভিযোগে আমেরিকার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। পাশাপাশি রোমে শনিবার অনুষ্ঠিত হওয়া ইরান-মার্কিন বৈঠকও স্থগিত করা হয়েছে (স্থগিত)।

আমেরিকা কেন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার ও বুধবার ইরান এবং তার সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করেছে। আমেরিকার অভিযোগ হল:

  • কিছু সংস্থা এবং ব্যক্তি ইরানি পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বিক্রয়ের সাথে জড়িত।
  • এদের ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর (IRGC)-এর সাথে সম্পর্ক আছে।
  • এই ব্যক্তিরা ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি (ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রোপেল্যান্ট) ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত।
  • এর অধীনে আমেরিকা ইরানের ৬ জন ব্যক্তি এবং ১৩ টি প্রতিষ্ঠান, পাশাপাশি ৫ টি বিদেশি সংস্থাকেও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

ইরানের তীব্র প্রতিক্রিয়া

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেঈ হামানেহ আমেরিকার এই পদক্ষেপকে "অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদের উন্মুক্ত প্রচেষ্টা" বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন:

"এই নিষেধাজ্ঞাগুলি ইঙ্গিত করে যে আমেরিকা আইন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপহাস করে উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে বৈধ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়।"

বাঘেঈ বলেছেন যে এই পদক্ষেপ আমেরিকার নীতিনির্ধারকদের দ্বৈত নীতি এবং কূটনীতিতে গুরুত্বের অভাবও প্রকাশ করে।

বৈঠক বাতিল: রোমে আলোচনা হবে না

ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চতুর্থ দফার আলোচনা শনিবার ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ইরান এই আলোচনার মাধ্যমে তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে কিছু সমঝোতার বিনিময়ে আমেরিকা থেকে নিষেধাজ্ঞার সুযোগ চেয়েছিল। কিন্তু এখন এই আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে।

ট্রাম্পের চুক্তি এবং বর্তমান উত্তেজনার সংযোগ

এই সম্পূর্ণ ঘটনাটি ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ইরান পারমাণবিক চুক্তি (JCPOA)-এর সাথে জড়িত। এই চুক্তির অধীনে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যার বিনিময়ে আমেরিকা তার উপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছিল।

কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকাকে এই চুক্তি থেকে বের করে দিয়েছিলেন এবং ইরানের উপর আবার কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। এর পর ইরানও ধীরে ধীরে তার প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

আমেরিকার কী বক্তব্য?

আমেরিকা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সে ইরানের সেসব কর্মকাণ্ড সহ্য করবে না যার মাধ্যমে "তেহরান সন্ত্রাসবাদকে অর্থায়ন করে"। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিয়ো এক বিবৃতিতে বলেছেন:

"যতক্ষণ ইরান সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড এবং অস্থিরতার জন্য তেল ও রাসায়নিক পণ্য থেকে আয় করবে, ততক্ষণ আমেরিকা এবং তার সহযোগীরা তা রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।"

Leave a comment