অসমীয়া গায়িকা গায়ত্রী হাজারিকার ৪৪ বছর বয়সে শুক্রবার মৃত্যু হয়েছে। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। 'জোরা পাটে পাটে ফাগুন নামে' গানটির জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন।
বিনোদন: অসমীয়া সংগীত জগতের একজন প্রধান ও অত্যন্ত প্রিয় গায়িকা, গায়ত্রী হাজারিকার ৪৪ বছর বয়সে শুক্রবার মৃত্যু হয়েছে। গুয়াহাটির নেমকেয়ার হাসপাতালে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। এই দুঃখজনক সংবাদে শুধুমাত্র অসম নয়, সারা দেশের সংগীতপ্রেমীদের মনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গায়ত্রী হাজারিকা তাঁর মধুর কণ্ঠে অসমীয়া লোকসংগীতকে সমৃদ্ধ করেছেন এবং অনেক জনপ্রিয় গানের মাধ্যমে অসমের সাংস্কৃতিক সম্পদকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
গায়ত্রী হাজারিকার সংগীত যাত্রা ও জনপ্রিয়তা
গায়ত্রী হাজারিকার কণ্ঠে ছিল এক অনন্য মধুরতা ও ভাবগভীরতা, যা তাঁকে অসমীয়া সংগীতের জগতে এক বিশেষ স্থান দিয়েছে। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত গান 'জোরা পাটে পাটে ফাগুন নামে' আজও সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়ে আছে। এছাড়াও 'তুমি কুন বিরোহী অনন্যা', 'জঙ্ক নাসিল বোনোট' এবং 'জেউজি এক্সপোন' গানগুলিও অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। তাঁর গায়কীতে ঐতিহ্যবাহী অসমীয়া লোকসুরের সাথে আধুনিকতার সুন্দর মিশ্রণ দেখা যেত, যার ফলে সকল বয়সের মানুষ তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে পারত।
গায়ত্রী তাঁর কর্মজীবনে অসমীয়া সংগীতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে তাঁর প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর গানগুলি শুধুমাত্র অসমের মানুষকেই নয়, সারা দেশে অসমীয়া ভাষা ও সংগীতের সৌন্দর্যের সাথে পরিচিত করেছে।
ক্যান্সারের সাথে লড়াই ও শেষ দিনগুলি
যদিও, গায়ত্রী হাজারিকা কিছুদিন ধরে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি নিয়মিত চিকিৎসা করাচ্ছিলেন, কিন্তু রোগটি তাঁর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। হাসপাতালে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা তাঁর পাশে ছিলেন। তাঁর মৃত্যু অসমীয়া সংগীতের জগতের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
সংগীত জগত ও সমাজের প্রতিক্রিয়া
গায়ত্রী হাজারিকার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে অসমীয়া ও ভারতীয় সংগীত জগতে শোকের ছায়া নেমে আসে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা টুইট করে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন গায়ত্রীর মধুর কণ্ঠ ও অসমীয়া সংগীতে তাঁর অবদান সর্বদা স্মরণীয় থাকবে। তিনি গায়ত্রীর পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করেছেন এবং তাঁর আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন।
অসম গণ পরিষদের সভাপতি অতুল বোরাও গায়ত্রীর অকাল মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন তাঁর কণ্ঠ অসমীয়া সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছে এবং লাখ লাখ হৃদয় স্পর্শ করেছে। অতুল বোরা তাঁর পরিবার ও শোকসন্তপ্তদের প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করেছেন।
এছাড়াও অসমের অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা এমি বরুয়াও গায়ত্রী হাজারিকাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করে তাঁর মৃত্যুকে অসমের জন্য একটি বড় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন গায়ত্রীর মধুর কণ্ঠ অসমের সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে এবং তাঁর স্মৃতি সর্বদা জীবন্ত থাকবে।
অসমীয়া সংগীতের এক গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠের অবসান
গায়ত্রী হাজারিকার মৃত্যু শুধুমাত্র একজন গায়িকার বিদায় নয়, বরং অসমীয়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি বড় ক্ষতি। তাঁর কণ্ঠ অসমের লোকসংগীতকে নতুন পরিচয় দিয়েছে এবং আধুনিক যুগেও জীবন্ত রেখেছে। সংগীতের জগতে তাঁর কমতি কখনো পূরণ হবে না। তাঁর বিদায় অসমের সেই কলাকুশলীদের একজনের অবসান যিনি লোকসংগীতকে জীবনের অংশ করে মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন। তাঁর গানের মধুরতা, তাঁর কণ্ঠের মিষ্টতা সর্বদা অসমীয়া সংগীতপ্রেমীদের মনে জীবন্ত থাকবে।