দিল্লির দীর্ঘদিনের প্রকট দূষণ সমস্যার সমাধানে এবার বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। বিধানসভা নির্বাচনের সময় এই বিষয়টি কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এবং এখন ১০০ দিন ক্ষমতায় থাকার পর রেখা গুপ্তার নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ‘বায়ু দূষণ প্রশমন পরিকল্পনা ২০২৫’ চালু করেছে।
নতুন দিল্লি: রাজধানী দিল্লিতে বহু বছর ধরে চলে আসা বায়ু দূষণের প্রকট সমস্যা মোকাবেলায় মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা মঙ্গলবার ‘বায়ু দূষণ প্রশমন পরিকল্পনা ২০২৫’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। পরিকল্পনার অধীনে দিল্লীর বাতাস পরিষ্কার করার জন্য সরকার কঠোর এবং বাস্তবসম্মত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা করেছে।
গত কয়েক বছর ধরে দিল্লি দেশের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলির মধ্যে একটি। তাই নতুন সরকারের এই পরিকল্পনাকে একটি সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। পরিকল্পনায় ইলেকট্রিক যানবাহনকে উৎসাহিত করা থেকে শুরু করে সবুজ আবরণ বৃদ্ধি এবং নির্মাণ কাজের তদারকি পর্যন্ত ব্যাপক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইলেকট্রিক যানবাহনে পরিবর্তন হবে রাজধানীর গতি
মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, দিল্লির রাস্তায় ধোঁয়ার কালো মেঘ রোধ করার জন্য ২৩০০ ইলেকট্রিক অটো মেট্রো স্টেশনে মোতায়েন করা হবে। এই পদক্ষেপ জনসাধারণের পরিবহনে সবুজ শক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করবে এবং পেট্রোল-ডিজেল যানবাহন নির্ভরতাকে কমিয়ে আনবে। তিনি বলেছেন, আমাদের সরকারের লক্ষ্য হল দিল্লির রাস্তায় যত বেশি সম্ভব CNG এবং ইলেকট্রিক যানবাহন চলাচল করবে। এতে দূষণ কমবে, এবং দিল্লিবাসীও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবে।
১৩ টি হটস্পটে মিস্ট স্প্রেয়ার লাগানো হবে
রাজধানীর যেসব এলাকায় বায়ুর মান খুব খারাপ পাওয়া যায়, সেগুলিকে ‘দূষণ হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমন ১৩ টি সংবেদনশীল এলাকায় ‘মিস্ট স্প্রেয়ার’ স্থাপন করা হবে, যা বাতাসে উড়ন্ত ধুলিকণা নিচে নামিয়ে আনবে এবং বায়ুর মান উন্নত করবে। পাশাপাশি সব PUCC (Pollution Under Control Certificate) কেন্দ্রের ছয় মাস অন্তর পরীক্ষা করা হবে যাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং কঠোরতা বজায় থাকে।
মুখ্যমন্ত্রী গাছ লাগানোর গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে বলেছেন, এই বছর সরকারের লক্ষ্য দিল্লিতে ৭০ লক্ষ গাছ রোপণ করা। এর অধীনে ‘একটি গাছ মায়ের নামে’ নামক একটি আবেগপূর্ণ এবং পরিবেশগত অভিযানও শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী গুপ্তা জানিয়েছেন, প্রতিটি গাছ শুধু অক্সিজেন দেয় না, বরং আমাদের পৃথিবীর প্রতিটি নিঃশ্বাস রক্ষার মাধ্যম। এই অভিযান প্রতিটি নাগরিককে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা এবং পরিবেশের প্রতি দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেবে।
কঠোরতার সাথে আসবে ‘স্মার্ট ট্র্যাফিক সিস্টেম’
দূষণে যানজট এবং ধীরগতি যানবাহনেরও বড় অবদান রয়েছে। এটিকে মাথায় রেখে সরকার দিল্লিতে ‘স্মার্ট ইন্টেলিজেন্ট ট্র্যাফিক সিস্টেম’ চালু করার ঘোষণা দিয়েছে, যার ফলে ট্র্যাফিকের পর্যবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা ডিজিটালভাবে হবে। এর ফলে ট্র্যাফিকের প্রবাহ উন্নত হবে এবং যানবাহনের জ্বালানি অপচয়ও কমবে।
রেখা গুপ্তা সরকার দূষণ ছড়ানো যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে যে ১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে কেবলমাত্র BS-6, CNG এবং ইলেকট্রিক যানবাহনই দিল্লিতে প্রবেশ করতে পারবে। পুরানো এবং অধিক ধোঁয়া ছাড়া যানবাহনকে দিল্লিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। এছাড়াও যাদের নির্মাণ ক্ষেত্র ৫০০ বর্গমিটারের বেশি, তাদের দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটি (DPCC)-এর পোর্টালে নিবন্ধন করতে হবে। এই পদক্ষেপ নির্মাণ কাজ থেকে উড়ন্ত ধুলো এবং দূষণ রোধ করার জন্য গৃহীত হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই পরিকল্পনাটি এমন সময় চালু করা হয়েছে যখন রেখা গুপ্তা সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। এই উদ্যোগ সরকারের নীতি এবং উদ্দেশ্য উভয়েরই প্রতীক হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে যে তারা রাজধানীর দূষণের সাথে লড়াই করার জন্য গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে।
