রাজ্য সরকারের উদ্যোগেই আগুনে ঘি! জনকল্যাণ নাকি ভোটব্যাঙ্ক?
দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির থেকে রেশন দোকানের মাধ্যমে প্রসাদ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিতেই শুরু হয়েছে প্রবল রাজনৈতিক উত্তাপ। রাজ্য সরকারের দাবি—এটি সাধারণ মানুষের জন্য এক ঐতিহাসিক জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ। ধর্মীয় আবেগের প্রতি সম্মান জানিয়েই এই উদ্যোগ। কিন্তু বিরোধীদের চোখে এই সম্পূর্ণ পদক্ষেপ শুধুই ‘ভোট টার্গেটিং’। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিঘায় আগমন এবং তাঁর হাতে প্রথম প্রসাদ বিতরণ অনুষ্ঠান এই বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছে।
গজা-পেড়ার ছলনা নয়, এবার আসল মহাপ্রসাদ’: শুভেন্দুর পাল্টা চ্যালেঞ্জ
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই বিতরণ প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক কৌশল আখ্যা দিয়ে পাল্টা চাল দিলেন। তিনি ঘোষণা করেছেন—‘‘দিঘার রেশন প্রসাদের বদলে এবার পুরী থেকে আসছে ‘আসল মহাপ্রসাদ’।’’ শুভেন্দুর দাবি অনুযায়ী, তমলুকের গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দির থেকেই বিতরণ হবে এই প্রসাদ। তাঁর ভাষায়, ‘‘মানুষকে ভগবানের নামে ঠকানো হচ্ছে। তাই আমরা পুরীর মহাপ্রসাদই আনছি। গজা-পেড়ার ছলনায় মানুষ আর ভুলবে না।’’
ভোটের আগে প্রসাদ বিতরণ: উদ্দেশ্য নিয়ে তীব্র প্রশ্ন বিরোধী শিবিরে
শুভেন্দু স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন—‘‘তৃণমূল ভোটের আগে ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে মানুষের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে।’’ বিজেপি নেতৃত্বের মতে, রেশন দোকানের মাধ্যমে প্রসাদ বিলি করে সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়াতেই এই পরিকল্পনা। তবে তৃণমূলের পাল্টা যুক্তি—দিঘার ইতিহাসে প্রথম রথ উপলক্ষে সরকারের সামাজিক উদ্যোগ।
কুণালের তীব্র কটাক্ষ: ‘শুভেন্দু এখন ভগবানের বিরুদ্ধেও!’
এই প্রসাদ বিতরণ বিতর্কে স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও সরব হয়েছেন। কুণালের মন্তব্য—‘‘বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এখন শুধু আমাদের নয়, ভগবানের বিরুদ্ধেও লড়ছেন! পুরীতে জগন্নাথ দেব আছেন বলেই কি দিঘায় জগন্নাথ দেব থাকতে পারবেন না? তাঁর এই আচরণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, দিশাহীন রাজনীতির শিকার হয়েছেন উনি।’’
দিঘায় উৎসবের আমেজ! বাড়তি নিরাপত্তায় মুখ্যমন্ত্রীর সফর
ইতিমধ্যেই দিঘার মন্দির চত্বরে শুরু হয়েছে উৎসবের আবহ। রথযাত্রার আগে থেকেই সেখানে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। সৈকত শহর দিঘা এখন ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার দুই স্রোতে ভাসছে।
শুভেন্দুর পাল্টা শক্তি প্রদর্শনের প্রস্তুতি: কলকাতা-মেচেদায় জনতার ঢল আনবেন!
শুভেন্দু অধিকারীর ঘোষণা—শুক্রবার কলকাতা এবং মেচেদার রথযাত্রায় দিঘার থেকে দ্বিগুণ জনসমাগম হবে। তাঁর কথায়, ‘‘কে মানুষের সত্যিকারের প্রতিনিধি, সেটাই এবার রাস্তায় প্রমাণ হবে।’’ পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে। রথ টানার আগে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি নিয়ে চলছে দুই শিবিরের মধ্যে প্রচ্ছন্ন শক্তি পরীক্ষা।
ধর্মীয় আবেগ নাকি রাজনৈতিক চাল? উত্তরের অপেক্ষায় রাজ্যবাসী
রথযাত্রার দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। দিঘার রথ, কলকাতা-মেচেদার রথ—কোথায় বেশি ভিড় হবে? কার উদ্যোগ মানুষের বেশি গ্রহণযোগ্য হবে? কে ‘ধর্মের রথে’ সওয়ার হয়ে ভোটের পথে এগোবে? শুক্রবারের রথেই মিলবে এই বহুচর্চিত প্রশ্নের উত্তর।