ইসরোর অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী মিশন চন্দ্রযান-৪, ২০২৭-২৮ সালের মধ্যে সম্পন্ন হতে চলেছে। এই মিশনের বিশেষত্ব হল, এর অধীনে চাঁদ থেকে মাটির নমুনা ভারতে আনা হবে, যা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক সাফল্য হবে।
চন্দ্রযান ৪ মিশন: ভারতের মহাকাশ সংস্থা ইসরো এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী চন্দ্র মিশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, চন্দ্রযান-৪, যা একটি নমুনা সংগ্রহ মিশন (স্যাম্পল রিটার্ন মিশন)। এই মিশনের উদ্দেশ্য হল চাঁদের মাটির নমুনা সংগ্রহ করে ভারতে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা। এই মিশন ২০২৭-২৮ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং এটিকে ভারতের মহাকাশ অন্বেষণে একটি বড় ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
চাঁদের নমুনা সংগ্রহ: ভারতের জন্য একটি ঐতিহাসিক সাফল্য
চন্দ্রযান-৪, যাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্যাম্পল রিটার্ন মিশন (sample return mission) নাম দেওয়া হয়েছে, একটি মহাকাশযান চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করবে, সেখান থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করবে এবং সেগুলোকে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনবে। ইসরোর জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং চন্দ্রযান-২ ও ৩-এর মিশন অপারেশন ডিরেক্টর অমিতাভ কুমার মিশনের বিস্তারিত পরিকল্পনা শেয়ার করেছেন।
তিনি বলেছেন, সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ স্বদেশী যান দিয়ে একজন ভারতীয়কে চাঁদে নামানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। চন্দ্রযান-৪ এই দিকে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ডকিং প্রযুক্তি (Docking Technology)তে বড় সাফল্য
ইসরো এই মিশনের প্রস্তুতির জন্য চার মাস ধরে ডকিং এবং আনডকিং প্রযুক্তিতে কাজ করেছে, যা যেকোনো স্যাম্পল রিটার্ন বা মানব মিশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষাটি পৃথিবীর কক্ষপথে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং এখন এটি চন্দ্র কক্ষপথে পরীক্ষা করা হবে। এই প্রযুক্তি সফল হলে, মহাকাশযান চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে কক্ষপথে ঘুরে বেড়ানো মডিউলের সাথে যুক্ত হবে এবং তারপর উভয়ই একসাথে পৃথিবীর দিকে ফিরে আসবে। ভারতের জন্য এটি একটি অভূতপূর্ব অপারেশন হবে।
মিশনের বাজেট এবং সময়সীমা
চন্দ্রযান-৪ মিশনের জন্য ১,২০০ কোটি টাকা (প্রায় ১৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। সকল প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত মান এবং পরীক্ষা সফলভাবে পেরোনোর পর ২০২৭ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে এটি উৎক্ষেপণ করা হবে। ভারতের পূর্ববর্তী চন্দ্র মিশন, বিশেষ করে চন্দ্রযান-৩, চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের দিকে পুরো বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
ভারত এই অঞ্চলে সবচেয়ে কাছে পৌঁছানো প্রথম দেশ হয়েছে। এখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে যে পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০-১৫ সেন্টিমিটার নিচে তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়, যা সেখানে বরফ বা কোনও ঠান্ডা গঠনের উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।
কী চাঁদে কখনো জীবন ছিল?
বিজ্ঞানীদের ধারণা, চাঁদে একসময় জীবন থাকতে পারে। সেখানকার মাটি এবং পৃষ্ঠের অধ্যয়ন থেকে জানা যাবে কী ঘটেছিল যার ফলে জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে পৃথিবীতেও কি এমন কোন ঘটনা ঘটতে পারে? এছাড়াও গবেষণা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে চাঁদ ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, যার ফলে সমুদ্রে জোয়ার-ভাটা এবং আবহাওয়া চক্রে পরিবর্তন আসতে পারে। এই পরিবর্তন মানব জীবনের অস্তিত্বের জন্য গুরুতর হুমকি হতে পারে।
কেন চন্দ্রযান-৪ মিশন গুরুত্বপূর্ণ?
চন্দ্রযান-৪ এর মতো মিশন কেবল দেশের মর্যাদার প্রতীক নয়, বরং বিজ্ঞান, বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা এবং মহাকাশ নীতির দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরণের মিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য কেবলমাত্র মহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং বিকাশ বুঝতে সাহায্য করে না, বরং পৃথিবীর পরিবেশ এবং আবহাওয়াবিদ্যায়ও ক্রান্তিকারী পরিবর্তন আনতে পারে।
“চন্দ্রযান কেবল চাঁদে পৌঁছানোর মিশন নয়, এটি মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা,” অমিতাভ কুমার বলেছেন।