বিশ্ব ব্যাংকের ২০ বিলিয়ন ডলার সাহায্য: ভারতের তীব্র প্রতিবাদ

বিশ্ব ব্যাংকের ২০ বিলিয়ন ডলার সাহায্য: ভারতের তীব্র প্রতিবাদ
সর্বশেষ আপডেট: 23-05-2025

বিশ্ব ব্যাংক পাকিস্তানকে ২০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল অর্থনৈতিক প্যাকেজ দেওয়ার কথা বলছে। ভারত এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং বলেছে যে পাকিস্তান এই অর্থের অপব্যবহার করতে পারে। ভারত FATF-এর সাথেও কথা বলবে।

পাকিস্তান: অর্থনৈতিক সংকট থেকে পাকিস্তানকে উদ্ধার করার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) সাহায্য করেছে, এবার বিশ্ব ব্যাংক (World Bank)ও পাকিস্তানকে একটি বিশাল আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারত সরকার এই প্রস্তাবে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে পাকিস্তান এই অর্থের অপব্যবহার করতে পারে। আসুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক কি ঘটেছে, ভারত সরকারের আপত্তিগুলি এবং পাকিস্তানকে দেওয়া এই অর্থনৈতিক সাহায্যের সম্ভাব্য রূপরেখা।

পাকিস্তান ২০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল সাহায্য প্যাকেজ পেতে পারে

বিশ্ব ব্যাংক জুন ২০২৫ সালে পাকিস্তানের জন্য ২০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সাহায্য অনুমোদন করতে পারে। এই অর্থ IMF কর্তৃক পাকিস্তানকে দেওয়া সাহায্যের প্রায় তিনগুণ বেশি। এর আগে IMF পাকিস্তানকে ৭ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য প্যাকেজের অধীনে সাহায্য করেছে, যার মধ্যে ২.১ বিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যেই বিতরণ করা হয়েছে। ৯ মে ২০২৪ সালে IMF পাকিস্তানকে নতুন ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণও অনুমোদন করেছে, যা পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থা উন্নত করার জন্য ছিল।

ভারত সরকার এই বিশাল প্যাকেজ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সাথে আলোচনা করবে এবং একই সাথে FATF (Financial Action Task Force)-এর সাথেও পাকিস্তানকে ধূসর তালিকায় রাখার দাবি জানাবে। ভারতের ধারণা, পাকিস্তান এই অর্থের সঠিক ব্যবহার করবে না বরং আতঙ্কবাদ এবং প্রতিরক্ষা অবকাঠামো বৃদ্ধিতে ব্যয় করবে।

ভারত সরকারের তীব্র প্রতিবাদ

ভারত সরকারের বক্তব্য, পাকিস্তান আতঙ্কবাদকে উস্কে দেওয়ার এবং সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করার জন্য বিদেশী সাহায্যের অপব্যবহার করে আসছে। ভারতের উদ্বেগ, বিশ্ব ব্যাংক থেকে পাওয়া এই বিশাল প্যাকেজও একইভাবে ব্যবহার করা হতে পারে, যার ফলে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিপন্ন হবে।

ভারতের পক্ষ থেকে এটাও বলা হয়েছে যে IMF-এর আগের তথ্য থেকে জানা যায়, পাকিস্তানকে দেওয়া অর্থনৈতিক সাহায্যের একটি বড় অংশ অস্ত্র এবং সামরিক ব্যয়ে ব্যয় হয়েছে, সাধারণ জনগণের উন্নয়ন বা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় নয়। এই কারণেই ভারত IMF-এর প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়ার সাথেও এই বিষয়টি তুলে ধরেছিল।

IMF থেকে পাকিস্তানকে দেওয়া সাহায্য এবং শর্তাবলী

IMF ৭ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজের অধীনে পাকিস্তানকে সাহায্য দিয়েছে, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত ২.১ বিলিয়ন ডলার বিতরণ করা হয়েছে। ৯ মে পাকিস্তানকে ১ বিলিয়ন ডলারের নতুন ঋণও পাওয়া গেছে, যা এক্সপ্যান্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (EFF)-এর অংশ। IMF জানিয়েছে, পাকিস্তান অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য সব নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করেছে, যার ফলে এই সাহায্য পাওয়া গেছে।

IMF-এর বক্তব্য, এই অর্থ সরাসরি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেওয়া হয়, সরকারের ব্যয়ের জন্য নয়। তবে, সরকার প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ নিতে পারে। IMF পাকিস্তানের জন্য ৫০টি শর্ত দিয়েছে, যার মধ্যে ১১টি সম্প্রতি যোগ করা হয়েছে, যাতে এই প্যাকেজের সঠিক ব্যবহার হয়। একই সাথে IMF ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনাও এই কর্মসূচির জন্য ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

পাকিস্তানের অবস্থা: অর্থনৈতিক সংকট এবং বর্ধমান চ্যালেঞ্জ

পাকিস্তান বর্তমানে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিদেশী বিনিয়োগ কমছে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে এবং ঋণ পরিশোধের জন্য ক্রমাগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই অবস্থায় IMF এবং বিশ্ব ব্যাংকের মতো বড় সংস্থা থেকে আর্থিক সাহায্য পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

কিন্তু ভারত এবং আরও অনেক দেশ এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে পাকিস্তান অর্থনৈতিক সাহায্যের ব্যবহার আতঙ্কবাদকে উস্কে দেওয়া বা সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য করতে পারে, নিজের অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য নয়।

বিশ্ব ব্যাংকের ভূমিকা এবং ভারতের পদক্ষেপ

বিশ্ব ব্যাংক জুন ২০২৫ সালে পাকিস্তানের জন্য ২০ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ অনুমোদন করতে পারে। ভারত সরকার এই প্রস্তাবে বিশ্ব ব্যাংকের সাথে আলোচনা শুরু করার পরিকল্পনা করেছে যাতে নিশ্চিত করা যায় যে এই সাহায্য আতঙ্কবাদের জন্য ব্যবহার করা হয় না।

এই সাথে ভারত FATF-এর কাছেও পাকিস্তানকে ধূসর তালিকায় রাখার দাবি জানাবে, যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকিস্তানের আর্থিক লেনদেনের উপর কঠোর নজরদারি করা যায়। ভারতের এই কৌশল হলো, পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সাহায্য তখনই দেওয়া হবে যখন তারা আতঙ্কবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

Leave a comment