জাতিসংঘে বিলাওয়ালের মিথ্যা দাবি: সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখে হতবাক

জাতিসংঘে বিলাওয়ালের মিথ্যা দাবি: সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখে হতবাক
সর্বশেষ আপডেট: 04-06-2025

বিলাওয়াল ভুট্টো জাতিসংঘে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভারত মুসলমানদের কলঙ্কিত করে। একজন সাংবাদিক অপারেশন সিন্দুরে মুসলিম অফিসার কর্নেল সোফিয়া কুরেশির ব্রিফিং দেখিয়ে তাঁর দাবি মিথ্যা প্রমাণ করেন।

জাতিসংঘ সংবাদ সম্মেলন: পাকিস্তানের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জরদারি সম্প্রতি নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করেন। অপারেশন সিন্দুরের পর বিশ্বকে পাকিস্তানের পক্ষ সমর্থন করার দায়িত্ব ছিল তাঁর। এ সময় তিনি দাবি করেন, ভারতীয় মুসলমানরা বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এবং তাদের নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করার জন্য সন্ত্রাসবাদকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সাংবাদিকের তীক্ষ্ণ প্রশ্ন: “আপনার দাবি কোথায় ফিট করে?”

বিলাওয়াল যখন বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে ভারত মুসলমানদের কলঙ্কিত করার জন্য সন্ত্রাসবাদের শব্দ ব্যবহার করে”, ঠিক তখনই একজন ভারতীয় সাংবাদিক দাঁড়িয়ে বলেন, “স্যার, আমি অপারেশন সিন্দুরের মিডিয়া ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে একজন মুসলিম সামরিক কর্মকর্তা সকল তথ্য স্পষ্টভাবে দিয়েছিলেন। যদি ভারতে মুসলমানদের কলঙ্কিত করা হয়, তাহলে ওই অফিসার কিভাবে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন?”

এখানে যে অফিসারের উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি হলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। ৭ মে অপারেশন সিন্দুরের বিস্তারিত মিডিয়া ব্রিফিং তিনিই দিয়েছিলেন। তাঁর সাথে উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহও ছিলেন। সাংবাদিক প্রশ্ন করে বলেন, “আমি নিজে দেখেছি একজন মুসলিম নারী অফিসার অপারেশন সিন্দুরের ব্রিফিংয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন। যদি ভারতে মুসলমানদের নির্যাতন করা হয়, তাহলে ওই অফিসার এই মঞ্চে কিভাবে আসতে পারেন?”

বিলাওয়াল ভুট্টোর বক্তব্য

সাংবাদিকের প্রশ্ন শুনে বিলাওয়াল ভুট্টোর মুখ লাল হয়ে যায় এবং তিনি চুপ হয়ে যান। তিনি বুঝতে পারেন যে তাঁর বক্তব্য বাতাসে উড়ে গেছে এবং কোনো বাস্তব প্রমাণ নেই। তিনি দ্রুত বলেন, “আপনি একেবারেই ঠিক বলছেন। সোফিয়া কুরেশি সত্যিই সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।” এর পর তিনি আবার নিজের দাবি যুক্তিযুক্ত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু সাংবাদিক তাঁকে মাঝখানেই থামিয়ে দিয়ে বলেন, “আমি ওই ব্রিফিং দেখেছি এবং মুসলিম অফিসারকে সংবাদ সম্মেলন করতে দেখেছি। কিছু কিছু নেটওয়ার্ক প্রপাগান্ডা করুক না কেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে মুসলিম অফিসারদের ভূমিকা স্পষ্ট।”

বিলাওয়াল পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারেন, কিন্তু তিনি দ্রুত পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, “আমার বক্তব্য হলো, বৃহৎ রাজনৈতিক পরিবেশে সন্ত্রাসবাদের শব্দ মুসলমানদের বিরুদ্ধে অনুভূতি উস্কে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। যদিও অপারেশন সিন্দুরের ব্রিফিংয়ে মুসলিম অফিসার উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু আমি এই পুরো ঘটনাকে ভারতীয় সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশের ব্যাপক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি।”

কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও অপারেশন সিন্দুরের ভূমিকা

সোফিয়া কুরেশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সম্মানিত মুসলিম নারী অফিসার। তাঁর পরিবার মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলায়, এবং তিনি ডিফেন্স সার্ভিসেস কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। একজন নারী অফিসার হিসেবে, অপারেশন সিন্দুরের মতো বড় সামরিক অভিযানের মিডিয়া ব্রিফিংয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, যা নিজেই একটি বড় সাফল্য।

অপারেশন সিন্দুর ৭ মে থেকে ১০ মে চলে। এটি ভারতের বিমানবাহিনী ও স্থলবাহিনীর যৌথ অভিযান ছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পাহলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলার ‘প্রতিশোধ’, যেখানে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। অপারেশন সিন্দুরে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (পাক)-এ অবস্থিত সন্ত্রাসবাদী শিবিরগুলিকে লক্ষ্য করা হয়েছিল। অভিযান চলাকালীন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি সংবাদকর্মীদের সঠিক তথ্য দিয়েছিলেন এবং সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামোর অবস্থান, হামলার কৌশল, প্রযুক্তিগত বিবরণ এবং প্রতিরোধের প্রচেষ্টা সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেছিলেন।

পত্রিকার ভূমিকা ও সত্যের মুখোমুখি

এই ঘটনা পত্রিকার বাধ্যবাধকতা ও শক্তি উভয়টিকেই উন্মোচন করে। সাংবাদিক বিলাওয়াল ভুট্টোর দাবি মিথ্যা প্রমাণ করেছেন, কারণ তাঁর কাছে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও ভিডিও ফুটেজের মতো প্রমাণ ছিল। এটি প্রমাণ করে যে তথ্যভিত্তিক সাংবাদিকতায় কেবল অভিযোগের উপর নির্ভর করা যায় না, বরং তীব্র জবাব দেওয়ার জন্য সঠিক তথ্য প্রয়োজন।

এটি কি শুধুমাত্র একটি সংবাদ সম্মেলনের ছোটখাটো ঘটনা ছিল, নাকি বৃহৎ রাজনৈতিক বার্তার অংশ ছিল? বিলাওয়াল ভুট্টোর উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের অবস্থা এমনভাবে দেখানো যাতে পাকিস্তান রাজনৈতিক লাভ পায়। কিন্তু যখন সাংবাদিক সত্য উন্মোচন করেন, তখন বিলাওয়ালের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়।

ভারতে মুসলিম কর্মকর্তাদের অবস্থা ও চ্যালেঞ্জ

ভারতীয় সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ সেবা দেন। মুসলমান অফিসাররা দেশের প্রতিরক্ষা কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কেউ বাঙালি হোক বা কাশ্মীরী, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া যোগ্যতাভিত্তিক। কর্নেল সোফিয়া কুরেশি, উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ এবং আরও অনেক মুসলিম অফিসার দেশের জন্য নিজেদের জীবনের আহুতি দিয়েছেন।

ভারতীয় সংবিধান সকল নাগরিককে সমান অধিকার নিশ্চিত করে। মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান—কেউ সেনাবাহিনীতে সেবা করার উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। যদিও ভারতের মতো বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশেও কখনও কখনও ধর্মীয় উত্তেজনার সমস্যা হয়, কিন্তু সেনাবাহিনী এই বিভাজনের উপরে থাকে। সৈনিকদের মধ্যে জাতি, ধর্ম বা অঞ্চলের উপরে উঠে নিষ্ঠা থাকে।

Leave a comment