ছত্তিশগড়ের বিজাপুরে সংঘটিত প্রেশার আইইডি বিস্ফোরণে শহীদ এএসপি আকাশ দুবে-র মামলার তদন্ত এখন বিশেষ তদন্ত সংস্থা (এসআইএ)-কে অর্পণ করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশে এই মামলাটি এসআইএ-র কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে যাতে আক্রমণের গভীরে গিয়ে তদন্ত করা যায় এবং আক্রমণকারী নক্সালদের নেটওয়ার্কের পর্দাফাঁস করা যায়।
এসআইএ এই কাজের জন্য একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন একজন এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা, এবং আরও রয়েছেন এএসপি, টিআই, এসআই এবং আইটি বিশেষজ্ঞ। এই দল কেবল ঘটনাস্থলের ফরেনসিক তদন্তই করবে না, বরং সন্দেহভাজন এলাকায় নক্সাল নেটওয়ার্ক, স্লিপার সেল, স্থানীয় সহায়তা এবং আইইডি তৈরির পদ্ধতিগুলিরও তদন্ত করবে।
বিজাপুর বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছিলেন আকাশ
৩ দিন আগে বিজাপুর জেলার গঙ্গালুর থানা এলাকায় নক্সালদের স্থাপন করা প্রেশার আইইডির বিস্ফোরণে শহীদ হন এএসপি আকাশ দুবে। এই আক্রমণটি তখন ঘটেছিল যখন তিনি এলাকায় অনুসন্ধান অভিযান শেষ করে ফিরছিলেন। বিস্ফোরণটি এতই শক্তিশালী ছিল যে আকাশ ঘটনাস্থলেই মারা যান, এবং আরও দুজন জওয়ান আহত হন। আকাশ দুবে ছত্তিশগড় পুলিশের উঠতি এবং নির্ভীক কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন ছিলেন। তার শহীদ হওয়া কেবলমাত্র বিভাগকে নয়, সমগ্র রাজ্যকেই বিস্মিত করেছে।
এসআইএ-র দল ঘটনার পুনর্গঠন করবে
এসআইএ-র দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিস্ফোরণের ধরণ, মাটির গভীরতা, বিস্ফোরণ ব্যবস্থা এবং সময় নির্ধারণ পুনর্গঠন করার প্রস্তুতি নিয়েছে। এতে জানা যাবে প্রেশার আইইডি কত দিন আগে স্থাপন করা হয়েছিল এবং কি স্থানীয় কোনো ব্যক্তির সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। একজন জ্যেষ্ঠ এসআইএ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমাদের দল এখন সেসব মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান, ওয়াকি-টকি ফ্রিকোয়েন্সি এবং আদিবাসীদের যোগাযোগের তথ্য খুঁজে বের করবে যার মাধ্যমে নক্সালরা এই অপারেশনটি চালিয়েছিল। এটি কেবলমাত্র একটি আইইডি বিস্ফোরণ নয়, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত কৌশল।
ডিজিটাল প্রমাণ এবং ওয়্যারলেস কার্যকলাপেরও তদন্ত হবে
বিস্ফোরণের আগে এবং পরে ডিজিটাল চলাচল, সন্দেহভাজন কল, ওয়্যারলেস রেডিও ইন্টারসেপশন ইত্যাদির তদন্তের জন্য এনটিআরও এবং আইবি থেকেও প্রযুক্তিগত সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে এটি খুঁজে বের করা হচ্ছে যে, আক্রমণের তথ্য কি পুলিশের কোনো গোপন সংবাদদাতার কাছ থেকে আগে লিঁক হয়েছিল কিনা। এসআইএ এও সন্দেহ প্রকাশ করেছে যে, এই আক্রমণে নক্সালরা উচ্চ সংবেদনশীল প্রেশার সেন্সর ব্যবহার করেছে, যা এখন পর্যন্ত ব্যবহৃত প্রযুক্তি থেকে অনেক বেশি সংবেদনশীল। এই থেকে একটা কথা স্পষ্ট যে, নক্সালরা এখন পুরানো পদ্ধতি থেকে সরে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে নিজেদের আপগ্রেড করছে।
সরকার এবং পুলিশ প্রশাসন গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখছে
মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বেশ্বর ভাগত এই আক্রমণকে 'ছত্তিশগড়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার উপর সরাসরি আক্রমণ' বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, আকাশের মতো বীরদের শহীদ হওয়া ব্যর্থ হবে না। দোষীদের খুঁজে বের করে ধ্বংস করা হবে। রাজ্য সরকার এসআইএ-কে প্রয়োজনীয় সমস্ত সংস্থান সরবরাহ করছে। ডিজিপি আরকে মিশ্রাও সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আকাশ দুবে কেবলমাত্র একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন না, বরং রাজ্যের আশা ছিলেন। যে ই এই আক্রমণে জড়িত থাকুক না কেন, চাই সে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকুক নাকি শহরে, আমরা তাকে খুঁজে বের করব।
আকাশ দুবে-র বীরত্ব নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ অনেক অনুভূতিপূর্ণ পোস্ট করেছেন। অনেক যুবক লিখেছেন, দেশকে আকাশের মতো সত্যিকারের সৈনিক দরকার ছিল... কিন্তু কাপুরুষ আক্রমণকারীরা তাকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে।