বিহারে রাজদ-এর নতুন রাজ্য সভাপতি মঙ্গণী লাল মণ্ডল

বিহারে রাজদ-এর নতুন রাজ্য সভাপতি মঙ্গণী লাল মণ্ডল
সর্বশেষ আপডেট: 15-06-2025

গত ১৪ জুন, শনিবার বিহারে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD)-এর রাজ্য সভাপতি পদে মনোনয়ন দাখিল করলেন মঙ্গণী লাল মণ্ডল। এতে দলের অভ্যন্তরে নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রক্রিয়া নতুন মোড় নিল।

মঙ্গণী লাল মণ্ডল: বিহারের রাজনীতিতে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় এলো যখন রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD) তাদের নতুন রাজ্য সভাপতি হিসেবে জ্যেষ্ঠ নেতা মঙ্গণী লাল মণ্ডলের নামে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে এগিয়ে গেল। শনিবার মঙ্গণী লাল মণ্ডল রাজদ রাজ্য সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মনোনয়ন দাখিল করেন, যা প্রায় নিশ্চিত করে যে তিনিই দলের পরবর্তী রাজ্য সভাপতি হবেন।

মনোনয়ন প্রক্রিয়ার সময় দলের সমস্ত শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে রাজদ সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদব, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ী দেবী, রাজ্যসভা সাংসদ মীসা ভারতী এবং বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব অন্যতম। মঙ্গণী লাল মণ্ডল RJD কার্যালয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা ডাঃ তানভীর হাসানের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। আগামী ১৯ জুন পটনার জ্ঞান ভবনে অনুষ্ঠিত রাজ্য পরিষদের বৈঠকে তাঁর নামের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হবে।

মঙ্গণী লাল মণ্ডল: রাজনৈতিক যাত্রা ও অভিজ্ঞতা

৭৬ বছর বয়সী মঙ্গণী লাল মণ্ডল বিহারের রাজনীতির একজন অভিজ্ঞ ও পরিপক্ক নেতা হিসেবে পরিচিত। তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে।

  • তিনি ১৯৮৬ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বিহার বিধান পরিষদের সদস্য ছিলেন।
  • এই সময়কালে তিনি রাজ্য ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন।
  • ২০০৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তিনি রাজ্যসভা সাংসদ ছিলেন।
  • রাজদ-এ দীর্ঘদিন সক্রিয় থাকার পর তিনি জনতা দল (ইউনাইটেড)-এ যোগদান করেন, কিন্তু জানুয়ারী ২০২৫-এ জেডিইউ-কে বিদায় জানিয়ে তিনি পুনরায় রাজদের সদস্যপদ গ্রহণ করেন।

সামাজিক সমীকরণ ও আরজেডির কৌশল

মঙ্গণী লাল মণ্ডলের দলীয় সভাপতি হওয়া শুধুমাত্র একটি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে একটি বড় রাজনৈতিক দাব। তিনি অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া শ্রেণী (EBC) থেকে আসেন, যারা বিহারের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৬%। এই শ্রেণীকে তাদের সাথে নিয়ে আসার জন্য রাজদ দীর্ঘদিন ধরে কৌশল তৈরি করছিল এবং এখন মণ্ডলের অভিষেকের মাধ্যমে দল আশা করে যে এই শ্রেণীতে তাদের দখল আরও শক্তিশালী হবে।

দলীয় সূত্র অনুযায়ী, জগদানন্দ সিংহের স্থানে মঙ্গণী লাল মণ্ডলকে সভাপতি করা একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ। জগদানন্দ সিংহ, যিনি গত কয়েক বছর ধরে সভাপতি ছিলেন, এখন সাংগঠনিক পরিবর্তনের দিকে পিছিয়ে গেছেন।

তেজস্বী যাদবের ভূমিকা ও নেতৃত্বের ইঙ্গিত

তেজস্বী যাদব, যিনি এখন দলের সর্বসম্মত নেতা হয়ে উঠেছেন, এই সমগ্র ঘটনাক্রমে মাস্টারস্ট্রোকের ভূমিকা পালন করছেন। মঙ্গণী লাল মণ্ডলের সাথে থাকা দেখায় যে তেজস্বী কেবল তরুণদের নয়, বরং অভিজ্ঞ এবং সামাজিক ভারসাম্য রক্ষাকারী নেতাদেরও গুরুত্ব দেন। দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে পটনার রাস্তাঘাট পর্যন্ত আজকের সমস্ত পরিবেশ উৎসবের মতো ছিল। সমর্থকরা ঢোল-নগাড়া ও ফুল-মালা দিয়ে মঙ্গণী লাল মণ্ডলের স্বাগত জানান।

বিহারে এ বছর অক্টোবর-নভেম্বরে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই পরিস্থিতিতে দলের নেতৃত্বে এই পরিবর্তন বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে আরজেডিকে এখন এই নিয়োগ থেকে দ্বিগুণ লাভ হতে পারে:

  • সংগঠনে স্থায়িত্ব ও অভিজ্ঞতার সংযোজন
  • EBC ভোটারদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা

যদিও, বিহারে রাজনৈতিক সমীকরণ ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে দেখার বিষয় হবে যে মঙ্গণী লাল মণ্ডলের নিয়োগ শুধুমাত্র সামাজিক ভারসাম্যের প্রতীক হিসেবেই থাকবে নাকি নির্বাচনে ভোটেও পরিণত হবে।

Leave a comment