বিহারের রেল যাত্রীদের জন্য একটি বড় সুখবর এসেছে। নমো ভারত এক্সপ্রেস (Namo Bharat Express) -এর র্যাক এখন রাজেন্দ্রনগর স্টেশনে পৌঁছে গেছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২৪শে এপ্রিল এই নতুন ট্রেনকে সবুজ পতাকা দেখিয়ে উদ্বোধন করবেন।
নমো ভারত ট্রেন: বিহারের রেল যাত্রায় নতুন গতি আনার জন্য ভারতীয় রেল একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। রাজ্যের লক্ষ লক্ষ যাত্রীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা এবার পূর্ণ হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২৪শে এপ্রিল অত্যাধুনিক নমো ভারত এক্সপ্রেস (যাকে বন্দে মেট্রো নামেও পরিচিত) কে সবুজ পতাকা দেখিয়ে বিহারকে একটি নতুন উপহার দেবেন। এই ট্রেন পটনা থেকে মোকামা, দারভঙ্গা, মধুবনী হয়ে জয়নগর পর্যন্ত যাবে, যার ফলে উত্তর বিহারের যাত্রীরা অনেক সুবিধা পাবেন।
রাজেন্দ্রনগরে পৌঁছেছে ট্রেনের র্যাক
এই উচ্চ প্রযুক্তির ট্রেনের প্রথম ঝলক রবিবার দেখা গেছে যখন এর র্যাক দানাপুর মণ্ডলের রাজেন্দ্রনগর কোচিং কমপ্লেক্স রেলওয়ে ইয়ার্ডে পৌঁছেছে। সাদা-নীল রঙের আকর্ষণীয় দেহযুক্ত এই ট্রেন শুধুমাত্র দেখতে আধুনিক নয়, এতে যাত্রীদের সুবিধার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। রেল কর্মকর্তাদের মতে, এই ট্রেনের পরীক্ষামূলক চালানো শীঘ্রই শুরু হবে। এর প্রযুক্তি বন্দে ভারতের অনুরূপ, কিন্তু এটি মেট্রোর মতো শহুরে এবং উপনগরীয় এলাকার জন্যও উপযুক্ত।
২৪শে এপ্রিল হবে ঐতিহাসিক উদ্বোধন
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২৪শে এপ্রিল মধুবনী জেলার ঝাঁঝারপুরে একটি বিশাল জনসভাকে সম্বোধন করবেন। একই সময় তিনি নমো ভারত এক্সপ্রেসকে সবুজ পতাকা দেখিয়ে এই সেবার উদ্বোধন করবেন। তাঁর এই সফরে আরও অনেক প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধনও প্রস্তাবিত, যার মধ্যে রয়েছে সহর্ষা থেকে মুম্বাইয়ের জন্য অমৃত ভারত ট্রেন এবং সহর্ষা-সুপৌলের মধ্যে একটি নতুন এক্সপ্রেস ট্রেন।
বিহারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অংশকে এখনও পর্যন্ত রেল যোগাযোগের দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকা বলে মনে করা হত। পটনা থেকে দারভঙ্গা, মধুবনী এবং জয়নগরের যাত্রায় যাত্রীদের অনেক অসুবিধা পোহাতে হত। ট্রেনের অভাব, ভিড় এবং সময়ের অপচয় ছিল সাধারণ সমস্যা। নমো ভারত এক্সপ্রেস চালু হওয়ার ফলে এই সমস্যার সমাধান হবে। এই ট্রেন শুধুমাত্র দ্রুত গতিতে চলবে না, এতে আধুনিক আসন, ওয়াই-ফাই, স্বয়ংক্রিয় দরজা, সিসিটিভি সুরক্ষা এবং ইনফোটেনমেন্টের মতো সুবিধাও থাকবে।
রেলের বড় প্রস্তুতি
এই মেগাপ্রজেক্টের সফল পরিচালনার জন্য পূর্ব মধ্য রেল বিশেষ প্রশিক্ষণের সাথে লোকো পাইলট এবং প্রযুক্তিবিদদের দল প্রস্তুত করেছে। ট্রায়ালের আগে সকল সুরক্ষা মানদণ্ড পরীক্ষা করা হবে। রেল কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে উদ্বোধনের প্রস্তুতি তীব্র গতিতে চলছে। রেলের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই ট্রেন পটনা থেকে জয়নগর পর্যন্ত প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘন্টায় যাত্রা সম্পন্ন করবে, যা অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী ট্রেনের তুলনায় অনেক কম।
এই ট্রেন শুধুমাত্র একটি পরিবহন মাধ্যম নয়, বরং বিহারের উন্নয়নের নতুন গতির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর ফলে শুধু যাত্রীরা সুবিধা পাবেন না, ব্যবসা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও সরাসরি উপকৃত হবেন। দারভঙ্গা এবং মধুবনী জেলা, যা মিথিলার সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত, এখন রাজধানী পটনা থেকে আরও সহজেই যুক্ত হবে। জয়নগরের মতো সীমান্তবর্তী এলাকাও মূলধারায় আসবে, যার ফলে নেপাল সীমান্ত পর্যন্ত যাতায়াত সহজ হবে।
বন্দে মেট্রোর ধাঁচে তৈরি নমো ভারত
নমো ভারত এক্সপ্রেস, বন্দে ভারতেরই একটি ধারা, যা মেট্রো এবং ক্ষুদ্র দূরত্বের যাত্রাকে মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশ, গুজরাট এবং হরিয়ানায় এর সফল চালানো হচ্ছে এবং এখন বিহার এর উপহার পেতে যাচ্ছে। এই ট্রেনে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি, এর চালানোর ফলে ডিজেলে নির্ভরতা কমবে, যার ফলে এটি একটি সবুজ উদ্যোগও।
বিহারের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল যে তাদেরও দিল্লি এবং অন্যান্য রাজ্যের মতো দ্রুত, আরামদায়ক এবং নিরাপদ রেল সেবা পাওয়া উচিত। অনেকবার এই দাবি নিয়ে জনপ্রতিনিধি এবং সামাজিক সংগঠন কণ্ঠস্বর উঠিয়েছিল। এবার গিয়ে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে।
