বিহারের সমস্তীপুর জেলা থেকে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই ব্যক্তি এক নারীকে জীবন্তে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে। অভিযুক্তরা প্রথমে ভুক্তভোগীর উপর ক্ষেতে ট্রাক্টর চালিয়েছিল, প্রতিবাদ করার পর তাকে মারধর করে এবং এরপর তাঁর উপর জ্বলন্ত পদার্থ ছুঁড়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এই নৃশংস ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে নারীকে জ্বলন্ত ক্ষেত থেকে চিৎকার করে পালিয়ে যাওয়া দেখা যাচ্ছে। ঘটনার পর সমগ্র এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্ষেতে ঢুকে দুষ্কৃতী, তারপর হামলা
এই ঘটনা সমস্তীপুরের বিদ্যাপতীনগর প্রখণ্ডের একটি গ্রামে ঘটেছে। জানা গেছে, ভুক্তভোগী সীমা দেবী (৪০) তার নিজ গ্রামের দুই ব্যক্তির সাথে ক্ষেতের জমি নিয়ে বিরোধ করছিলেন। অভিযুক্তরা বৃহস্পতিবার সকালে জোর করে ক্ষেতে ট্রাক্টর চালিয়ে চাষ করার চেষ্টা করেছিল। যখন সীমা দেবী এতে প্রতিবাদ করেছিলেন, তখন অভিযুক্তরা তাকে মারধর শুরু করে।
পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, ক্রোধে অন্ধ হয়ে দুষ্কৃতীরা মহিলার উপর কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনার সময় গ্রামবাসীরা চিৎকার করে, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। মহিলাটি গুরুতরভাবে পুড়ে যায়।
ঘটনার ভিডিও ভাইরাল
ঘটনার পরপরই কোনও গ্রামবাসী মোবাইলে ভিডিও করে, যেখানে সীমা দেবী জ্বলন্ত ক্ষেত থেকে চিৎকার করে রাস্তার দিকে ছুটে যাচ্ছেন। এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়, যা প্রশাসন এবং রাজ্য সরকারকেও নাড়া দেয়। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, মহিলাটি সাহায্যের জন্য অনুরোধ করছিলেন, কিন্তু কেউ কাছে আসেনি। শেষ পর্যন্ত স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, কিন্তু তার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।
অভিযুক্ত পলাতক, এফআইআর দায়ের
ঘটনার পর অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। সমস্তীপুর পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা এবং SC/ST অ্যাক্টসহ অনেক ধারায় মামলা দায়ের করেছে। ভুক্তভোগীর পটনা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা চলছে। সমস্তীপুর এসপি মিডিয়াকে জানিয়েছেন: আমরা একটি বিশেষ দল গঠন করেছি, দুই অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। ভুক্তভোগীর সুরক্ষা এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজ্য সরকারের নির্দেশ পাওয়া গেছে।
পরিবারের অভিযোগ- আগেও হুমকি দেওয়া হয়েছিল
সীমা দেবীর পরিবার অভিযোগ করেছে যে, অভিযুক্তরা অনেকদিন ধরে জমি দখলের হুমকি দিয়ে আসছিল। অনেকবার পঞ্চায়েতে অভিযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভুক্তভোগীর স্বামী বলেছেন, আমরা দরিদ্র মানুষ। জমিই জীবিকার ভরসা। এই লোকেরাই আগেও মারধর করেছিল। প্রশাসন যদি সময়মতো ব্যবস্থা নিত, তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না।
রাজনৈতিক মহলে উত্তাল, বিরোধীরা সরকারকে ঘেরাও করেছে
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়েছে। বিরোধীরা এটিকে রাজ্য সরকারের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার ব্যর্থতা বলে দাবি করেছে। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব টুইট করে বলেছেন: বিহারে নারীদের সুরক্ষা বিপন্ন। এটি শুধু হত্যা নয়, মানবতার মৃত্যু। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভুক্তভোগীর চিকিৎসা এবং পরিবারকে সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছেন।