বিহারে ছয়টি বৃহৎ রেল প্রকল্পের প্রস্তাব

বিহারে ছয়টি বৃহৎ রেল প্রকল্পের প্রস্তাব
সর্বশেষ আপডেট: 27-05-2025

বিহার সরকার রেলওয়ে বোর্ডের কাছে ছয়টি বৃহৎ রেল প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এর মধ্যে বৌদ্ধ সার্কিট, উপনগরীয় নেটওয়ার্ক, নতুন সেতু এবং অতিরিক্ত রেল লাইন নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত। এতে বিহারের রেলওয়ে নেটওয়ার্ক উন্নত হবে।

বিহার নিউজ: রেলওয়ে নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করার এবং রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি দেওয়ার জন্য সরকার কেন্দ্রের কাছে ছয়টি বৃহৎ রেল প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। মুখ্য সচিব অমৃতলাল মীণা রেলওয়ে বোর্ডের কাছে এই প্রস্তাব পাঠিয়ে এই প্রকল্পগুলিতে সহানুভূতিপূর্ণভাবে বিবেচনা করার অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেছেন যে রাজ্য সরকার এই সমস্ত প্রকল্পের বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবে। এই প্রস্তাবগুলির উদ্দেশ্য বিহারে যাত্রী সুবিধা উন্নত করা, শহরগুলির উন্নয়ন করা এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ করা।

বিহারে রেল নেটওয়ার্কের গুরুত্ব

মুখ্য সচিব অমৃতলাল মীণা তার পত্রে বিহারের রেল পরিবহনের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে রেলওয়ে কেবল যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের মাধ্যম নয়, বরং এটি রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি বিহারের উচ্চ জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১৩৮৮) উল্লেখ করে বলেছেন যে এখানে রেলওয়ে ট্র্যাকের উপলব্ধতা জাতীয় গড়ের চেয়ে অনেক কম। বিহারে প্রতি লক্ষ জনসংখ্যার জন্য রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৫.৩১ কিলোমিটার, যখন জাতীয় গড় ৯.৮১ কিলোমিটার। অতএব, রাজ্যকে রেলওয়ে ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের প্রয়োজন।

প্রস্তাবিত ছয়টি প্রধান রেল প্রকল্প

বিহার সরকার রেলওয়ে বোর্ডের কাছে ছয়টি প্রধান প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে, যা রাজ্যের বিভিন্ন অংশকে সংযুক্ত করতে এবং পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। আসুন এই প্রস্তাবগুলি এক এক করে দেখে নেওয়া যাক।

১. বৌদ্ধ সার্কিট রেল করিডর: দ্বিগুণীকরণ এবং নতুন ট্রেন পরিষেবা

পাটনা-গয়া-তিলাইয়া-রাজগির-ফতুহা রুটে বৌদ্ধ সার্কিট রেল করিডরকে দ্বিগুণ করার দাবি করা হয়েছে। এই সার্কিটে একটি নতুন সার্কুলার ট্রেন পরিষেবা চালু করা যেতে পারে, যার ফলে বোধগয়া এবং রাজগিরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থানগুলির আরও ভালো সংযোগ স্থাপন হবে। এই পরিষেবা পাটনা, জাহানাবাদ, গয়া, নওয়াদা এবং নালন্দা জেলার বাসিন্দাদের জন্য বেশ উপযোগী হবে। এই প্রকল্পের ফলে বিহারের বৌদ্ধ পর্যটন বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকেও সমর্থন করবে।

২. দক্ষিণ বিহার উপনগরীয় পরিবহন নেটওয়ার্ক: অতিরিক্ত রেল লাইনের প্রয়োজন

দক্ষিণ বিহারের বক্সার, ভোজপুর, রোহতাশ, লখীসরাই, মুঙ্গের, শেখপুরা, ভাগলপুর, জামুই এবং বান্কা জেলাগুলিকে রাজধানী পাটনার সাথে সংযুক্ত করার জন্য একটি শক্তিশালী উপনগরীয় রেল নেটওয়ার্ক তৈরির প্রয়োজন। এই অঞ্চলে মুম্বাইয়ের মতো লোকাল ট্রেন পরিষেবা চালু করার জন্য তৃতীয় ও চতুর্থ রেল লাইন নির্মাণের দাবি করা হয়েছে। এতে যাত্রীরা আরও ভালো সুবিধা পাবে এবং যানজট কমবে।

৩. উত্তর বিহার উপনগরীয় নেটওয়ার্ক: নতুন রেল লাইনের দাবি

উত্তর বিহারের সিওয়ান, সারণ, বৈশালী, মুজফ্ফরপুর, সমস্তীপুর এবং দরভঙ্গা জেলাগুলিকে পাটনার সাথে সংযুক্ত করার জন্য একটি উপনগরীয় রেল নেটওয়ার্ক তৈরির প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে। সিওয়ান-ছাপরা-হাজীপুর-মুজফ্ফরপুর-সমস্তীপুর-দরভঙ্গা খণ্ডে অতিরিক্ত রেল লাইন নির্মাণ প্রয়োজন। একইভাবে, সিওয়ান-ছাপরা-হাজীপুর-বারৌনি-কটিহার খণ্ডে যাত্রী সংখ্যা বেশি থাকার কারণে তৃতীয় ও চতুর্থ রেল লাইনেরও দাবি করা হয়েছে।

৪. পাটনা আঞ্চলিক পরিবহন নেটওয়ার্ক: ফতুহা-বিদুপুরের মধ্যে নতুন রেল সেতু

পাটনা অঞ্চলে ফতুহা এবং বিদুপুরের মধ্যে একটি নতুন রেল সেতু নির্মাণেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সেতুটি ফতুহা স্টেশনের ডাউনসাইডে নির্মিত হতে পারে। এই প্রকল্পের ফলে পাটনা-পাটনা সাহেব-ফতুহা-বিদুপুর-হাজীপুর-সোনপুর-পাটলিপুত্র-পাটনা রুটে আরও ভালো আঞ্চলিক পরিবহন নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। এই প্রকল্পটি মেগা কোচিং টার্মিনাল এবং আধুনিক গুডস শেডের সফল বাস্তবায়নের জন্যও প্রয়োজন। এছাড়াও, পাটনার আশেপাশে স্যাটেলাইট টাউনের উন্নয়নে এই রেল নেটওয়ার্ক সহায়ক হবে।

৫. উচ্চ ঘনত্বের নেটওয়ার্কে অতিরিক্ত রেলওয়ে লাইন

ডিডিইউ-বক্সার-আরা-পাটনা-কিউল খণ্ডে যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে তৃতীয় ও চতুর্থ রেলওয়ে লাইনের অনুমোদন দ্রুত দেওয়ার প্রয়োজন। রাজ্য সরকার এই দিকে ডিপিআর (বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন) তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি, গুলজারবাগ-পাটনা সিটির মতো জনবহুল এলাকায় জমি অধিগ্রহণের জন্যও রাজ্য সরকার সর্বাত্মক সাহায্য করবে।

৬. আরা-ছাপরা-র মধ্যে নতুন রেল সেতু

গঙ্গা নদীর উপর আরা এবং ছাপরার মধ্যে নতুন রেল সেতু নির্মাণের দাবি করা হয়েছে। বিদ্যমান জেপি সেতু, রাজেন্দ্র সেতু এবং মুঙ্গের ঘাট সেতুর পাশাপাশি আরও একটি সেতু নির্মাণের ফলে উত্তর ও দক্ষিণ বিহারের মধ্যে সংযোগ আরও উন্নত হবে। এতে শাহাবাদ এবং সারণের মধ্যে যানবাহনের চলাচলেও উন্নতি হবে এবং যাত্রীরা সুবিধা পাবে।

Leave a comment